shono
Advertisement

গরু পাচার কাণ্ডে বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমারকে গ্রেপ্তার করল সিবিআই

এই ঘটনার পর রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
Posted: 08:23 PM Nov 17, 2020Updated: 08:44 PM Nov 17, 2020

সুব্রত বিশ্বাস: রাজ্যে গরু পাচার কাণ্ডে এবার গ্রেপ্তার করা হল বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমারকে। মঙ্গলবার এই কমান্ডান্ট সতীশ কুমারকে সাত ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআইয়ের (CBI) তদন্তকারী আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, তথ্য গোপন ও অসহযোগিতার কারণে এদিন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার তাঁকে আদালতে তোলা হবে।

Advertisement

এই ঘটনার পর রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের পক্ষে অধীররঞ্জন চোধুরি অভিযোগ করেন, মুর্শিদাবাদে গরু পাচারের টাকা তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতারা পান, এসপি থেকে ডিএম, ওসিও এই টাকায় সমৃদ্ধ। পালটা অভিযোগে তৃণমূলের সৌগত রায় বলেন, বিএসএফ কেন্দ্রের এজেন্সি। তাদের নিয়ন্ত্রণের প্রতি রাজ্যের কোনও ভূমিকা নেই। বিজেপির সায়ন্তন বসু কংগ্রেসের সুরে একইভাবে গরু পাচারে তৃণমূলকে দায়ী করে প্রকৃত তদন্ত দাবি করেছেন।

[আরও পড়ুন: অমিত শাহর মন্ত্রেই কাজ, বাম শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে বিজেপিতে যোগ দাপুটে CPM কাউন্সিলরের

গরু পাচার নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে সক্রিয় সিবিআই। কলকাতায় অভিযুক্ত বিএসএফ কর্তার সল্টলেকের বাড়িতে তল্লাশির সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরে মালদহ ও মুর্শিদাবাদের ষোলো জায়গায় একযোগে তল্লাশি চালিয়ে বহু নথি সংগ্রহ করেছিল তদন্তকারী এই সংস্থাটি। নভেম্বরের প্রথমে কলকাতায় শুল্ক দপ্তরের আধিকারিক-সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। বিএসএফ, শুল্ক বিভাগের এক শ্রেণির কর্তাদের যৌথ উদ্যোগে এই গরু পাচারে সক্রিয় বলে তারা জানতে পারেন।

স্বাস্থ্যবান গরুকে বাছুর হিসেবে দেখানো হত। এজন্য পকেটে যেত টাকা। গরু প্রতি হাজার দুয়েক পেতেন বিএসএফের এক শ্রেণির কর্তারা। ৫০০ শুল্ক বিভাগের ধান্দাবাজ কর্তাদের পকেটে। গরু পাচার কাণ্ডের তদন্তে সিবিআই এই তথ্য পেয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গরুর এই হাল ও দর-দাম চলত মুর্শিদাবাদের শুল্ক দপ্তরের এক শ্রেণির কর্তাদের যোগসাজশে। এই বেআইনি নিলামকে কেন্দ্র করে বাছুর দেখিয়ে কম দামে গরু কিনে নিতে কুখ্যাত পাচারকারীদের কিং পিন এনামুল, আনারুল ও মুস্তাফারা বলে সিবিআই সূত্রে খবর। কাদের মদতে এই পাচারকারীরা এত সক্রিয় তা দেখতে সিবিআই সেপ্টেম্বর মাসে মালদহ ও মুর্শিদাবাদের ষোল জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে বহু তথ্য সংগ্রহ করে। তখনই জানতে পারে বিএসএফ কর্তা সতীশ কুমারের যোগসাজশ ও কোটি কোটি টাকা নেওয়ার কথা। তদন্তকারী দল সতীশ কুমারের সল্টলেকের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথি আটক করে। তাঁকে পাচারের মূল অভিযুক্ত করে সে সময় এফআইআর দায়ের করে সিবিআই।

সূত্রের খবর, ২০১৫-র শেষ দিক থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মালদহের ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ডান্ট ছিলেন এই সতীশ কুমার। তাঁর অধীনে ছিল চার কোম্পানি। যার মধ্যে মালদহ ও মুর্শিদাবাদ রয়েছে। তদন্তকারীরা দেখেছেন, ওই সময়ে ২০,০০০ বেশি গরু আটক করে ছিল বিএসএফ। এত গরু আটক হলেও একজন পাচারকারী বা কোনও গাড়ি গ্রেপ্তার ও আটক হয়নি। এই সন্দেহে তদন্তের একাধিক পথ খোলা রেখে তদন্ত চালায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। বিএসএফ ছাড়া পাচারের এত বেশি সক্রিয়তা থাকতে পারে না। এই সন্দেহে সতীশ কুমারকে অভিযুক্ত করে তাঁর সল্টলেকের বাড়িতে তল্লাশি চালান তাঁরা। পরে সতীশ কুমারের আরও একটি বাড়ি মানিকতলায় এক ব্যবসায়ীর বাড়ি ও কলকাতার আরও তিনটি জায়গায় তল্লাশি চালায় সিবিআই।

[আরও পড়ুন: বঙ্গ নেতৃত্বে ভরসা নয়! একুশের লড়াইয়ে বাংলায় বিজেপির দায়িত্বে টিম অমিত শাহ]

পাচারে অভিযুক্ত এনামুল হককে দিল্লি থেকে দু’সপ্তাহ আগে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। শর্তসাপেক্ষ জামিন নিয়ে দু’দিন বাদে কলকাতায় সিবিআই কর্তাদের মুখোমুখি হন এনামুল। তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও যথোপযুক্ত আয়কর দিয়ে ব্যবসা চালানোর কথা জানানোর পাশাপাশি কোভিড আক্রান্তের কথা জানান। চিকিৎসকদের পরীক্ষার পর তাঁকে দু’সপ্তাহ বাদে ফের ডাকা হয়েছে। এরমধ্যে মঙ্গলবার বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমারকে নিজাম প্যালেসে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় সিবিআই। সাত ঘণ্টার জেরায় তদন্তকারীরা জানতে চান, কোন কোন প্রভাবশালী এই গরু পাচারে যুক্ত, কাদের কাছে এই কাজের টাকা যেত এবং কার মাধ্যমে তা জানতে চান। বারবার প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া ও তদন্তে অসহযোগিতার কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। বুধবার আদালতে হাজির করা হবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement