ধীমান রায়, কাটোয়া: সপ্তাহ তিনেক আগে প্রেমিকের কাছে পালিয়ে এসে বিয়ে করে একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী।শ্বশুরবাড়িতেই গলায় ফাঁস দেয় নববধূ। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে জেনেই বাড়ি ফিরে একই ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হলেন স্বামী। পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার শ্রীখন্ড গ্রামে যুগলের এই আত্মহত্যার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীখন্ড গ্রামের খাড়াপুকুর পাড়ে বাড়ি রাজেশ রায়ের। মা নেই। বাবা ও দুই ভাই মিলে সংসার। বছর চারেক আগে ওই পাড়াতেই একটি মেয়ের সঙ্গে প্রথম বিয়ে হয়েছিল রাজেশের। অশান্তির কারণে বছরদুয়েক আগে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। অপরদিকে মঙ্গলকোটের পিন্ডিরা গ্রামে বাপেরবাড়ি সোনালীর। পিন্ডিরা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তারা এক ভাই ও এক বোন। সোনালীর ভাই দশম শ্রেণির ছাত্র।
সোনালীর কাকা তারক মাজি বলেন, “আমার ভাইপো দীপের মোবাইল ফোন সোনালীও ব্যবহার করত। ফেসবুক থেকে রাজেশের সঙ্গে সোনালীর পরিচয় ও প্রেম। রাজেশ বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর আমরা সোনালীর ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনসপ্তাহ আগে সোনালী নিজেই বাড়ি থেকে লুকিয়ে পালিয়ে রাজেশের কাছে চলে যায় ও বিয়ে করে। আমরা তার সঙ্গে দেখা করে এসেছিলাম। কিন্তু আর কোনও ঝামেলায় যাইনি।”
[আরও পড়ুন: অনভ্যাসের জের! আলিমুদ্দিনে প্রথমবার তেরঙ্গা উত্তোলন করতে গিয়েই বিশ্রী ভুল CPM-এর]
রাজেশ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি তোলার কাজ করতেন। তার ভাই মঙ্গল ভিনরাজ্যে কাজ করেন।মাসতিনেক আগে বাড়ি আসেন। মঙ্গল বলেন,” শনিবার রাতে দাদা একটি বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে কাজে গিয়েছিল। বাবা গোয়ালে গরুকে খেতে দিচ্ছিলেন। সেসময় বউদি নিজের ঘরে গলায় দড়ি দেয়। পরে ডাকাডাকি করে সাড়া না পাওয়া গেলে দরজা ভাঙা হয়। ভিতরে গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায় বউদিকে।” সোনালীকে উদ্ধার করে রাত প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণে খবর পেয়ে রাজেশও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছে যান। চিকিৎসকরা সোনালীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
মঙ্গলের কথায়,”বউদির মৃত্যু হয়েছে শুনে দাদা আমাকে বলে কাটোয়া নিয়ে যেতে হবে। আমি গাড়ি আনতে চললাম। এই বলে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসে।” পরিবার সূত্রে জানা যায়, শনিবার গভীর রাতেই শ্রীখন্ড হাসপাতাল থেকে ফিরে ওই একই ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন রাজেশ। পরে তার খোঁজ পড়লে ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাওয়া যায়। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে। মৃত রাজেশের বাবা মধুবাবুর দাবি, “বাড়িতে কোনও অশান্তি হয়নি। বউমা কেন এই কাজ করল বুঝতে পারছি না। তবে আমার ছেলে বউমার মৃত্যুর শোক সামলাতে না পেরেই আত্মহত্যা করেছে।” পুলিশ জানায় দু’টি মৃত্যুতেই কোনও পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের হয়নি। দু’টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।