গৌতম ব্রহ্ম: করোনা অতিমারীর (Coronavirus Pandemic) চতুর্থ ঢেউ ভারতে আসবে কিনা, এলেও কখন, এ সব এখনও অজানা। তবে ফোর্থ ওয়েভ এলেও স্কুল বন্ধ করার মতো পদক্ষেপ আর করা উচিত নয়, আগের মতো লকডাউনের রাস্তায় হাঁটাও ঠিক হবে না বলে মনে করেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhijit Banerjee)। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের দাবি, ওমিক্রনের দু’টি অবতারের সঙ্গেই ঘর করার অভিজ্ঞতা রয়েছে ভারতীয়দের। জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের রিপোর্ট তাই বলছে। ফলে সংক্রমণ বাড়লেও চিন বা কোরিয়ার মতো খারাপ অবস্থা ভারতের হবে না।
মঙ্গলবার সাউথ সিটির একটি বই বিপণিতে একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন অভিজিৎ বিনায়ক। সেখানে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে তিনি জানান, কিছু দেশে ওমিক্রন বিএ২ (Omicron BA2) ভ্যারিয়েন্টের হাত ধরে চতুর্থ ঢেউ আছড়ে পড়েছে। বাংলা তথা ভারতে কিন্তু এই ভ্যারিয়েন্টে বহু মানুষ ইতিমধ্যেই আক্রান্ত। জিন সিকোয়েন্সিং করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওমিক্রন ২ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছে। এখন জার্মানির মতো দেশে ওমিক্রনের এক নম্বর ভ্যারিয়েন্টটি সক্রিয়। সেই দিক থেকে ভারত অনেক বেশি ‘নিরাপদ।’ নোবেলজয়ীর পর্যবেক্ষণ, “বিপদের সঙ্গে আমাদের আগে থেকেই পরিচয় হয়ে রয়েছে। তাই চতুর্থ ঢেউ নিয়ে ভারতের খামোকা দুশ্চিন্তা করাটা অবৈজ্ঞানিক। যদি আসেও, স্কুল বন্ধ করা বা লকডাউনের মতো পদক্ষেপ করার প্রয়োজন হবে না। তবে কোমরবিড, বয়স্ক মানুষদের নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা নিতেই হবে। যাঁদের বাড়িতে ডায়াবেটিস বা হাইপারটেনশনের মতো রোগী রয়েছে তাঁদের বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন। নিজেদের শরীরে কোভিডের কোনও উপসর্গ অনুভব করলেই টেস্ট করাতে হবে। তারপর বাড়িতে ঢুকতে হবে। বয়স্ক বা কোমরবিড সদস্যদের সাবধানে রাখতে হবে।”
[আরও পড়ুন: রামপুরহাট কাণ্ড: ‘আমি ব্যথিত, আপনার মন্তব্য তদন্তেও প্রভাব ফেলতে পারে’, রাজ্যপালকে জবাব মমতার]
উল্লেখ্য, চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইজরায়েলে রকেটের গতিতে কোভিড (COVID-19) সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। থিতিয়ে পড়া করোনা মহামারী চাগিয়ে উঠছে নতুন ঢেউ তুলে। দক্ষিণ কোরিয়ায় একদিনে ৬ লক্ষ মানুষ সংক্রমিত হওয়ার নজির তৈরি হয়েছে। খলনায়ক সেই ওমিক্রনের বিএ২ অবতার, কোভিডের যে স্ট্রেন ভারতে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে এসেছিল। এবং এই তথ্যই স্বস্তি দিচ্ছে চিকিৎসকদের। অভিজিৎ বিনায়কেরও পর্যবেক্ষণ তেমনই। একই বক্তব্য শহরের চিকিৎসকদের একাংশের। গ্লোবাল অ্যাডভাইসরি বোর্ডের অন্যতম সদস্য ডা. অভিজিৎ চৌধুরি জানিয়েছেন, ভারতে চতুর্থ ঢেউ আসবে কিনা, বলার মতো সময় এখনও আসেনি। সবই অনুমান, তবে সতর্ক থাকতে হবে। ঢেউ এলেও লকডাউনের মতো পদক্ষেপ করার প্রয়োজন পড়বে না। কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের অন্যতম মেন্টর অধ্যাপক ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকারের বক্তব্য, “মৃত্যু না হলে লকডাউনের প্রয়োজন নেই। ব্রিটেনে এখন রোজ ১ লক্ষ লোক কোভিড আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু সব খোলা আছে। কোভিড এখন সাধারণ সর্দি-কাশি-জ্বরে পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে লকডাউন শব্দটাই উচ্চারণ করা উচিত নয়।”
[আরও পড়ুন: বাংলায় রাজনৈতিক হিংসা নতুন নয়, ফিরে দেখা বাম আমলের এই ৭ গণহত্যার কাহিনি]
এদিন অভিজিৎ বিনায়ক বেশ কিছুক্ষণ তাঁর পাঠককুলের সঙ্গে সময় কাটান। তাঁর নতুন লেখা রান্নার বই নিয়ে রসিকতা করে বলেন, “ইকনমিক্স কথাটি এসেছে ঔকনমস থেকে। যার অর্থ গেরস্থালির ব্যবস্থাপনা। তাই অর্থনীতির সঙ্গে রান্নার একটি বনেদি যোগ রয়েছেই। এই বইয়ে বেশ কিছু জায়গায় কায়দা করে অর্থনীতি পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে! তবে আখেরে এটি একটি খাওয়া ও খাওয়াদাওয়া উপভোগ করার বই।”