অর্ণব আইচ: হোয়াটস অ্যাপের স্ক্রিনে স্বল্পবসনে একাধিক ছবি এন্টালির চাঁদনির। অন্তত আটজন ব্যক্তির সঙ্গে মেসেজ হোয়াটস অ্যাপে। তাতে লেখা, কখন, কোথায় দেখা করতে হবে।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুরের চাঁদ ভিলেজের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় বিদ্যুৎ সংস্থার ঠিকাদার রবীন্দ্র চৌরাসিয়া ও তাঁর ‘স্ত্রী’ তথা বান্ধবী শগুফতা ওরফে চাঁদনির দেহ। হিন্দিতে রবীন্দ্রর লেখা পাঁচ পাতা সুইসাইড নোটের সঙ্গে ১০৯ পাতা হোয়াটসঅ্যাপের চ্যাটের প্রিন্ট আউট উদ্ধারের পর ঘোরে তদন্তের প্রথম মোড়। পুলিশের দাবি, চ্যাটগুলির কয়েকটি পাতায় চাঁদনির স্বল্পবসন পরা ছবি ঘিরে ওঠে প্রশ্ন। প্রথমে পুলিশের ধারণা হয়, চাঁদনির মোবাইলে একাধিক বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ মেলায় তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুনের পর আত্মঘাতী হন রবীন্দ্র। কিন্তু যুগলের মৃত্যু তদন্তের দ্বিতীয় মোড় ঘোরে শুক্রবার সন্ধ্যার পর। ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা পুলিশকে জানান, আত্মঘাতীই হয়েছেন যুগল।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গত কয়েকমাস ধরে রবীন্দ্র ও তাঁর বান্ধবী তথা ‘স্ত্রী’র সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। রাতে চাঁদনি ঘুমিয়ে পড়ার পর রবীন্দ্র যুবতীর মোবাইলের হোয়াটস অ্যাপ মেসেজগুলি ঘাঁটেন। একাধিক পুরুষের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের চ্যাটের প্রমাণ পান রবীন্দ্র। সেই চ্যাটগুলির স্ক্রিন শট নেন তিনি। সেই বিষয়টি জানতে পারায় দু’জনের মধ্য়ে ঝগড়া হয়। এন্টালির কনভেন্ট লেনে মা পিঙ্কি বেগমের কাছে চলে যান শগুফতা ওরফে চাঁদনি। তারই মধ্য়েই ১০৯টি স্ক্রিন শটের প্রিন্ট আউট বের করেন রবীন্দ্র।
[আরও পড়ুন: কর্কট রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নয়া উদ্যোগ রাজ্যের, রোগী চিহ্নিত করবে ‘ক্যানসার হাব’]
বুধবার চাঁদনি হরিদেবপুরের ফ্ল্যাটে ফিরে আসার পর রবীন্দ্র প্রমাণ হিসাবে ওই চ্যাটের প্রিন্ট আউটগুলি দেখিয়ে সম্ভবত সবাইকে ওই সম্পর্কের কথা ফাঁস করার ভয় দেখান। তা নিয়েই বুধবার রাতে দু’জনের মধ্যে তুমুল গোলমাল হয়। তারই জেরে প্রথমে আত্মঘাতী হন চাঁদনি। বান্ধবীর ঝুলন্ত দেহ নামিয়ে এনে বিছানার উপর রাখেন রবীন্দ্র। সুইসাইড নোটে শগুফতাকেই দায়ী করেন। বহু পুরুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা জানার পরই দু’জনের সম্পর্কের চিড় ধরার কথা উল্লেখ করেন। এর পর রবীন্দ্র গলায় কাপড়ের ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন।
পুলিশ ও পরিবার জানিয়েছে, শগুফতা তথা চাঁদনিরা চার বোন। তিনি মেজ। বিবাহিত দিদি দিল্লিতে থাকেন। কলেজছাত্রী দুই বোন ও মা রয়েছেন বাড়িতে। প্রথমে এন্টালির ছাতুবাবু লেনে থাকত ওই পরিবার। পরে কনভেন্ট লেনের একটি বহুতলের পাঁচতলার ফ্ল্যাটে এসে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। সংসারের অভাব মেটাতে চাঁদনি উচ্চ মাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা না করে বিউটিশিয়ান কোর্স করেন। বাড়িতে বলেছিলেন, বিউটি পার্লারে কাজ করেন তিনি। যদিও তদন্ত করে পুলিশ কোনও বিউটি পার্লারের হদিশ পায়নি। পুলিশ জেনেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় শগুফতার ছবি দেখেই রবীন্দ্রর ভাল লাগে। দু’জনে দেখা করার পর ঘনিষ্ঠ হন। স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও চাঁদনিকে ‘বিয়ে’ করে সংসার পাতেন রবীন্দ্র। যদিও পরে ব্ল্যাকমেল, পাল্টা ব্ল্যাকমেল শুরু হয়। চাঁদনি রবীন্দ্রর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের হুমকি দিতেন। তারই শোধ তুলতে ওই প্রিন্ট আউট বের করে রবীন্দ্র পাল্টা হুমকি দেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।