বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত ও সোমনাথ রায়: থারুর নাকি গেহলট? নাকি তৃতীয় কোনও ব্যক্তি? দলের সভাপতি পদের উত্তরাধিকারী কে হবেন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ধর্ম সংকটে গান্ধী পরিবার। থারুর এবং গেহলটকে (Ashok Gehlot) নিয়ে আলোচনার মধ্যেই তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে দিগ্বিজয় সিং আসরে নেমে পড়েছেন। দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী লড়াইয়ে সোনিয়া বা রাহুল গান্ধী না থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ত্রিমুখী হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশই প্রবল হচ্ছে। গান্ধী পরিবারের অনুপস্থিতিতে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রাস্তায় নেমে আসতে পারে। আর কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সুযোগ নিতে মুখিয়ে রয়েছে গেরুয়া শিবির। দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন শেষ হলেই গুজরাটের বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপির কাছে কংগ্রেসের গোষ্ঠীকোন্দল তুরুপের তাস হবে। তাই শেষ পর্যন্ত সোনিয়া (Sonia Gandhi) ও রাহুলরা তৃতীয় কোনও পথ বেছে নিতে পারেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
দুর্গাপুজো ও দেওয়ালির মাঝামাঝি ১৭ অক্টোবর কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন। বৃহস্পতিবারই দলের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিয়েছেন দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা মধুসুদন মিস্ত্রি। শনিবার থেকে সাতদিন চলবে মনোনয়ন পর্ব। ২৪, আকবর রোডের খবর অনুযায়ী, যদি কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়ে যায়, তাহলে বিজেপি (BJP) বলা শুরু করবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পুরোটাই লোক দেখানো। এর থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সভাপতি নির্ধারণ হলে তা অনেক বেশি সুখকর হবে দলের কাছে। এমনকি গোটা প্রক্রিয়া যাতে স্বচ্ছ্ব থাকে, তা নিশ্চিত করার কথাও দিয়েছেন সোনিয়া।
[আরও পড়ুন: মমতার উপর কী জাদু করেছেন? ধনকড়কে প্রশ্ন গেহলটের, খোঁচার জবাব দিল তৃণমূল]
দলের অভ্যন্তরীণ ভোট থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে গান্ধী পরিবার। সেই সুযোগে সক্রিয় হয়েছে দলের একাধিক গোষ্ঠী। আপাতত লড়াইয়ে তিনজনের নাম হাওয়ায় ভাসছে। প্রথমত, তিরুঅনন্তপুরমের সাংসদ শশী থারুর (Shashi Tharoor)। দ্বিতীয়ত, রাজস্তানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট ও তৃতীয়জন হলেন দিগ্বিজয় সিং। ইতিমধ্যেই শশী থারুর ও অশোক গেহলটের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছেন সোনিয়া গান্ধী। দিল্লিতে এসে বৃহস্পতিবার দিগ্বিজয় সিংও সোনিয়ার সঙ্গে কথা বলবেন।
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ও কেরলের সাংসদকে নিয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। গেহলট মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে রাজি নন। আবার শশী থারুর অনেক পরে দলে যোগ দিয়ে সাংসদ হন। যখন থারুর ও গেহলটকে নিয়ে কংগ্রেসের বাজার গরম তখনই মাঝখানে এসে হাওয়া আরও গরম করে দিয়েছেন দলের প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতা দিগ্বিজয় সিং (Digvijay Singh)। বুধবারই তাঁর নাম বাসিয়ে দেয় কংগ্রেসের একাংশ। তিনি আবার গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তাই সোনিয়া ও রাহুলরা তাঁকে একেবারে ফেলে দিতে পারবেন না। তাই নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। এদিকে, বুধবার ১০, জনপথে সোনিয়ার বাসভবনে দু’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কথা বলেন অশোক গেহলট। তিনি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পদ কিছুতেই ছাড়তে রাজি বলে সোনিয়াকে জানিয়ে দেন। পাঞ্জাবের ভরাডুবির ক্ষত এখনও টাটকা। তাই রাজস্থান নির্বাচনের আগে কিছুতেই কোনও সিদ্ধান্ত গেহলটের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছে না হাইকমান্ড। সোনিয়া গান্ধীর সামনে ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, পি ভি নরসিংহ রাওদের উদাহরণ এদিন দিয়েছেন গেহলট। তিনজনই একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি ছিলেন। তাহলে তিনি কেন সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীত্ব চালিয়ে যেতে পারবেন না, সেই প্রশ্নও করেন।
[আরও পড়ুন: কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যে জোর, উৎসবের মরশুম ফুরোলেই টানা ১১ দিন ছুটি, ঘোষণা সংস্থার]
কিন্তু, থারুরের পরিচিতি ও কেরলের কথা মাথায় রেখে দলের বড় অংশ তাঁর দিকেই ঝুকবে বলে মনে করা হচ্ছে। তার ওপর রাহুল নিজে কেরলের সাংসদ। প্রকাশ্যে থারুরের বিরোধিতা করা তাঁর পক্ষে কতখানি সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে গান্ধী পরিবারের (Gandhi Family) তরফে তৃতীয় কোনও পথ খোঁজা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল। তার মধ্যেই দিগ্বিজয় সিংয়ের নাম চলে আসায় আকবর ১০ নম্বর জনপথের বাসিন্দারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।