বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: রাজত্ব গিয়েছে, প্রভাব-প্রতিপত্তিও। অতীতের গমগম করা রাজ দরবারের আজ এমনই হাল যে প্রদেশ সভাপতির সিংহাসনে বসানোর জন্য হন্যে হয়ে লোক খুঁজতে হচ্ছে কংগ্রেস (Congress) হাইকম্যান্ডকে। রীতিমতো আতসকাচে চোখ রেখে সেই মুখের সন্ধানে নেমেছেন রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। এমনকী এর জন্য অন্যের পুকুরেও ছিপ ফেলতেও কসুর করছেন না তিনি!
সোমেন মিত্রের আকস্মিক প্রয়াণের ধাক্কা সামলাতে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদে নিয়ে আসা অধীররঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) একাধারে লোকসভায় দলের সংসদীয় নেতাও বটে! সর্বভারতীয় রাজনীতির গুরুভার তাঁর কাঁধে। সঙ্গে নিজের সংসদীয় ক্ষেত্র ও জেলায় দলকে সজীব রাখার দায়। এত কিছুর পর প্রদেশ সভাপতির দায়িত্ব সামলাতে তিনি কার্যত হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে বিকল্প মুখ চাই! কিন্তু পাবে কাকে? বঙ্গ রাজনীতিতে অপাংক্তেয় কংগ্রেস দলে যোগ্য মুখ কোথায়? সেই প্রদীপ ভট্টাচার্য আর আব্দুল মান্নান। প্রথমজন দেশের স্বাধীনতার থেকেও কয়েক মাসের বড় – ৭৬ পেরিয়েছেন। দ্বিতীয় জন সত্তরের কোঠায় ঢুকব ঢুকব করছেন।
[আরও পড়ুন: সিপিএমের অফিস লাল রং করে দিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর]
সূত্রের খবর, বিধান ভবনের সিংহাসনে বসার প্রার্থী খুঁজতে অন্যের পুকুরে ছিপ ফেলতে নেমে গিয়েছেন রাহুল গান্ধী। বঙ্গ কংগ্রেসের একদা স্নায়ুকেন্দ্র মালদার তৃণমূল সাংসদ মৌসম বেনজির নুরের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা সেরেছেন। যদিও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তাঁর বৈঠককে এখনও ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’-এর মোড়কেই জনসমক্ষে পেশ করে চলেছেন মৌসম। তবে সন্দেহ যাচ্ছে না। শিবিরের প্রাক্তন সদস্যকে আবার ঘরে ফেরানোর চেষ্টাই বোধহয় চলছে।
কংগ্রেসের আরেক মহিলা পরিচিত মুখ দীপা দাশমুন্সি। কিন্তু তিনি বেহাল বঙ্গ কংগ্রেসের হাল ধরতে নারাজ। কংগ্রেসে থাকলেও দৈনন্দিন কর্মসূচিতে তাঁর দেখা মেলে না। এছাড়া যে গুটিকয়েক অভিজ্ঞ নেতা এখনও কংগ্রেসের ডুবন্ত নৌকার সওয়ারি, তাঁরা আড়ালে আবডালে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্ত্রীর কড়া সমালোচক। ফলে পরিস্থিতি জটিল।
দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি তামিলনাড়ুর সাংসদ চেল্লা কুমারকে রাজ্যের পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। নতুন মুখ খোঁজার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পর্যবেক্ষক নিয়োগ হওয়ার পর থেকে বঙ্গে একবারের জন্য পা রাখেননি দক্ষিণের এই সাংসদ। বিধানভবনের জল্পনা, একান্তই যদি প্রাক্তন সাংসদ দলে যোগ দিতে রাজি না হন সেক্ষেত্রে ৪-৫ জনের নাম নিয়ে ভাবতে পারে দিল্লি।
[আরও পড়ুন: লটারিতে এক কোটি টাকা জিতলেন অনুব্রত মণ্ডল! শোরগোল বীরভূমে]
সূত্রের খবর, এদের মধ্যে রয়েছেন দুই প্রাক্তন বিধায়ক – পুরুলিয়ার নেপাল মাহাতো (Nepal Mahato) এবং উত্তরবঙ্গের শংকর মালাকার (Sankar Malakar)। বর্তমান প্রদেশ সভাপতি নেপালকে পরবর্তী প্রদেশ সভাপতি করতে সক্রিয় বলে জানা গিয়েছে। শংকর দিল্লির নেতাদের কাছে তদ্বির করছেন। কিন্তু দু’জনের কেউই হাইকমান্ডের মন জয় করতে পারেনিন। এই দু’জন বাদ দিয়ে তরুণ কোনও নেতার কাঁধে প্রদেশ সভাপতি মতো গুরুদায়িত্ব দেওয়া যায় কিনা তা নিয়ে জল্পনা চলছে। সেক্ষেত্রে আলোচনায় অমিতাভ চক্রবর্তী এবং শুভঙ্কর সরকার।
এরপরেও বঙ্গ কংগ্রেস চালাতে যে অর্থের প্রয়োজন সেই বিষয়টা ভাবাচ্ছে দিল্লিকে। বাস্তব হল, প্রদেশ কংগ্রেসের দৈনন্দিন কাজকর্ম চালাতে দিল্লি যে অর্থ পাঠায় তারপরেও প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ টাকা প্রয়োজন হয়। সেই অর্থ জোগাড় করতে হয় প্রদেশ সভাপতিকেই। তাই আর্থিক সঙ্গতি রয়েছে এমন কোনও কাউকে প্রদেশ সভাপতি চেয়ারে বসানো হবে বলে জল্পনা।