স্টাফ রিপোর্টার: আবারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানবিক মুখ দেখল মহানগর। ক্যানসার আক্রান্ত বিখ্যাত ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য শিল্পী তাপস দাস। তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশেই বর্ষীয়ান শিল্পীকে এসএসকেএম হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে। তাপসবাবু গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই ব্যান্ডে নতুন ঘরানার গানের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে। যে ব্যান্ড সাত থেকে আটের দশকের মধ্যে নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা রাজ্য তথা আপামর বাঙালিকে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। গিটার বাজিয়ে এখনও ক্যাম্পাসে গাওয়া হয় গৌতম-তাপসদের তৈরি করা একাধিক গান। টেলিফোন, শহরের উষ্ণতম দিনে, দরিয়া একের পর এক সব বিখ্যাত গান।
জানা গিয়েছে, তাপস দাস ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত। কিন্তু এই কর্কটরোগের চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক ক্ষমতা তাঁর ছিল না। ফলে ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছিল না। মুখ্যমন্ত্রীর কানে সেই খবর যেতেই তিনি হস্তক্ষেপ করেন। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে তাপস দাসের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করতে বলেন। এরপরেই এসএসকেএম হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাপসবাবুকে ভর্তি করা হয়। ব্যবস্থা করা হয় বিশেষ কেবিনের। নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সর্বোচ্চ পর্যায়ের পরিষেবার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। কৃতজ্ঞ শিল্পীর পরিবারও। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সংগীত মহল। সবাই শিল্পীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।
সঙ্গীত মহল তাঁকে বাপিদা বলেই চেনে। ইতিহাস সৃষ্টি করা বাংলা ব্যান্ড মহীনের ঘোড়াগুলির অন্যতম সদস্য বাপিদা ক্যানসারের থার্ড স্টেজে আক্রান্ত। কেমো চলছে তাঁর। তবে চিকিৎসার খরচ বহন করতে আর পারছে না তাঁর পরিবার। আর তাই সংগীত শিল্পীর পাশে দাঁড়াতে অনুরাগীদের কাছে আবেদন করেছিলেন রূপম ইসলাম, সিধু, গৌরব চট্টোপাধ্যায়, অর্ক মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে সাধারণ মানুষকে পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করেছিলেন তাঁরা।
[আরও পড়ুন: জনসেবাই ধর্ম! সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে ফের নির্বাচনী লড়াইয়ে হিরো আলম]
শিল্পী অর্ক মুখোপাধ্যায় তাঁর সোশ্য়াল মিডিয়ায় পেজে লেখেন, ”যাঁদের গান সুদিন কাছে এসো ভালবাসি একসাথে সবকিছুই, তাঁদেরই বাপিদা আজ অসুস্থ। মহীনের ঘোড়াগুলির এই তাপস দাস, বাপিদাকে তাঁর পরিচয় আমি করিয়ে দেব এত বড় কেউ আমি নই। লাং ক্যানসার থার্ড স্টেজ, খেতে পারছেন না স্বাভাবিক পদ্ধতিতে। বেশ কিছু কেমো নিয়েছেন। এখন রেডিয়েশন নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। খেতে পারছেন না স্বাভাবিকভাবে। ওজন কমে পঁয়ত্রিশ কিলোয় নেমে এসেছে। এই অবস্থাতেও বাপিদা কোনও মতে ফোন হাতে নিয়ে আমার সঙ্গে কথাও বলেছেন। ধন্যবাদ জানাই নীলাঞ্জন ও কৌস্তভকে আমায় জানানোর জন্য। আমরা বন্ধুরা একটি অনলাইন ফান্ড্রেসার অর্গানাইস করবো দ্রুতই এক সপ্তাহের মধ্যে। বাজে ভনীতা করে আর পলিটিকাল/অ্যাপলিটিকাল কুৎসিত ট্রোলবাজি না করে যদি পারেন আমার আপনার সামান্য ছোট ছোট কান্ট্রিবিউশন পাঠাতে শুরু করুন। খরচ অনেক।”
সোশ্য়াল মিডিয়াতে লিখেছেন গায়ক সিধুও। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা ব্যান্ড যারা ভালোবাস, বাংলা ব্যান্ডের গান শুনতে ভালোবাসো তাদের কাছে ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’-র পরিচয় আলাদা করে কিছু বলার নেই। আমাদের যাপনের ওতপ্রোত সঙ্গী মহীনের ঘোড়াগুলি-র অন্যতম পথিকৃৎ তাপসদা বিগত কয়েকমাস যাবৎ দুরারোগ্য ক্যানসারে ভুগছেন। তাঁর চিকিৎসার স্বার্থে প্রয়োজন আর্থিক সাহায্য। সবার কাছে আমাদের বিনম্র অনুরোধ, এই অসময়ে তাপসদা’র পাশে সবাই দাঁড়াই…।” এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপে আপ্লুত বাংলার শিল্পীরা।
১৯৭৫ সালে তৈরি হয়ে বাংলার প্রথম রক ব্যান্ড মহীনের ঘোড়াগুলি। ৪৭ বছর পেরিয়ে গিয়েছে, এখনও এই ব্যান্ডের গানগুলির জনপ্রিয়তা একটুও হারায়নি। সেই ব্য়ান্ডের অন্যতম সদস্য মারণরোগে ভুগছেন।