সোমনাথ রায়, নাগপুর: ব্রিটিশ অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে ১৯২০ সালে কমলালেবুর শহরে
বার্ষিক অধিবেশন থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল কংগ্রেস (Congress)। তার ১০৩ বছর পর সেই নাগপুর থেকেই ‘হ্যায় তৈয়ার হাম’ স্লোগান তুলল দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল। এবার লক্ষ্য বিজেপির ‘অপশাসন’ থেকে দেশকে, দেশবাসীকে মুক্তি দেওয়া। বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের ১৩৯তম প্রতিষ্ঠা দিবস। এই উপলক্ষে আরএসএসের ভরকেন্দ্র থেকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের পাঞ্চজন্যে ফুঁ দিতে চলেছেন খাড়গে-গান্ধীরা।
বুধবার সকালে ডা. বাবাসাহেব আম্বেদকরের নামাঙ্কিত বিমানবন্দর থেকে শহরের ভিতরে যাওয়ার পথে এক বারও মনে হল না, এই শহর আরএসএসের (RSS) আঁতুড়ঘর। মনে হল না এই শহরের ঠিকানাই জ্বলজ্বল করছে জনৈক মোহন ভাগবতের (Mohan Bhagwat) আধার কার্ডে। কে এই ভাগবত? যাঁর হাতে মোদি-শাহদের বিজেপির রিমোট কন্ট্রোল। যিনি নাকি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সর্বাধিনায়ক। উল্টে শহরের এদিক-ওদিক প্রবল, প্রকাণ্ড উপস্থিতি মল্লিকার্জুন খাড়গে (Mallikarjun Kharge), সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী নামের সেই মানুষগুলোর, যাঁদের পরিচয়পত্রের স্থায়ী ঠিকানায় রয়েছে গুলবার্গ অথবা দিল্লির পিনকোড। এক গাল হাসি মুখ নিয়ে হাতজোড় করে যাঁরা ছেয়ে রয়েছেন শহরজুড়ে।
[আরও পড়ুন: দুবাইয়ে গ্রেপ্তার মহাদেব কাণ্ডের ‘মাস্টারমাইন্ড’, ফেরানো হবে ভারতে]
কংগ্রেসের প্রচারে বাধা দিতে বম্বে হাই কোর্টের এক রায়কে হাতিয়ার করে আসরে নেমে পড়েছে নাগপুর পুরসভা। শহরের সৌন্দর্যকে রক্ষা করতে আদালতের নির্দেশে যত্রতত্র ব্যানার-হোর্ডিং লাগানো অবৈধ। এই রায়কে ঢাল করেই গত দু’দিন ‘হ্যায় তৈয়ার হামে’র প্রচুর হোর্ডিং ভেঙে ফেলা হয়েছে। নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে ‘আইওয়াশ’ হিসাবে বলি গিয়েছে গেরুয়া শিবিরের কিছু হোর্ডিংও। তবে এইসব খুচরো বাধাকে একটিপ নস্যির মতো ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা।
[আরও পড়ুন: আর কতদিন চলবে হামাসের সঙ্গে লড়াই? রাষ্ট্রসংঘকে জানাল ইজরায়েল]
এই প্রথম নাগপুরে একসঙ্গে মঞ্চে দেখা যাবে তিন গান্ধীকে। সঙ্গে আবার কংগ্রেস সভাপতিও। থাকার কথা প্রায় প্রত্যেক সাংসদ-সহ সর্বভারতীয় স্তরের প্রায় ২৫০ নেতার। দেশজুড়ে ৬০০ বিধায়কের অন্তত অর্ধেকও সম্ভবত থাকবেন বৃহস্পতিবার। এই মেগা আবহে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, কৃষক আত্মহত্যার মতো জ্বলন্ত সমস্যাকে সামনে রেখে জনস্রোত বইয়ে দিতে মরিয়া নাগপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার কংগ্রেস কর্মীরা। যুব কংগ্রেসের নেতৃত্বে র্যালির প্রচারে আয়োজন করা হয়েছে বাইক মিছিল। সভার কথা মাথায় রেখে আজাদ ময়দানের নামকরণ করা হয়েছে ভারত জোড়ো (Bharat Jodo) ময়দান হিসাবে। আজাদ ময়দানে গিয়ে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখছেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চৌহান, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজয় ওয়াদেত্তিয়ার, প্রদেশ সভাপতি নানা পাটোলেরা। কংগ্রেসের দাবি, লক্ষ্মীবারে এখানেই বাজিয়ে দেওয়া হবে ভোট যুদ্ধের পাঞ্চজন্য। শুরু হবে দেশ, দেশবাসীকে বাঁচানোর ধর্মযুদ্ধ। এই ধর্মযুদ্ধে ধর্মের যুদ্ধ কতখানি হয়, তাও দেখার।