ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: শত্রু আগ্রাসী। রণক্ষেত্রও প্রস্তুত। দুর্ধর্ষ দুশমনকে নিকেশ করতে অপেক্ষা শুধু একটি মোক্ষম মারণাস্ত্রের। কোভিডের (COVID-19) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে সব উপকরণ মজুত করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। আপাতত ভ্যাকসিনের প্রতীক্ষায় প্রহর গোনা চলছে। আইসিএমআর থেকে ভ্যাকসিন (Vaccine) এলেই শুরু হবে করোনাবধের যুদ্ধ বা টিকাকরণ।
সেই প্রক্রিয়া চালানোর জন্য গত তিন সপ্তাহ ধরে আইসিএমআরের তদারকিতে একের পর সামগ্রী মজুত করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। দফায়-দফায় শুরু হয়েছে টিকাদানের প্রশিক্ষণ। যে যুদ্ধে শামিল প্রায় ২০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী। এঁদের সর্বক্ষণ গাইড করবেন প্রায় ৫ হাজার চিকিৎসক। বস্তুত, নিঃশব্দেই শুরু হয়েছে এই মহাযুদ্ধের মহড়া। কীভাবে?
[আরও পড়ুন : রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পেরল ৫ লক্ষ, তবে দৈনিক সংক্রমণ, মৃত্যুর হারে সামান্য স্বস্তি]
দপ্তরের খবর, আগামী সপ্তাহের গোড়ায় আকাশপথে রাজ্যে আসছে ২৯টি ওয়াকিং কুলার বা স্টেশন। শংকর ধাতব পাতে তৈরি এই ওয়াকিং স্টেশনগুলিতে করোনার ভ্যাকসিন রাখা হবে। এগুলির ভিতরে তাপমাত্রা ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। কলকাতা-সহ রাজ্যের ৩৯টি কেন্দ্রে ভ্যাকসিন সংরক্ষণ (Preserved) করা হবে। সেখান থেকে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় তা পাঠানো হবে রাজ্যের কোণে কোণে, প্রত্যন্ত গাঁ-গঞ্জের স্বাস্থ্যকন্দ্রে। আকাশপথে দেশের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ভ্যাকসিন নিয়ে যাওয়ার জন্য দিল্লি ও হায়দরাবাদ বিমানবন্দরে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কোভিড ভ্যাকসিন প্রস্তুতি নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী সংবাদ প্রতিদিন—কে জানিয়েছেন, “রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। সংরক্ষণ থেকে টিকাকরণ, সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু ভ্যাকসিন আসার অপেক্ষা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রয়েছে। ভ্যাকসিন এলেই কাজ শুরু হবে।” স্বাস্থ্য অধিকর্তার বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। আর এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, “২-৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ সম্ভব, এমন তিনটি দেশীয় ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে বলে দিল্লি থেকে ইঙ্গিত মিলেছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
[আরও পড়ুন : ‘গর্ভবতী’ নন, গৃহবধূর পেটে আসলে বড়সড় টিউমার! পরীক্ষা করে চমকে উঠলেন ডাক্তাররাই]
করোনা ভ্যাকসিন টিকাকরণের সমস্ত প্রক্রিয়া ডিজিটালি নিয়ন্ত্রিত হবে। এই ব্যবস্থার পোশাকি নাম ‘ইলেক্ট্রনিক ভ্যাকসিন ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক’ (ইভিআইএন)। অর্থাৎ নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড ছাড়া কোনওভাবেই ওয়াকিং স্টেশনে ঢোকা যাবে না। সমস্ত ব্যবস্থা স্বাস্থ্যভবন এবং আইসিএমআর যৌথভাবে নজরদারি করবে। কতগুলি ভ্যাকসিন অ্যাম্পুল বাইরে যাচ্ছে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানতে পারবেন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন আধিকারিক। একেকটি ওয়াকিং স্টেশন প্রায় ৪ হাজার লিটার আয়তনের। এবং এক লিটার আয়তনে প্রায় ৪০০ ডোজ ভ্যাকসিন নিরাপদে রাখা যাবে।
এটা তো গেল একটা দিক। আবার আকাশপথে ভ্যাকসিন রাজ্যে আসার পর কোল্ড চেন সিস্টেমে দ্রুত পৌঁছে যাবে গন্তব্যকেন্দ্রে। সূত্রের খবর, উত্তর কলকাতার বাগবাজারকে কেন্দ্র করে পার্ক স্ট্রিট, চেতলা, ওয়াটগঞ্জের মতো জায়গায় অন্তত আটটি কেন্দ্রে কঠোর নজরদারিতে ভ্যাকসিন রাখা হবে। একেকটি ওয়াকিং স্টেশনে অন্তত চারজন প্রবেশ করতে পারবেন। বর্ধমান, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ—সহ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ওয়াকিং স্টেশন বা কুলার বসানোর ব্যবস্থা প্রায় চূড়ান্ত। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, দেরিতে শুরু হলেও রাজ্য এতটাই নিখুঁতভাবে প্রস্তুতি সেরেছে যে, কেন্দ্র প্রশংসা করেছে রাজ্যের।