শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: দীর্ঘ পরিকল্পনার পর আত্মহত্যা দম্পতির। আর তার আগে প্রাণাধিক প্রিয় পোষ্যের (Pet)যত্ন কীভাবে নিতে হবে, তার বিস্তারিত লিখে দিয়ে গেলেন তাঁরা। সুইসাইড নোটের সঙ্গে সেই লেখা উদ্ধার করেছে পুলিশ। সে লেখা দেখে চোখে জল সকলের। নিজেদের জীবন শেষ করে দিলেও পোষ্যটি যাতে যত্নে থাকে, জীবনের সবটুকু আনন্দ উপভোগ করতে পারে, সেই রাস্তা তাঁরা প্রশস্ত করেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে দম্পতির আত্মহত্যার (Suicide) পর শোকের আবহ ছাপিয়ে আলোচনায় তাঁদের এই যত্নশীলতা। তাঁদের কথা রেখেই মা-বাবার শেষকৃত্যের পর পোষ্যটিকে নিয়ে গিয়েছেন দম্পতির মেয়েরা। মা-বাবার শেষ ইচ্ছেপূরণ তাঁরা করবেনই।
ঘাটালের (Ghatal)আলমগঞ্জের বাসিন্দা দেবাশিস ঘোষ ও জলি ঘোষ। শুক্রবার তাঁদের ফ্ল্যাট থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় ষাটোর্ধ্ব দম্পতির দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সঙ্গে পাওয়া যায় সুইসাইড নোট। তা থেকে জানা গিয়েছে, ৫০ লক্ষ টাকা দেনার দায়ে জর্জরিত দেবাশিসবাবু। শোধ করার কোনও উপায় না দেখে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী জলিদেবী। কিন্তু একমাত্র চিন্তা হয়ে দাঁড়ায় প্রাণাধিক প্রিয় পোষ্য জ্যাংগো। বছর নয়ের একটি গোল্ডেন রিট্রিভার (Golden Retriever) সে। তাঁদের অবর্তমানে জ্যাংগো কীভাবে থাকবে, সেই চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছিল। তাই তার জন্য এক আত্মীয়ের উদ্দেশে একটি নোট লিখে রেখেছিলেন দেবাশিসবাবু ও জলিদেবী। তাতে জ্যাংগোর দৈনন্দিন রুটিনের বিস্তারিত লেখা ছিল। পুলিশ সুইসাইড নোটের সঙ্গে এই প্রিন্ট আউট করা সেই কাগজও উদ্ধার করে।
জ্যাংগো খুব ভাল, কোনও ঝামেলা নেই। একটু শীতল আবহাওয়া আর শুধু দু’বেলা খাবার পেলেই সে খুশি। একথা জানিয়ে তাঁরা বিস্তারিত লিখেছেন জ্যাংগো রোজ কী খায়। দুপুরে ভাত, গাজর ও কাঁচকলা সেদ্ধ এবং রাতে ভাত, আমুলস্প্রে ও ডিম। এছাড়া সারা সপ্তাহে ৫০০ গ্রাম মুরগির মাংস (Chicken) বরাদ্দ গোল্ডেন রিট্রিভারটির জন্য। সমস্ত টিকা দেওয়া পোষ্যের। কাজেই তা নিয়ে ভাবনার নেই। শুধু ঠান্ডা পরিবেশ আর দু’বেলা খাবার দিয়ে কেউ যেন তাঁদের জ্যাংগোকে যত্ন করে, এই কাতর আরজি জানিয়েছেন দেবাশিসবাবু, জলিদেবী।
[আরও পড়ুন: নিজেকেই ধ্বংস করছিল শরীর! কিশোরীকে বাঁচালেন বাঙুরের চিকিৎসক]
জানা গিয়েছে, ঘোষ দম্পতির দুই মেয়ে থাকেন কলকাতায়। মা-বাবার আচমকা আত্মহত্যার খবর পেয়ে তাঁরা দু’জনই ছুটে যান বাড়িতে। শনিবার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন মেয়েরা। তারপর মা-বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করে তাঁদের প্রিয় পোষ্যকে নিয়ে কলকাতায় ফিরেছেন মেয়েরা। পুলিশের অনুমতিতে এখন থেকে জ্যাংগো থাকবে তাঁদের কাছেই। পরিবারের অন্যান্য পরিজন ছাড়া পোষ্যের জন্য দেবাশিসবাবু, জলিদেবীর এই ভাবনাই এখন আলোচনার কেন্দ্রে।