সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেব আর ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান একেবারে সমার্থক হয়ে গেল। লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election 2024) আগে তৃণমূলের তারকা সাংসদ দেবের মাধ্যমে মাস্টারস্ট্রোক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। সোমবার আরামবাগের সভা থেকে তিনি ঘোষণা করেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ১২৫০ কোটি টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করবে রাজ্য সরকারই। সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ”দেব যখন আবদার করেছে, তখন রাজ্য সরকারই এই কাজ করে দেবে। কেন্দ্রের উপর আর ভরসা করতে হবে না। তবে দেবই চ্যাম্পিয়ন অফ ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান।” লোকসভা ভোটের পর প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আগামী বর্ষার মরশুমে আর বানভাসি হতে হবে না ঘাটালবাসীকে।
রবিবার রাতে সিনেমার এক অনুষ্ঠানে গিয়ে তৃণমূলের তারকা সাংসদ দেব ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান সম্পর্কে আশাপ্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, ”ঘাটালবাসীর ৭০ বছরের স্বপ্ন এবার সত্যি হতে চলেছে রাজ্য সরকার, দিদির হাত ধরে। আশা করি, পরের টার্মে মাস্টার প্ল্যানটা হয়ে যাবে। কেন্দ্র যদি করে তো ভালো, নাহলে দেখা যাক। এটা মানুষের কাজ, করতেই হবে।” এর জন্য তিনি রাজ্য সরকারের উপর ভরসা রেখেছিলেন। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গী হয়ে আরামবাগ যাওয়ার পর সেই মঞ্চ থেকেও দেব বলেন, ”ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে আমি গত ১০ বছর ধরে বলছি। কিন্তু কেন্দ্র তা নিয়ে কিছু করেনি। এখন আমি আমাদের নেত্রী, মমতা ব্যানার্জির কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আমি ঘাটালে থাকি বা না থাকি, মাস্টার প্ল্যানটা যেন হয়, তা দেখবেন।”
[আরও পড়ুন: ১০০ দিনের বকেয়ার দাবি, সন্দেশখালির পথে আটকে পড়ল রাজ্যপালের কনভয়]
এর পরই বক্তব্য রাখতে উঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ”দেব ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য বারবার বলছে। রাজ্য সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করল। কাজ হয়ে যাবে। ১৭ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবে। কেন্দ্র ক্লিয়ারেন্স দিচ্ছে না বলে আটকে আছে। আমি বলেছি, এই টাকা দফায় দফায় পাওয়া যাবে। ৩, ৪ বছর লাগবে কাজ শেষ হতে। কিন্তু দেব যখন বলল, তখন দিদি তো ভাইয়ের আবদার ফেরাতে পারে না। তাই কেন্দ্রের উপর ভরসা নয়, আমরাই কাজ করে দিচ্ছি। তবে দেবই চ্যাম্পিয়ন অফ ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান।” এর পর হালকা সুরে দেবকে বলেন, ”তোমার কথা শুনে আমি কিন্তু করে দিলাম। এর জন্য একদিন মিষ্টি খাইয়ো না, এখানে সূর্য মোদকের খুব বিখ্যাত। অনেকেই এখান থেকে নিয়ে যায়। তবে আমি তো মিষ্টি খাই না।”
[আরও পড়ুন: চলতি মাসে বঙ্গ সফরে মায়াপুরে যাবেন শাহ, এবার কৃষ্ণ আবেগে শান?]
ঘাটাল এলাকায় মূলত শীলাবতী, কংসাবতী এবং দ্বারকেশ্বর নদের শাখা নদী ঝুমির লীলাভূমি হিসাবে পরিচিত। তখনকার আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলস্বরূপ স্থানীয় ভূস্বামীরা এই নদীগুলির বন্যা ঠেকাতে সার্কিট বাঁধ দিয়ে নিজেদের জমিদারিতে নিচু এলাকাগুলিকে বন্যা থেকে বাঁচিয়ে আবাদি জমি বাড়ানোর উদ্যোগ নেন। সেই জমিদারি জমানা আর নেই। কিন্তু জমিদারি বাঁধগুলি আজও রয়ে গিয়েছে। এই জমিদারি বাঁধগুলি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। তার ফলে বাঁধগুলি ভেঙেই মূলত ঘাটাল এলাকায় বন্যা দেখা দেয় ফি বছর। উলটোদিকে জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি নদী বাঁধ উপচে ছড়িয়ে পড়তে না পেরে নদীতেই জমতে থাকে পলি মাটি। ফলে নদীর জল ধারণ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আর ফি বছর বন্যা প্রবণতাও বাড়তে থাকে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় এবার সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চলেছেন ঘাটালবাসী।
দেখুন ভিডিও: