বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত ও রাহুল চক্রবর্তী: জোটের দায় বড় দায়! আর সেই দায়ের ফেরে ‘জলে পড়েছে’ রাজ্যের শেষ কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশংকর রায়ের জন্মশতবর্ষ।
১৯২০ সালে ২০ অক্টোবর জন্মেছিলেন রাজ্য কংগ্রেসের সর্বশেষ মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। সে কারণে ‘মানু’দার জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠান চলতি অক্টোবর মাস থেকেই শুরু হওয়ার কথা। বঙ্গ কংগ্রেসের এই বর্ণময় চরিত্র ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই উদ্দীপনাও তুঙ্গে থাকার কথা। কিন্তু কোথায় কী? উলটে দলের শেষ মুখ্যমন্ত্রীর জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠান করার আগে সাতপাঁচ ভেবেই চলেছে প্রদেশ কংগ্রেস! শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, সিদ্ধার্থশংকর রায়ের বেলতলার বাড়ি বা প্রদেশ কংগ্রেসের দপ্তরে বুধবার পর্যন্ত জন্মদিনকে কেন্দ্র করে কোনও কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে পারেননি বিধান ভবনের নেতারা। প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রে খবর, বামেদের সঙ্গে সদ্য সদ্য গড়ে ওঠা ‘দোস্তি’ টিকিয়ে রাখতেই বিধান ভবনের একেবারে নমো নমো করেই শতবর্ষের ‘সিদ্ধার্থ পুজো’ সাড়ার ভাবনা।
[আরও পড়ুন: কলকাতা বিমানবন্দর থেকে উড়ল যুদ্ধবিমান, মাঝ আকাশে চলল তুমুল ‘লড়াই’ ]
বঙ্গ কংগ্রেসে সিদ্ধার্থশংকরের মতো ক্যারিশমাটিক হিরো আর কেউ আসেননি। রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি একাধারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, অপারেশন ব্লু স্টারের পর অগ্নিগর্ভ পাঞ্জাবের রাজ্যপাল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। আর রাজনীতির বাইরের সিদ্ধার্থ? দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের দৌহিত্র। দুর্দান্ত ক্রিকেটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লু। আবার চারের দশকে গড়ের মাঠে প্রথম ডিভিশনের ক্লাবের নিয়মিত ফুটবলার। দেশের অন্যতম সেরা, ডাকসাইটে ব্যারিস্টার।
কিন্তু বামেদের না চটাতে সেই মানুদাকে আজ ‘নম্বর’ দিতে চাইছেন না প্রদেশের জোটপন্থী নেতারা। যা জানাজানি হতেই প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। মুখ্যমন্ত্রীকে স্রেফ একটি চিঠি দেওয়া ছাড়া প্রদেশ কংগ্রেস কিছুই করেই ওঠেনি বলে দলেই কানাঘুষো শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের জোটবিরোধী পক্ষের বক্তব্য, জরুরি অবস্থা এবং তৎকালীন কংগ্রেসি সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর কড়া অবস্থান বামেদের একপ্রকার দুরমুশ করে ছেড়েছিল। এখনও সেই যুগকে ‘কালা সময়’ বলে বামেরা দাগিয়ে রেখেছে। সাম্প্রতিক জোটকে কেন্দ্র করে দু’দলের বন্ধুত্ব যাতে চিড় না খায়, তার জন্য তৎপর দু’পক্ষই। তাই সিদ্ধার্থশংকর রায়ের যুগকে মনে করিয়ে দিয়ে খুঁচিয়ে ঘা করতে চাইছে না কংগ্রেসের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী।
সিদ্ধার্থশংকর রায়ের জন্মশতবর্ষ পালন নিয়ে বিধান ভবন জানাচ্ছে, এখনও বড় মাপের কোনও অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। দমদমে একটি অনুষ্ঠান হবে। যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না সিদ্ধার্থর মন্ত্রিসভার সতীর্থ রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “উনি তো সারাজীবন কংগ্রেসই করেছেন। এখন কংগ্রেস যদি তার কর্তব্য থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়, তবে কে করবে? উনি নানাভাবে দেশের সেবা করেছেন। বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। ফলে শতবর্ষের অনুষ্ঠান কংগ্রেসেরই করা উচিত।” কিন্তু সত্যি সত্যিই কি বাম-সঙ্গ অক্ষুণ্ণ রাখতে ব্রাত্য রাখা হচ্ছে সিদ্ধার্থের জন্মদিবসের কর্মসূচি? প্রশ্নটা এখন সরাসরিই তুলেছে প্রদেশ কংগ্রেসের একটা অংশ। যদিও সিদ্ধার্থ মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য বলছেন, “আমি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে প্রস্তাব দিয়েছি, সিদ্ধার্থশংকর রায়ের বাড়িটি সরকার অধিগ্রহণ করে মিউজিয়ামের ব্যবস্থা করুক।”
[আরও পড়ুন: এবার ভিড়ে লুকিয়ে থাকা পকেটমারদের চিনিয়ে দেবে যন্ত্র, জানেন কীভাবে?]
সিদ্ধার্থকে নিয়ে কংগ্রেস কর্মসূচি না নেওয়ায় হাঁফ ছেড়েছে আলিমুদ্দিনও। সিপিএমের অনেকে বলছেন, আমন্ত্রণ এলে সেটা অস্বস্তি বাড়াত। কারণ, কয়েক দিন আগেই গান্ধীজির জন্ম সার্ধশতবর্ষের অনুষ্ঠানে কংগ্রেসের দপ্তরে গিয়েছিলেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী—সহ বামফ্রন্টের সব শরিক দলের নেতারা। ফলে এবারেও কংগ্রেসের অনুষ্ঠানে বামেদেরও যেতে হত। এদিকে সামনেই দু’দল যৌথ কর্মসূচি নিতে চলেছে। এই অবস্থায় সিদ্ধার্থের জন্মশতবর্ষ কার্যত ‘সেকেন্ডারি ম্যাটার’ প্রদেশ কংগ্রেসের কাছে। বামফ্রন্টের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “প্রত্যেকটি দল অথবা সংশ্লিষ্ট নেতৃত্ব ঠিক করবেন, কোন কর্মসূচি তাঁরা কীভাবে করবেন। এ বিষয়ে আমার বাড়তি কিছু জানারও নেই, বাড়তি কিছু বলারও নেই।”
The post বামেদের ‘সঙ্গ’ টিকিয়ে রাখতে নমো নমো করে সিদ্ধার্থশংকরের শতবর্ষ পালন বিধান ভবনের appeared first on Sangbad Pratidin.