কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত চ্যাট চলত। ছবি আদানপ্রদান, মজার জোকস শেয়ার হত। এসবের পরও গৃহকর্ত্রী ঘুণাক্ষরেও টের পাননি, যার সঙ্গে চ্যাট করছেন সে-ই হানা দেবে তাঁর বাড়িতে! বাগুইআটিতে ডাকাতির ঘটনার কিনারা করতে গিয়ে পুলিশ তথ্য পেল, সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্র ধরেই হানা দিয়েছিল ডাকাতরা। আর ডাকাতদের ধরতে গিয়ে পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়াকেই সূত্র হিসাবে কাজে লাগাল।
[বাগুইআটিতে দুঃসাহসিক ডাকাতি, মহিলাকে বাথরুমে আটকে সর্বস্ব লুট]
ফেসবুকে অপরিচিতের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করা, তারপর বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও নিবিড় করা যে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে, তা একটিবারের জন্যও বুঝতে পারেননি বাগুইআটির স্বপ্না কুণ্ডু। ধৃত তিন দুষ্কৃতীর মধ্যে সঞ্জীব দাস ওরফে আকাশ নামে একজনের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ফেসবুকে গ্রহণ করেন তিনি। তারপর বন্ধুত্ব হয়। ফোন নম্বর আদানপ্রদান চলে। সেখান থেকে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট। আর এই সূত্র ধরেই আকাশ বাড়ির খুঁটিনাটি সব তথ্য জেনে নেয় স্বপ্নাদেবীর কাছ থেকে। খোলা মনের অল্পবয়সি ‘বন্ধু’র কাছে মন উজাড় করে সব কিছু জানিয়েও দেন ওই গৃহবধূ। আর সেটাই ছিল দুষ্কৃতীদের কাছে ডাকাতির ব্লু-প্রিন্ট। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের নাম সঞ্জীব দাস, প্রভাকর ও শুভাশিস কর্মকার। দমদমের কাছ থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে লুট হওয়া সোনাদানা কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে, জানতে চাইবে পুলিশ।
স্বপ্নাদেবী এদিন বলেন, “ফেসবুকে পরিচয়। আকাশ আমাকে ছোট মা বলে ডাকত। হোয়াটসঅ্যাপে কথা হত। পারিবারিকভাবেও যোগাযোগ ছিল। একাধিক অনুষ্ঠানেও আমরা একসঙ্গে গিয়েছি। সেই আকাশ এমন ঘটনা ঘটাতে পারে, তা ভেবেই অবাক লাগছে।” ঘটনাটি ঘটেছে দেশবন্ধু নগরের ইএ ৯/১ নম্বর বাড়িতে। গত রবিবার সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ বাড়িতে একাই ছিলেন গৃহকর্ত্রী স্বপ্না কুণ্ডু। দরজায় টোকা দেওয়ার শব্দ শুনে ভেবেছিলেন স্বামী ফিরেছেন। দরজা খোলার পর আচমকা শক্ত হাতের ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যান। তারপর তিনি জানিয়েছেন, তিনজন ঘরে ঢোকে। প্রত্যেকের মুখ ঢাকা ছিল হেলমেটে। তারা এসে একটি গামছা দিয়ে তাঁর মুখে চাপা দিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দেয়। তাদের হাতে ছিল লম্বা ধরনের ছোরা। তা গলায় ঠেকিয়ে ঠেলে দোতলায় নিয়ে গিয়ে আলমারি খোলার নির্দেশ দেয়। একটি আলমারি খুলে দেন তিনি। তারপর নিজেরাই চাবি দিয়ে অন্য একটি আলমারি খুলে লুঠপাট চালায়। তারপর বাথরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বাড়ির সব আলো নিভিয়ে দিয়ে চলে যায়। পুলিশকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। কিছুক্ষণ পর বাথরুম থেকে বেরিয়ে ফোন করে বোন ও দেওরকে খবর দেন তিনি। স্বামী কার্তিক কুণ্ডু-সহ অন্যরা বাড়ি এসে পুলিশকে খবর দেন। ডাকাতির পিছনে পরিচিত কেউ আছে বলে সন্দেহ হয় পুলিশের। ডাকাতির কিনারায় স্বপ্নাদেবীর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট কাজে লাগায় পুলিশ।
[গন্তব্যে নামানো নিয়ে বচসা, যাত্রীর হাতে কামড় ক্যাব চালকের]
The post বাগুইআটিতে ডাকাতির কিনারা করল পুলিশ, ধৃত গৃহকর্ত্রীর ‘ফেসবুক-ফ্রেন্ড’ appeared first on Sangbad Pratidin.