রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) একলা চলার ঘোষণার পরই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়ল সিপিএম। তৃণমূলের সঙ্গে জোটে যিনি কট্টর বিরোধিতা করেছিলেন সেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বহরমপুরে সিপিএম ও কংগ্রেসের জোট বৈঠক। অধীরের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সেলিম জানিয়েছেন, বহরমপুরে তাঁর পার্টির জেলা কমিটির বৈঠক রয়েছে। যা পূর্বঘোষিত ছিল। যেহেতু অধীর চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) সেখানে আছেন, তাই জোট ও আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হবে।
সম্প্রতি কংগ্রেসের ন্যায় যাত্রার (Bharat Nyay Yatra) সময় রাহুল গান্ধীর পাশে দাঁড়িয়ে মহম্মদ সেলিম-সুজন চক্রবর্তীদের ছবি তোলার হুড়োহুড়ি দেখা গিয়েছে মুর্শিদাবাদে। তখন নদিয়ার সভামঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, কংগ্রেস সিপিএমের (CPIM) সঙ্গেই থাক। তৃণমূল ৪২ আসনে একাই লড়বে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই একলা চলার ঘোষণার পরই জোট করতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন সেলিম-অধীররা। সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের সেই জোট বৈঠক বৃহস্পতিবার বিকেলে হতে চলেছে বহরমপুর শহরের টাউন ক্লাবে।
[আরও পড়ুন: আচমকা কলকাতায় প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, কারণ ঘিরে জল্পনা]
দলীয় কর্মসূচিতে সিপিএম (CPIM) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বহরমপুরে যাচ্ছেন। সেখানেই আছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি। সেলিমের বক্তব্য, ‘‘আমরা বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী শক্তিকে এককাট্টা করতে চাইছি। তাই বামফ্রন্টের বাইরের দলগুলি যেমন কংগ্রেস ও আইএসএফের সঙ্গে কথা বলব।’’ এদিকে, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা নিয়ে বামফ্রন্টের মধ্যে আপত্তি রয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লকের। ইতিমধ্যে সেই আপত্তির কথা প্রকাশ্যে জানিয়েও দিয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়ের। নরেনবাবু তাঁর দলের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, কেরল, ত্রিপুরায় কংগ্রেসের (Congress) বিরুদ্ধে বামপন্থীরা লড়েছেন। আর বঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে বামপন্থীদের জোট মানুষ গ্রহণ করেনি। মানুষ যে এটা মানতে পারছে না। বঙ্গে বাম-কংগ্রেসের ‘ব্যর্থ’ জোটফল থেকে রাজ্যে পরবর্তী নির্বাচনে শিক্ষা নিয়ে এগোতে হবে। কিন্তু ফরওয়ার্ড ব্লকের এই মতামত অবশ্য নিতে চায় না সিপিএম। এ রাজ্যে আলিমুদ্দিনের কংগ্রেস প্রীতি থেকে সেটা স্পষ্ট। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোটে কার্যত শিলমোহর পড়তে চলেছে বৃহস্পতিবার।
[আরও পড়ুন: উচ্চমাধ্যমিকেও ইউনিক সিরিয়াল নম্বর, প্রশ্ন ফাঁস রুখতে কড়া সংসদ]
কংগ্রেসের ও সিপিএমের এই জোট বৈঠক নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। যেহেতু একুশের বিধানসভা ভোটে সিপিএম ও কংগ্রেস শূন্য পেয়েছিল। তাই এই বৈঠককে দুই গোল্লার বৈঠক বলে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘কারা বৈঠকে বসছেন, শূন্য এবং শূন্য। জোড়া গোল্লার বৈঠক। অধীর চৌধুরীর পার্টি বিধানসভায় শূন্য। সেলিমের পার্টিও শূন্য। শূন্যর সঙ্গে শূন্য যোগ হলে তো শূন্যই হয়।’’ কুণালের বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেস আর সিপিএম হচ্ছে বিজেপির বি আর সি টিম। এ রাজ্যে কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী ও সিপিএমের সেলিমদের একটাই খেলা, বিজেপি বিরোধী ভোটকে বিভ্রান্ত করো, ভোট ভাগ করো তৃণমূলকে হারিয়ে বিজেপিকে লাভ পাইয়ে দাও। মানুষ এটা বুঝে গিয়েছে। বাংলার মানুষ ধরে নিয়েছে বিজেপিকে হারাতে গেলে ‘ভোট ফর তৃণমূল’, ‘ভোট ফর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’। সিপিএম বা কংগ্রেসকে একটা ভোট কেউ দিলে তাতে বিজেপির হাত শক্ত হবে। মানুষ সেটা করবে না।’’