সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শীতের শহরে অকালবোধনের আঁচ। পৌষের ভরদুপুরে শহরের বুকে বেজে উঠল ঢাক। ছৌ নৃত্যে ধরা পড়ল দুর্গাপুজোর আমেজ। বুধবার শীতের নরম রোদ গায়ে মেখে যে মিছিল এগিয়ে এল অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস থেকে ধর্মতলার দিকে, সেখানে ছিল না কোনও সংগঠনের নাম। ছিল শুধু দুর্গাপুজোর প্রতি বাঙালির নিখাদ ভালোবাসা, আবেগ আর একরাশ গর্ব। বাঙালির সেরা উৎসব পেয়েছে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি। সেই আনন্দ ভাগ করে নিতেই রাজপথে পা রেখেছিলেন শয়ে শয়ে পুজোপ্রেমিক। কারও হাতে ছিল ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়ে তৈরি প্ল্যাকার্ড। কেউ হাতে ধরে আছেন মা দুগগার চালচিত্রের রেপ্লিকা। মিছিলের শহর কলকাতা আগে কখনও এমন মিছিল দেখেনি।
বাঙালির পরিচয়পত্রে না-লেখা সত্ত্বেও যা লেখা থাকে, তা হল দুর্গাপুজোর প্রতি তার ভালোবাসা। সেই কতকাল ধরে বাঙালি নিজের সাধ আর সাধ মিটিয়ে করে চলেছে মায়ের আরাধনা। ধর্মীয় উৎসবের বাইরেও দুর্গাপুজো হয়ে উঠেছে বাঙালির সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞান। সাবেকি থেকে থিম- এক আশ্চর্য বর্ণময় বিবর্তনের পথে এগিয়েছে দুর্গাপুজো। ইউনেস্কোর (UNESCO) এই স্বীকৃতিতে যেন একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। ক্রেন দিয়ে তোলা হল বিরাটাকৃতি তোরণ, যেখানে লেখা ছিল #ThanksUnesco2021। বাংলা আরও একবার প্রমাণ করল কেন সে জগৎসভায় সেরা হওয়ার দাবিদার।
[আরও পড়ুন: স্ত্রীর নামে কুকুরকে ডাকেন প্রতিবেশী, রাগের বশে এ কী করলেন স্বামী!]
এই আনন্দের মুহূর্তটিকে বাঙালি তথা শহরবাসী সেলিব্রেট করল অভিনব কায়দায়। পুজো উদ্যোক্তা থেকে যাঁরা পুজো (Durga Puja) ভালবাসেন সকলেই শামিল বর্ণময় পদযাত্রায়। সেই সঙ্গে পথচলতি সাধারণ মানুষও পা মেলালেন। মিছিল গিয়ে পৌঁছায় ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং-এ। শহরের কেন্দ্র তখন মুখরিত ঢাকের বোলে। সমবেত জয়োল্লাসের ভিতরই ধন্যবাদ জানানো হল ইউনেস্কোকে। সারা দুনিয়া সম্মান জানিয়েছে বাঙালির সংস্কৃতিকে, বাঙালি প্রত্যুত্তরে কৃতজ্ঞতা জানাল গোটা পৃথিবীকেই। গর্ব এবং আনন্দ মাখা এই স্মরণীয় মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আপ্লুত পুজোশিল্পী সুশান্ত পাল। তিনি বললেন, “নিঃসন্দেহে এই মুহূর্ত গর্বের। এই স্বীকৃতি আরও আগে আসা উচিত ছিল। তবে এসেছে যে তাতে প্রত্যেক বাঙালিই খুশি। আর হ্যাঁ, এই স্বীকৃতির সঙ্গে পুজোর একজন শিল্পী হিসেবে অনেকটা দায়িত্ব যে বাড়ল তা বুঝতে পারছি। আর আমরা অর্থাৎ বাঙালিরা সেই দায়িত্ব পালন করতে সানন্দে রাজি।”
ঠিক সেই মুহূর্তে যেন আন্তর্জাতিক সম্মান আর জাতীয়তাবোধ হাত ধরাধরি করে এসে দাঁড়াল বাংলার মাটিতে। বাঙালির এই পুজো-উদযাপনের সমাপ্তি চিহ্নিত হল জাতীয় সংগীতে। এ সম্মান তো শুধু বাংলার নয়, সারা দেশেরই। ইউনেস্কোর প্রতি কৃতজ্ঞতার জানানো তোরণে জেগে থাকা দেবীর ত্রিনয়ন যেন জানিয়ে দিল, বাঙালির সংস্কৃতি আজও স্পর্ধা রাখে আকাশ ছোঁয়ার।
দেখুন ভিডিও: