জর্জ বুরুচাগা: দিয়েগো মারাদোনার (Diego Maradona) পরামর্শ আমার আজও মনে আছে। ও বলত যে, শান্ত ভাবে খেলো। খেয়াল রাখো কোথায় কী হচ্ছে। আর খেলাটাকে ফলো করে ঠিকঠাক, দেখো আমি কী করছি। আমরা অক্ষরে অক্ষরে দিয়েগোর পরামর্শ অনুসরণ করতাম। শান্ত ভাবে খেলতাম, আমাদের খেলাও তাতে ভাল হত। এর বাইরে দিয়েগোর নেতৃত্ব আমাদের অফুরান আত্মবিশ্বাস জোগাত, তার রেজাল্টও পেয়েছিলাম আমরা। ছিয়াশি বিশ্বকাপের আগে কেউ ভাবেনি আমরা বিশ্বজয়ী হব। কিন্তু দিনের শেষে আমরা হয়েছিলাম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। দুনিয়া অনেক বদলে গিয়েছে এখন। খেলায় পরিবর্তন এসেছে, বদলে গিয়েছে নেতৃত্ব দেওয়ার ধরণ।
১৯৮৬ থেকে ২০২২–টিম যেমন পাল্টে গিয়েছে, তেমনই মারাদোনা থেকে মেসি (Lionel Messi), নানাবিধ নেতা এসেছে। দিয়েগো অনেক বেশি এনার্জেটিক ছিল, ওর প্রাণশক্তি যেন শেষ হত না। সঙ্গে ছিল অসাধারণ টেম্পারামেন্ট আর বুদ্ধি করে টিমকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা। লিওনেল মেসি সেখানে পুরোপুরি উল্টো। লিও সব সময় কথা কম বলে, শান্ত থাকে, চুপচাপ থাকে। কিন্তু খেলাটাকে বোঝে মারাত্মক। লিও জানে কখন ও বলটাকে ধরবে, কখন ছাড়বে। লিওর সঙ্গে আগে খেলত যারা, সবাই প্রায় অবসর নিয়ে নিয়েছে। আর ও ততই যেন উঠে এসেছে অসাধারণ এক নেতা হিসেবে। ডাচদের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে গোটা বিশ্ব অপেক্ষা করে আছে মেসি-ম্যাজিক দেখতে। শুক্রবার আর্জেন্টিনা বনাম নেদারল্যান্ডস ম্যাচের কাটাছেঁড়া এবার আগাম করে ফেলি।
[আরও পড়ুন: কোয়ার্টারে শুরু থেকেই হয়তো ডি’মারিয়া, বাদ পড়তে পারেন গোমেজ]
অন্যতম কঠিন প্রতিপক্ষ: আমার মনে হয়, নেদারল্যান্ডস ম্যাচটা আর্জেন্টিনার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে। এই আর্জেন্টিনা টিমে প্রতিভা প্রচুর। গ্রুপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে ওদের হেরে যাওয়াটা গোটা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। হারের চেয়েও, যে ভাবে আর্জেন্টিনা হেরেছিল সে দিন, সেটা অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু আমি বলব, সৌদি আরবের কাছে হেরে শাপে বরই হয়েছে টিমের। সৌদি ম্যাচের পর পরপর দু’টো ম্যাচে মেক্সিকো আর পোল্যান্ডকে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর ম্যাচেও ভাল খেলে জয় তুলে নিয়েছে। মনে রাখতে হবে, শেষ ষোলো থেকে বিশ্বকাপের নকআউট পর্ব শুরু হয়ে যায়। একটা ভুল মানে সব শেষ। এবার সামনে নেদারল্যান্ডস। যে ম্যাচটা আরও কঠিন হতে যাচ্ছে।
মেসি বনাম ভ্যান ডাইক মহাযুদ্ধ: নিজের হারানো ফর্ম ফিরে পেয়েছে মেসি। সবচেয়ে বড় কথা, টিমের জয়ে বড়সড় অবদান রাখছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আমরা সেরা মেসিকে দেখে রেখেছি। এবার ওর লড়াই ডাচ ডিফেন্ডার ভার্জিল ভ্যান ডাইকের সঙ্গে। যে কি না এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেন্টার ব্যাক। লিভারপুলের হয়ে খেলে, অভিজ্ঞতাও প্রচুর। ভ্যান ডাইকও চোট সারিয়ে ছন্দে ফিরে এসেছে। মেসিকে থামানোর দায়িত্ব কিন্তু ওর কাঁধেই পড়বে। আর আর্জেন্টিনাকে থামাতে গেলে ভ্যান ডাইককে সবার আগে মেসিকে থামাতে হবে। নইলে ভোগান্তি আছে ডাচদের কপালে।
আর্জেন্টিনার টিম কম্বিনেশন: আমার মতে, লিওনেল স্কালোনি ভাল কাজ করছে। চেঞ্জগুলো বেশ ভাল করছে ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে। আমি বলব, স্কালোনির কিছুতেই নিজের স্ট্র্যাটেজি থেকে সরে আসা উচিত নয়। কারণ এই স্ট্র্যাটেজি মেক্সিকো-পোল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতিয়েছে আর্জেন্টিনাকে। আমি নিশ্চিত যে, আর্জেন্টিনা অধিকাংশ সব বল পজেশন রাখবে। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, নেদারল্যান্ডসের মারাত্মক প্রতি আক্রমণকে। কিন্তু আমি মনে করি, গোটা টিম যদি নিজেদের ছন্দে খেলে, মেসি সমেত, তা হলে ম্যাচে আর্জেন্টিনাই কর্তৃত্ব করবে।
শক্তিশালী আলবিসেলেস্তে ডিফেন্স: আমার মতে, বিশ্বের যে কোনও আক্রমণকে আটকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে আর্জেন্টিনা ডিফেন্স। নেদারল্যান্ডস ম্যাচেও ডিফেন্সকে জমাট থাকতে হবে। কারণ নেদারল্যান্ডস দারুণ টিম। যেমন দুর্ধর্ষ সব ফরোয়ার্ড আছে, তেমনই মারাত্মক সব ডিফেন্ডার। এর সঙ্গে জুড়তে হবে লুই ফান গলের মতো বিদগ্ধ কোচকে। আর্জেন্টিনার স্ট্র্যাটেজি হওয়া উচিত, যতটা সম্ভব, বল পজেশন নিজেদের কাছে রাখা। আর্জেন্টিনা ডিফেন্স নিয়েও আমার যথেষ্ট ভরসা আছে। কোচ মাঝে মাঝেই ডিফেন্সের ফর্মেশন পাল্টে দেয়। কখনও চার, কখনও আবার পাঁচ ডিফেন্ডার নিয়েও খেলে আর্জেন্টিনা। রোমেরো, লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, নিকোলাস ওটামেন্ডি–এরা দারুণ ফর্মেও আছে। সব সময় ডিফেন্স করা উচিত নয়। কিন্তু আর্জেন্টিনার শক্তি টিমের ডিফেন্সই।
কোয়ার্টার জিতলে সম্ভাব্য সেমিফাইনালিস্ট: আর্জেন্টিনা জিতলে, আমার মতে ফুটবল বিশ্ব চাইবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সেমিফাইনাল দেখতে। দেখুন, কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ব্রাজিল হারিয়ে দেবে বলেই বিশ্বাস করি। আর তার পর যদি আর্জেন্টিনাও জেতে, তা হলে একটা হাই ভোল্টেজ সেমিফাইনাল দেখতে পাব আমরা।
(চিভাচ স্পোর্টস)