কৃষ্ণকুমার দাস: অনুব্রত মণ্ডলকে জেলা সভাপতি রেখেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়ে দেওয়া ছয় সদস্যর কোর কমিটিই আপাতত বীরভূমে দলের সংগঠন চালাবে বলে জানিয়ে দিল রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচনের আগে জেলা সফরে এসে প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা করা পাঁচ সদস্যের কমিটিতে ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, বিকাশ রায়চৌধুরি, অভিজিৎ সিংহ (রানা), সুদীপ্ত ঘোষ। পরে নির্বাচনী প্রচারের মধ্যে কাজল শেখের নাম জুড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রীই।
জামিনে ছাড়া পেয়ে তিহাড় থেকে বীরভূমে ফিরে আসার পর বুধবার জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে কোর কমিটির সদস্যদের ছবি দেওয়া পোস্টার সরিয়ে মমতা-অভিষেকের সঙ্গে শুধুই অনুব্রতর ছবি দিয়ে নতুন হোর্ডিং টাঙানো হয়। কিন্তু রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বিকেলে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়, যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী নিজে ওই কোর কমিটি ঘোষণা করেছিলেন তাই বীরভূমে সংগঠন নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত। কলকাতায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বুধবার বিকেলে তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ জানিয়ে দেন, ‘‘পুরোটাই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবেন। আপাতত বীরভূম নিয়ে দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মেনে দলের ‘স্ট্যান্ড’ যা ছিল তাই আছে। বীরভূমের সংগঠন নিয়ে দলের তরফে এখনও নতুন কিছু ঘোষণা করার নেই।’’
অনুব্রত ২০২২ সালের ১১ আগস্ট গ্রেপ্তারের পর স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বীরভূমের সংগঠন আমি নিজে দেখব। এরপরই তিনি কোর কমিটি ঘোষণা করেন। কিন্তু জেলায় অনুব্রতকে দলের সভাপতি রেখে দেয় তৃণমূল। আর ওই কোর কমিটির নেতৃত্বে জেলায় তৃণমূল গত দু’বছরে পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে আগের চেয়ে শুধু ভালো ফল করেনি, অনেক শান্তিতেই নির্বাচন হয়েছে বলে পুলিশের রিপোর্ট। স্বভাবত, জামিনে ফিরে আসার পর অনুব্রতকে রেখে আপাতত ছয় সদস্যর কোর কমিটিকে দিয়েই দল চালাতে চাইছে রাজ্য তৃণমূল।
জামিনে মুক্ত হয়ে বোলপুরে ফেরার পর এদিন বিকেলে অসুস্থ শরীরে বোলপুরের জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে পৌঁছন অনুব্রত মণ্ডল। অবশ্য তার আগেই জেলা কার্যালয় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করেন কর্মীরা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সরানো হয় জেলার কোর কমিটির সদস্যদের পোস্টার দেওয়া ছবি। নিচুপট্টির বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় অনুব্রত জানান,"পায়ে চোট লেগে আছে। ২৫ মাস পর পার্টি অফিসে যাচ্ছি।" এদিন দলীয় কার্যালয়ে কনভয় পৌঁছানো মাত্রই কর্মী সমর্থক ও অনুগামীরা কার্যত উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। স্বাগত জানান বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল। দোতলায় মা কালীকে প্রণাম করে অনুব্রত প্রবেশ করেন নিজের অফিসে। বসেন নিজের পুরানো কাঠের চেয়ারে।
একে একে আসেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বিকাশ রায়চৌধুরী, অভিজিৎ সিংহ-সহ ব্লক ও অঞ্চল তৃণমূল সভাপতিরা। খবর দেওয়া হয় কাজল শেখকে। কিন্তু কেতুগ্রামে কর্মসূচিতে থাকায় আসেননি তিনি। চন্দ্রনাথ ও বিকাশদের সঙ্গে মঙ্গলবার দেখা না করা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের এক প্রশ্নের উত্তরে অনুব্রত বলেন,‘‘মেয়ে ও বাড়ির লোকেদের আর বিড়ম্বনায় ফেলতে চাই না। তাই রাজনীতির কারও সঙ্গে বাড়িতে আর দেখা করব না।’’ রাতেই অবশ্য কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান কারা ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রনাথ। সাংসদ অসিত মাল জানান,‘‘নিয়ম করেই কেষ্টদা প্রতিদিন দলীয় কার্যালয়ে বসবেন বিকেল চারটে থেকে সন্ধ্যা সাতটা।’’ বন্যা ত্রাণের জরুরি কাজে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘সৌজন্যমূলক কথা হয়েছে, সংগঠন নিয়ে উনি যখন মিটিং ডাকবেন, তখন নিশ্চয়ই কখা হবে।’