বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: পুরনিগমের (WB Civic Polls 2022) ফলাফল শেষে ‘বিরোধীদের হাতে রইল পেন্সিল’। সেই পেন্সিল হাতে চলছে সংখ্যাতত্ত্বের কাটাছেঁড়া। সবুজ ঝড়ের মুখে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় বা তৃতীয় কে। গেরুয়া নাকি লাল শিবির। ওয়ার্ড পাওয়ার নিরিখে এগিয়ে গেরুয়া। আবার প্রাপ্ত ভোটের শতাংশই হিসেবে পদ্ম শিবিরকে পেছনে ফেলেছে বামেরা। যদিও হিসেব-নিকেশ বা রাজ্য রাজনীতিতে বিরোধী অভিমুখ পরিবর্তনের প্রশ্নকে গুরুত্ব দিতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি বাম ও কংগ্রেসকে ‘জগাই’, ‘মাধাই’ ও ‘গোধাই’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। ভোট নয় প্রহসন হয়েছে বলে অভিযোগ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর। এই ফলাফল মানুষের প্রকৃত রায়ের চিত্র নয় বলে অভিযোগ সিপিএম নেতা রবীন দেবের।
রাজ্যের চার পুরসভা আসানসোল, বিধাননগর, চন্দননগর ও শিলিগুড়ির ভোটে ঘাসফুল ঝড়। বিরোধীদের বহু পিছনে ফেলে চারটি পুরসভাতেই ক্ষমতা দখল করতে চলেছে তৃণমূল। এরই মধ্যে চন্দননগর ও বিধাননগর পুরভোটে বিজেপিকে পিছনে ফেলে ভোট শতাংশের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল বামেরা। শিলিগুড়ি ও আসানসোলে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও তাদের থেকে খুব বেশি দূরে নেই লাল শিবির। এতদিন রাজ্য রাজনীতির বিরোধী রাজনীতির ফোকাস ছিল বিজেপির দিকে। গত বিধানসভা নির্বাচনে বাম বা কংগ্রেস কোনও আসন পায়নি। কিন্তু বিজেপি ৭৭ আসন পেয়েছিল। তারপর থেকে যে ভোট হয়েছে, তাতে বিরোধী পরিসরের ক্ষেত্রে বিজেপির ক্রমশ পিছু হঠার চিত্র ফুটে উঠছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, বিরোধী রাজনীতির ভরকেন্দ্র কি ফের বামদিকে যাচ্ছে। সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ফলাফল প্রকাশের পরই আলিমুদ্দিনের পেন্সিল হাতে বসে পড়েন কমরেডকুলের নেতারা।
[আরও পড়ুন: বিধায়কের নাম করে আর্থিক প্রতারণা, আপ্ত সহায়ককে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন সোহম]
তাঁদের প্রাথমিক অনুমান, বিজেপিতে চলে যাওয়া জনসমর্থনের কিছু অংশ ফিরছে। আবার একটা অংশ তৃণমূলের দিকে ঝুঁকছে। বলার মতো জনসমর্থন ফিরতে আরও সময় লাগবে বলেই মনে করছে আলিমুদ্দিন। সিপিএম নেতা রবীন দেবের অভিযোগ, বিধাননগর ও আসানসোলে ভোট হয়নি। মানুষের রায় লুঠ করা হয়েছে। তাই এই দুই পুরসভায় ভোট শতাংশ খুব বেশি বাড়েনি। চন্দননগরের শিলিগুড়িতে কিছুটা শান্তিপূর্ণ ভোট হওয়ায় প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ বামেদের পক্ষে ইতিবাচক হয়েছে। সঠিকভাবে ভোট হলে বামেদের প্রাপ্ত ভোট আরো বাড়ত বলে দাবি তাঁর। যদিও হিসাব-নিকেশের মধ্যে যেতে নারাজ প্রদেশ কংগ্রেস। দলের সভাপতি অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, “যখন ভোটই হয়নি তখন হিসেব-নিকেশ করে লাভ নেই। আমাদের যতটুকু শক্তি ছিল তাই দিয়েই লড়াই করেছি।” মানুষের অধিকারকে এই সরকার সুরক্ষিত করবে এমন আশা করেন না বলে জানান অধীর চৌধুরী।
আসানসোল পুরসভা অঞ্চলে একটি বিধানসভা আসন দখলে রয়েছে বিজেপির। কিন্তু পুরভোটে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ১৫.৯০ শতাংশ। এক্ষেত্রে তারা দ্বিতীয় স্থানে খুব কাছেই রয়েছে বামফ্রন্ট। তাদের প্রাপ্ত ভোট প্রায় ১২ শতাংশ। ২ শতাংশ ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থানে কংগ্রেস। আবার চন্দননগরে উত্থান হয়েছে বামেদের। সেখানে একটি ওয়ার্ড দখলে রাখলেও বামেদের প্রাপ্ত ভোটের হার ২৭ শতাংশের বেশি। বিধাননগরে প্রায় ১১ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বামেরা। শিলিগুড়িতে বামেরা তৃতীয়স্থানে থাকলেও প্রাপ্ত ভোট শতাংশে গেরুয়া শিবিরের কাছাকাছি রয়েছে। যদিও চারটি পুরনিগমেই চতুর্থস্থানে শেষ করে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে কংগ্রেসকে। এই ফলাফল প্রকাশের পর এই রাজ্যের বিরোধী অভিমুখ পরিবর্তন নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।