সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চলে যেতে যেতেও ফিরে ফিরে আসা, বারবার। কিন্তু শেষপর্যন্ত কোনও ফেরাই স্থায়ী হল না। মৃত্যুকে বারবার ফিরিয়ে দিয়েও বরণ করে নিতে হল। ২৪ বছর বয়সী টেলি অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার (Aindrila Sharma) মৃত্যুকে খানিক এভাবেই দেখা যায়। ক্যানসার, টিউমার, ব্রেন স্ট্রোক – একের পর এক কঠিন থেকে কঠিনতর অসুখের সঙ্গে লড়াইয়ের পর জীবনের মঞ্চ আলো করে ফিরে এসেছিলেন ঐন্দ্রিলা। কিন্তু রবিবার মৃত্যুর ছোবল তাঁর প্রাণবায়ু নিভিয়ে দিল। তবে সব মৃত্যুরই পূর্ববর্তী কাহিনি থাকে। ঐন্দ্রিলা নিজেই নিজের কাহিনি রচনা করছিলেন। বারবার কঠিন অসুখকে হার মানিয়ে ‘অসাধারণ প্রত্যাবর্তনে’র জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে ২০২২ সালে টেলিসম্মান পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল ঐন্দ্রিলা শর্মাকে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) নিজের হাতে তা তুলে দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি মনে করে আজকের দিনে শোকাহত মুখ্যমন্ত্রী। শোকবার্তায় (Condolence) সেই আবেগ লুকিয়ে রাখলেন না তিনি।
রবিবার দুপুর প্রায় ১টা।দীর্ঘদিন ধরে টানা জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া টেলি অভিনেত্রী, ২৪ বছরের ঐন্দ্রিলা শর্মার মৃত্যুসংবাদ (Death) ছড়িয়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণ পর নবান্ন থেকে শোকবার্তা দেন তিনি। তাতে লেখেন, ”বিশিষ্ট অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার অকাল-প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ হাওড়ায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রতিশ্রুতিময়ী তরুণী এই অভিনেত্রীর বয়স হয়েছিল মাত্র ২৪ বছর। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য টিভি সিরিয়াল ‘ঝুমুর’, ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’, ‘জীবন জ্যোতি’, ‘জীবন কথা’, ‘জিয়নকাঠি’ ইত্যাদি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে এবছর ‘অসাধারণ প্রত্যাবর্তন’ বিভাগে টেলি সম্মান অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে।”
শোকবার্তায় ঐন্দ্রিলার লড়াই, প্রত্যাবর্তনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। লিখেছেন, ”মারণরোগের বিরুদ্ধে অদম্য মনোবল নিয়ে তিনি যেভাবে লড়াই করেছেন তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁর ট্রাজিক প্রয়াণ অভিনয় জগতের এক বড় ক্ষতি। আমি ঐন্দ্রিলা শর্মার পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।”
[আরও পড়ুন: সৌমিত্র খাঁ’র পর অমরনাথ শাখা, পৃথক রাঢ়বঙ্গের দাবিতে সরব ওন্দার বিজেপি বিধায়ক]
গত ১১ মার্চ টেলিসম্মান অনুষ্ঠানে ঐন্দ্রিলা শর্মার হাতে নিজে পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধিকবার ধারাবাহিকভাবে কেমোথেরাপির (Chaemotherapy) ধকল কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিলেন ২৪ বছরের মেয়েটি। শরীরে ততদিনে বাসা বেঁধেছে অনেক অসুখ। কিন্তু অফুরান প্রাণশক্তিসম্পন্ন অভিনেত্রী সেসব তোয়াক্কা না করে হাসি দিয়েই জিততে চেয়েছিলেন সব। এহেন মানুষের হাসি হঠাৎ মিলিয়ে যাওয়ার শোক সামলে ওঠা কম কথা নয়।
এদিকে, অনেক যুদ্ধের পরও ঐন্দ্রিলার এভাবে চলে যাওয়ায় শোকপ্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি টুইটে শোকবার্তা দিয়েছেন। ঐন্দ্রিলার লড়াকু মানসিকতার উল্লেখ করে পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: সব লড়াই শেষ, না ফেরার দেশে অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা]
জানা গিয়েছে, বিকেল ৪টে নাগাদ হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে অভিনেত্রীর দেহ। সেখান থেকে বেরিয়ে কুঁদঘাটের বাড়িতে যাওয়া হবে। তারপর টেকনিশিয়ান স্টুডিওয় রাখা হবে ঐন্দ্রিলার নিথর দেহ। সহকর্মীরা জানাবেন শেষ শ্রদ্ধা। তারপর কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য।