নব্যেন্দু হাজরা: কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে জুনিয়র চিকিৎসকদের বৈঠক নিয়েও দফায় দফায় টানাপোড়েন। ঘণ্টা দুই পেরিয়ে যাওয়ার পরও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবিতেই অনড় আন্দোলনকারীরা। বাড়ির দুয়ারে অপেক্ষারত মুখ্যমন্ত্রী আর বাইরে বৃষ্টিতে ভিজে অনুমোদনের অপেক্ষায় জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদল। দুই ফ্রেমে দুটো ছবিতে জটিলতা একেবারে স্পষ্ট। কিছুক্ষণ পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে বৃষ্টিতে ভেজা জুনিয়র চিকিৎসকদের 'লক্ষ্মী ভাই-বোন' বলে সম্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ''বৃষ্টিতে ভিজো না। আমার সঙ্গে কথা না বলো, ভিতরে এসে এক কাপ চা অন্তত খেয়ে যাও। তোমরা ভিজেছ, আমার কাছে জামাকাপড় আছে, আমি দিয়ে দেব। প্লিজ মানুষের স্বার্থে এসো, কথা বলো।'' এ মমতা মুখ্যমন্ত্রী নন, প্রকৃত অর্থে তিনি হয়ে উঠলেন 'অভিভাবক'।
৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে একই ছবি। আর জি কর ইস্যুতে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার নিয়ে কোনও পক্ষ এক পা এগোলে, দুপা পিছিয়ে যেতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলা নবান্নে ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। একাই বসে জুনিয়র চিকিৎসকদের আসার অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবিতে অনড় থেকে নবান্নে পৌঁছলেও আন্দোলনকারীরা ভিতরে বৈঠকে যোগ দেননি। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব বেরিয়ে দফায় দফায় বোঝানোর পরও জেদ থেকে সরেননি ডাক্তাররা। সেদিনের বৈঠক কার্যত ভেস্তে যায়।
কাট টু শনিবার। সকালে আন্দোলনকারীদের ধরনামঞ্চে স্বয়ং অবতীর্ণ মুখ্যমন্ত্রী। 'দিদি' হয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের বোঝাতে, কাজে ফেরাতে। এর পর জুনিয়র ডাক্তাররা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়ে ইমেল পাঠান নবান্নে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের কালীঘাটে ডেকে পাঠান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্ধে ৬টায় সময় দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে পৌঁছে ফের লাইভ নিয়ে শুরু হয় একপ্রস্ত টানাপোড়েন। বাড়ির দরজায় অপেক্ষামান মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব, ডিজি। আর বাইরে বৃষ্টিতে ভিজছেন আলোচনা করতে যাওয়া জুনিয়র ডাক্তাররা।
একটা সময় স্নায়ুযুদ্ধে ইতি টেনে 'পর্বতই এল মহম্মদের কাছে', থুড়ি, মুখ্যমন্ত্রীই এলেন ডাক্তার 'ভাইবোন'দের কাছে। অনুরোধের সুরেই জানালেন, মানুষের স্বার্থে তাঁরা যেন ভিতরে গিয়ে কথা বলেন। আর 'মাতৃসুলভ' ভঙ্গিতে বললেন, কথা না বলুন, বৃষ্টিতে যেন না ভেজেন। ভিতরে গিয়ে অন্তত এক কাপ চা খান। বোঝালেন, লাইভ স্ট্রিমিং করা কেন সমস্যার। জানালেন, ভিডিওগ্রাফি হবে কালীঘাটের তরফে। সেই ভিডিও পরে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতিক্রমে তা দেওয়া হবে, সেই আশ্বাস দেন। এর পরও অবশ্য বৈঠক শুরু করা যায়নি। কারণ, কোনও শর্ত ছেড়ে বেরিয়ে আলোচনার টেবিলে বসবেন কি না, তা নিয়ে সম্ভবত দ্বিধান্বিত চিকিৎসকরা। ফলে লাইভ স্ট্রিমিংয়েই আটকে বৈঠক জট। অর্থাৎ দ্বিতীয় দিনও বৈঠক ভেস্তে গেল।