অভিরূপ দাস: অনুরোধ ছিল ছোট্ট। পুজোর ঢাকের আওয়াজটা যেন শুনতে পাই। সে অনুরোধ সফল করতেই আস্ত একটা অস্ত্রোপচারের আয়োজন অ্যাপোলো হাসপাতালে। ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট (cochlear implant)। কোভিড আবহে যা কিনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল!
ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট অধুনা নিয়মিত অস্ত্রোপচারের তালিকায় নাম লেখালেও কোভিড আবহে তা করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সংক্রমণ ছড়ানোর ভয়ে সারা দেশজুড়েই করোনা (Coronavirus) আবহে যে সমস্ত অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ বন্ধ তার মধ্যেই অন্যতম এই অস্ত্রোপচার। অস্ত্রোপচারে এরোসোল জেনারেশন বা বাতাস বাহিত ভাইরাস প্রবেশ করার সম্ভাবনা সর্বাধিক।
বৈদ্যবাটির সদগোপ পাড়ার বাসিন্দা সুনীলচন্দ্র ঘোষের (৫৭) কানের সমস্যা শুরু ২০১৭ সাল থেকে। ছেলে সূর্যদীপ ঘোষের কথায়, “সেবার শীতে বাবার ঠান্ডা লেগেছিল। তা থেকেই কান ব্যথা। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম সাধারণ সর্দি-কাশি। কিন্তু সংক্রমণ এত মারাত্মক ছিল ক্রমশ বাবার শ্রবণ ক্ষমতা ক্ষীণ হতে শুরু করে।” দেড় বছর আগে চিকিৎসার জন্য চেন্নাইতে যান সুনীলবাবু। কিন্তু সেখানে কোনও সুরাহা হয়নি। অবশেষে কলকাতায় অ্যাপোলো হাসপাতালে ইএনটি সার্জন ডা. শান্তুনু পাঁজার কাছে আসেন পরিবার। ২০২০-এর ফেব্রুয়ারির ঘটনা। ঠিক হয় এপ্রিলেই হবে অস্ত্রোপচার। এরই মাঝে শুরু হয় লকডাউন। করোনা আবহে সারা দেশে ককলিয়ার ইমপ্লান্ট বন্ধ হয়ে যায়। মাস পেরিয়ে যায়। পুজো পাগল সুনীলবাবুর আবদার ছিল একটাই। দুর্গাপুজোর ঢাকের আওয়াজটা যেনো শুনতে পান।
[আরও পড়ুন: বিজেপির যুব মোর্চার নবান্ন অভিযানে দেখা নেই রাহুল সিনহার, তুঙ্গে জল্পনা]
কোভিড আবহেও তাই কোমর বাঁধেন চিকিৎসকরা। পিপিই পরেই অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ৪ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এই যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত অন্তঃকর্ণকে বাইপাস করে সরাসরি মস্তিস্কে শব্দ প্রেরণ করে। যন্ত্রটির একটি অংশ কানের পেছনে বসানো হয়। অনেকের অন্তঃকর্ণ সম্পূর্ণ বিকল। অথচ অডিটরি স্নায়ু ঠিক রয়েছে। যেমনটা সুনীলবাবুরও। তাঁর অডিটরি স্নায়ুকে ব্যবহার করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শ্রবণশক্তিকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া করে ককলিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারি করে খুশি চিকিৎসকরাও। এবার আর পুজোর আওয়াজ শুনতে সমস্যা নেই।
কীভাবে হল ইমপ্লান্ট? প্রথমে মাস্টয়েড হাড়কে খোলার জন্য কানের পেছনে একটা ছোট্ট ছিদ্র করা হয়। এরপর ককলিয়াকে পাওয়ার জন্য মুখের স্নায়ুকে শনাক্ত করে মাস্টয়েড হাড় ও মুখের স্নায়ুর মাঝখানে ফাঁকা জায়গা তৈরি করা হয়। ককলিয়া খুলে গেলেই এর মধ্যে ইমপ্লান্ট ইলেকট্রোড ঢুকিয়ে দেওয়া। কানের পেছনে ত্বকের নিচে এই রিসিভার (ইলেকট্রিক ডিভাইস) বসিয়ে দিয়ে ছিদ্র বন্ধ করে দিলেই কাজ শেষ। ডা. পাঁজা জানিয়েছেন, “রোগী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। ঢাকের আওয়াজ ওঁ ভাল মতোই শুনতে পাবেন।” শুধু সংক্রমণ নয়, কানে কাঠি দিয়ে খোঁচাখুঁচি করলেও কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা থেকেও শোনার ক্ষমতা ধীরে ধীরে লোপ পেতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।