ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ‘এনআরসি মানছি না, ভাগাভাগি নহি চলেগা’ – বৃহস্পতিবার দুপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্লোগানেই মুখর হয়ে উঠল শ্যামবাজার এলাকা। জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরোধিতাকে ‘অস্তিত্বের লড়াই’ বলে চিহ্নিত করে বড়সড় আন্দোলনের ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, ‘তৈরি থাকুন। যখন ডাকব, সঙ্গে যা থাকবে, সব নিয়ে বেরিয়ে আসবেন।’ আরও বললেন, ‘নিজেদের বাঁচানোর লড়াই নিজেদেরকেই লড়তে হবে। আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আত্মরক্ষা করতে হবে।’
[ আরও পড়ুন: নারদ মামলায় সিবিআই দপ্তরে হাজিরা কাকলি ঘোষদস্তিদারের]
বাংলায় এনআরসি করার চেষ্টা হলে আন্দোলনের মাধ্যমে তার জবাব পাবে বিজেপি। অসমে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ রাখা যায়, কিন্তু বাংলার মুখ বন্ধ রাখা যাবে না। জবাব পাবেই। বৃহস্পতিবার কলকাতায় জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বিরোধী মিছিল থেকে এভাবেই বিজেপিকে উদ্দেশ্য করে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘আরেকবার বঙ্গভঙ্গ হতে দেব না। বাংলা ভাগের চক্রান্ত বরদাস্ত করব না।’
এনআরসি-র বিরোধিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মিছিল নিয়ে দিনের শুরু থেকেই নানা তরজা চলছিল। সিঁথির মোড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী যাত্রাপথে কেন টেন্ডার ডেকে সংস্থা নির্বাচিত করে ব্যারিকেড বসানো হল, তা নিয়ে নানা সমালোচনা শোনা গিয়েছিল। প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে, এনআরসি বিরোধী এই মিছিলে হামলার আশঙ্কা আছে, তাই যথাযথ নিরাপত্তার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত সরকারের ‘ডিরেক্টরেট অফ সিকিওরিটি’র। দুপুর আড়াইটে নাগাদ সিঁথির মোড় থেকে শুরু হওয়া মিছিল একটু এগোতেই বোঝা গেল, ব্যারিকেড তৈরির প্রয়োজনীয়তা কতটা ছিল। ব্যারিকেডের দু পাশে সাধারণ মানুষের উপচে পড়ছে ভিড়। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি আসতে দেখা গেল, সেই ব্যারিকেড ভেঙে মানুষজন পা মেলালেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই।
সাড়ে তিনটে নাগাদ মিছিল শেষ হয় শ্যামবাজার মোড়ে। সেখানেই মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিজেপি বিরোধিতায় সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সাফ কথা, ‘ধর্ম, ভাষার ভিত্তিতে বাংলায় এনআরসি মানব না। আজ যদি বলা হয়, বাংলা থেকে বিহারিরা হঠো, তাহলে কেমন লাগবে? বাংলায় কোনওরকম চক্রান্ত করে, মাথা নত করা যাবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে এগিয়ে যাব, জয়ী হব।’ এরাজ্যে এনআরসি প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ কার্যত চ্যালেঞ্জের সুরে বলেছিলেন যে এখানে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির তালিকা তৈরি হলে, অন্তত ২ কোটি লোক বাদ পড়বেন। এদিন তার উত্তর দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে পালটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন। বললেন, ‘২ কোটি নাম বাদ যাওয়া দূরের কথা। ২টো লোকের গায়ে হাত দিয়ে দেখান।’ বিজেপির উদ্দেশে তাঁর আরও হুঁশিয়ারি, ‘আগুন নিয়ে খেলবেন না। এই যে বাংলাকে এভাবে অপমান করা হচ্ছে, তা আসলে গোটা দেশের অপমান। কারণ, অতীতেও দেশের বিভিন্ন আন্দোলনে পথ দেখিয়েছিল বাংলা। বাংলার সংস্কৃতি মানে গোটা দেশেরই সংস্কৃতি।
[ আরও পড়ুন: থানায় ঢুকে মহিলা পুলিশকর্মীকে বেদম মার, উত্তেজনা হরিদেবপুরে]
এদিনের সভা থেকে ধর্ম নিয়েও বিজেপি বিঁধতে ছাড়লেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহর নাম না করেই তাঁর শ্লেষ, ”আমাদের ধর্ম শিখিও না। তোমাদের থেকে ধর্ম শিখতে হবে না। আমাদের ধর্ম মানবতা। ‘ওম’ শব্দের অর্থ আমরা অনেক ভাল জানি।” এনআরসি নিয়ে গোড়া থেকে বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার শহরে মিছিল করে বুঝিয়ে দিলেন, এই ইস্যুতে তিনি একেবারে চূড়ান্ত লড়াই করতে প্রস্তুত।
The post ‘২ কোটি তো দূর, দু’জনের গায়ে হাত দিয়ে দেখাক’, NRC নিয়ে হুঁশিয়ারি মমতার appeared first on Sangbad Pratidin.