কোভিড সরাসরি কড়া নাড়েনি, কিন্তু সমস্যা অন্যদিকে। পরোক্ষভাবে করোনা নিয়ে চাপা টেনশন, চিন্তা আর তার জেরে অনিয়ম ও আলসেমি যুক্ত হয়েছে জীবনে। এর প্রভাবে শরীরে ডায়াবিটিস, ওবেসিটি, হজমের গন্ডগোল, অনিদ্রার মতো একগাদা লাইফস্টাইল ডিজিজের ঝুঁকিও বাড়ছে। সতর্ক করলেন বিশিষ্ট জেনারেল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আশিস মিত্র। শুনলেন কোয়েল মুখোপাধ্যায়।
ইদানীং করোনা সংকটের জেরে একটু হলেও পাদপ্রদীপের তলায় চলে গিয়েছে ডায়াবিটিস, হাইপারটেনসন, স্থূলতা তথা ওবেসিটির মতো আরও কিছু লাইফস্টাইল ডিজিজ। যতটা দরকার, ততটা মনোযোগ পাচ্ছে না মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস এবং কর্মজীবনের জেরে গজিয়ে ওঠা এই সমস্ত রোগ। কোনওভাবেই এদের হালকা নজরে দেখলে চলবে না। যদিও বয়স্ক মানুষদের চেম্বারে আনতে এই মুহূর্তে সব চিকিৎসকরাই বারণ করছেন। কারণ তা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ফোনে, মেসেঞ্জারে বা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ থাকছেই।
মাথাচাড়া দিচ্ছে ডায়াবিটিস:
এর প্রথম কারণ শরীরচর্চার অভাব। লকডাউনের জন্য অনেকেরই শরীরচর্চার অভ্যাস কার্যত মাঠে মারা গিয়েছে। কেউ কেউ ধরে রাখলেও তাতে দুধ কম, জল বেশি। তাই এক্সারসাইজ করতে না পারলে হাঁটুন। ডায়াবিটিস রোগীদের রোজ অন্তত ৪৫ মিনিট হাঁটতে বলা হয়। দ্বিতীয় কারণ হল আতঙ্ক। ২৪ ঘণ্টা খবরের চ্যানেলগুলি করোনার ভয়াবহতার খবর দেখিয়ে যাচ্ছে। এতে বাড়িতে বসে টেনশন আরও বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে স্বাস্থ্যে। এর থেকে মুক্তি পেতে ভাল সিনেমা দেখুন, বই পড়ুন, গান শুনুন। তৃতীয় বিষয় হল খাদ্যাভ্যাস। কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাদ্য খাওয়া কমাতে হবে। প্রোটিন বেশি খান। কিডনির সমস্যা থাকলে প্রোটিনজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। টক দই, ফলমূ্ল খেতে পারেন।
[আরও পড়ুন: হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন নিয়ে পরীক্ষা, করোনা মোকাবিলায় নতুন গবেষণা অক্সফোর্ডের]
লকডাইনে মেদবলী:
এই ‘মাদার অফ অল লাইফস্টাইল ডিজিজ’ থেকে রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা, ডায়াবিটিস বাড়ে, ফ্যাটি লিভারের সমস্যাও দেখা দেয়। লকডাউনে অনেকেরই ওজন বাড়ছে, ওবেসিটি হচ্ছে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়েট চার্ট ফলো করুন। মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলুন। সুগারফ্রি ব্যবহার করুন। গ্রিন টি খান। প্রোটিন যেমন ডিমের সাদা, দুধ, ছানা খেতে পারেন। রোজ ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা শরীরচর্চা করুন।
চাপেই বাড়ে রক্তচাপ:
এমনিতে গরম পড়লে রক্তচাপ কমে। কিন্তু এ বছর এখনও তেমন গরম পড়েনি। উলটে রক্তচাপ বাড়ছে। তার কারণ আতঙ্ক। চারদিকে ডাক্তারদের চেম্বার-হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কী হবে? অনেকের চিন্তায় ঘুম হচ্ছে না। এই সবের প্রভাব পড়ছে রক্তচাপের উপর। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রেসার এবং সুগার মাপার যন্ত্র কিনে রাখুন। বাড়িতে চেক করে, ডাক্তারকে ফোনে জানান। এখন অনলাইনেও কনসালটেশন হয়। খাবারে নুন কমান।
ঘুম নেই চোখে!
সংক্রমণের আতঙ্ক, পরিজনদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ, পেশার ভবিষ্যৎ নিয়ে টেনশনে এমনিতেই অনিদ্রা বাড়ছে। অনিদ্রা প্রতিহত করার একমাত্র পথ ঘুমের ওষুধ নয়। যদি খানও, তবে তা কেবলমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই। তার থেকে বরং রাত জেগে নেটফ্লিক্স দেখার প্রবণতা ছাড়ুন। রাত ১২টার পর ফোন, পিসি, টিভিতে চোখ নয়। যোগ ব্যায়াম করুন ও গল্পের বই পড়ুন।
[আরও পড়ুন: প্রতিষেধক প্রস্তুতির উদ্যোগ দেশেই, ICMR`র সঙ্গে গাঁটছড়া ভারত বায়োটেকের]
ভাবাচ্ছে পেট:
খাওয়ার অনিয়ম করা চলবে না। সঠিক সময় খাবার খান এবং সহজপাচ্য খাবার খান। নচেৎ গ্যাসট্রিক আলসার, বদহজমের সমস্যা বাড়বে। খেয়েই সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন না। খাওয়ার পর অন্তত ১৫ মিনিট হাঁটুন। ১ ঘণ্টা পরে ঘুমোতে যান। মুঠো মুঠো প্যান্টোপ্রাজল জাতীয় ওষুধ খাওয়া বন্ধ করুন। এতে পেটের ক্ষতি হয়। তার থেকে লিকুইড অ্যান্টাসিড ভাল। তবে কোনওকিছুই অভ্যাসে পরিণত করবেন না।
পরামর্শে: ৯৮৩১৬৭১৫২৫
The post শরীরে থাবা বসাতে পারে করোনা! এই চাপা দুশ্চিন্তাই জন্ম দিচ্ছে একাধিক রোগের appeared first on Sangbad Pratidin.