অভিরূপ দাস: ধমনি ছিঁড়ে গিয়েছিল করোনা রোগীর মাথার ভিতরে। রোগী নেগেটিভ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলে প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়ে যেত। তবে উপায়? পিপিই পরে কোভিড পজিটিভ রোগীর জটিল অস্ত্রোপচার করলেন চিকিৎসকরা। মাথা থেকে বের করা হল এক মিলিলিটার রক্ত। কোভিড পজিটিভ রোগীর জটিল অস্ত্রোপচারের আয়োজন মল্লিকবাজারের ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে।
[আরও পড়ুন: এবার কয়লা উৎপাদনে আঘাত হানল করোনা, লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে ইসিএল]
বর্ধমানের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা সাদিক শেখ। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের ঘটনা। এক রাতে আচমকাই ঘুম ভেঙে যায় বছর পঞ্চান্নর সাদিকের। ভুল বকছিলেন। খবর দেওয়া হয় গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারকে। তিনি এসে ভাবেন ভুতে ধরেছে হয়তো। ভাগ্যিস সে কথায় আমল দেননি সাদিকের ছেলে। তড়িঘড়ি বাবাকে নিয়ে দৌড়ন বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে। সেখানেই সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে সত্যিটা। মাথার ভিতর ধমনির দেওয়াল ফেটে গিয়েছে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয় অ্যানুরিজম। অ্যানুরিজমের কারণে সাবার্কানয়েড ব্লিড বা মাথার ভিতরে রক্তপাত হচ্ছিল। এহেন রোগীর মধ্যে তিনভাগের একভাগকে বাঁচানো সম্ভব হয়। প্রয়োজন দ্রুত অস্ত্রোপচারের। জেলার নার্সিংহোমে অত্যাধুনিক চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই দ্রুত রোগীকে কলকাতায় রেফার করা হয়। কলকাতার বাঙ্গুর ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে বেড না পেয়ে মল্লিকবাজারের ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে ভর্তি হন রোগী।
করোনা আবহে অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর কোভিড টেস্ট করে নেওয়া বাধ্যতামূলক। সেই টেস্ট করাতে গিয়েই মাথায় হাত। সাদিক করোনা পজিটিভ। নিশ্চিত হতে রোগীর বুকের সিটি স্ক্যান করা হয়। সেখানেও দেখা যায় রোগীর ফুসফুসে সংক্রমণ রয়েছে। করোনা রোগীর অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি অনেক। নিউরো সার্জন চিকিৎসক সুকল্যাণ পুরকায়স্থর কথায়, “রোগী করোনা পজিটিভ। কিন্তু নেগেটিভ হওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করতে পারতাম না। এই আবহেই জটিল অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
এর মধ্যেই ডিএসএ বা ডিজিটাল সাবট্রাকশন অ্যাঞ্জিওগ্রাফিতে ধরা পড়ে রোগীর মাথার ভিতরের আরও একটি ধমনির দেওয়াল দুর্বল হয়ে পড়েছে। পিপিই পরেই এন্ডোভাসকুলার সার্জারির প্রস্তুতি শুরু করে দেন চিকিৎসকরা। টানা ২ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারে অবশেষে মাথার ভেতর থেকে বের করা হয়েছে রক্ত। মেরামত করা হয়েছে ধমনির দেওয়াল। অস্ত্রোপচারের পরেও ফের একবার কোভিড টেস্ট করা হয় সাদিকের। এবারও তিনি পজিটিভ! ডা. সুকল্যাণ পুরকায়স্থর কথায়, “কোভিড সারতে ন্যূনতম সময় তো লাগবেই। আমরা রোগীকে বাড়িতেই হোম আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দিয়েছি।”
[আরও পড়ুন: মিষ্টি বিক্রির ক্ষেত্রে ‘বেস্ট বিফোর’ লেখার সিদ্ধান্ত তুলে নিন, চিঠিতে আরজি মোদি-মমতাকে]
The post করোনা আক্রান্তের মাথায় জটিল অস্ত্রোপচার, অসাধ্যসাধন কলকাতার হাসপাতালে appeared first on Sangbad Pratidin.