ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: আতঙ্ক ছিলই। কিন্তু এবার সেই আতঙ্ক বিপদ হয়ে ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলছে। অন্তত এমনটাই বলছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। আরও আশঙ্কা, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে করোনার বিপদ ঘরে ঢুকে পড়তে পারে।
মার্চ থেকে আগস্ট রাজ্যে করোনা ভাইরাস কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। কোভিড হাসপাতালের সব বেড পূর্ণ হয়নি। তাই বাস্তব চিত্র যাচাই করতে গোটা সেপ্টেম্বর জুড়ে কলকাতা, দার্জিলিং—সহ পাঁচটি জেলার সাত হাজার মানুষের লালারস বা নাসিকা নিঃসৃত রস পরীক্ষা হয়। পরীক্ষা হয় স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে। আবার নাইসেডও নিজের মতো করে সমীক্ষা চালায়। আর সেই রিপোর্টে চোখ রেখে বাস্তবিকই ঘুম ছুটছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের কথায়, “মাত্র একমাসের ব্যবধানে পজিটিভ রেট ২.২ শতাংশ বেড়েছে। আগস্টে ছিল ৬.৯ শতাংশ। এখন ৮.৪৮ শতাংশ।” স্বাস্থ্যসচিবের কথায়, করোনা সংক্রমণ রুখতে উৎসব থেকে মার্চ পর্যন্ত টানা ছয় মাস বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
[আরও পড়ুন : রেকর্ড সংক্রমণ বাংলায়, দৈনিক করোনা আক্রান্তের নিরিখে শীর্ষে উৎসব মুখর কলকাতা]
স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্টে চোখ বুলিয়ে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধিকর্তা ডা. প্রতীপকুমার কুণ্ডু আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, “এমন অবস্থা হলে পুজোর সময় পজিটিভ হার দশ শতাংশে পৌঁছে যাবে। অসুস্থতার সংখ্যা আরও বাড়বে। আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।” স্বাস্থ্য দপ্তর উত্তরের দার্জিলিং, পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং কলকাতার বিভিন্ন অংশের বাসিন্দাদের থেকে যে চিত্র পেয়েছে তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই মনে করেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম।
তথ্য বলছে, কলকাতা মৃত্যুর শীর্ষে। মোট মৃতের সংখ্যা ১,৮৭৭। আবার সংক্রমণের শীর্ষে উত্তর ২৪ পরগনা। সংক্রমিত ৬,৪৪৪ জন। মাত্র একদিনে সংক্রমিত বা পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে ১৫৯ জন। যাঁদের হাসপাতালে ভরতি করতে হয়েছে। হাওড়ায় সংক্রমিত পাওয়া গিয়েছে ১,৫২৪ জন। জেলায় মৃত্যু হয়েছে মোট ৬২৭ জনের। পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৭৩ এবং ১৫৬ জনের। পজিটিভের হার হাজারের উপর। তবে সবচেয়ে কম সংক্রমণ কালিম্পঙ জেলায়, ১৬২ জন। তবে ঘটনা হল, সব জেলায় করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। আর এই ঘটনায় চিন্তিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ডা. সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, “দুর্গাপুজোর আনন্দ করতে গিয়ে সংক্রমণকে বাড়িতে ডেকে আনলে কে বাঁচাবে?”