ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: এবার বন্যাবিধ্বস্ত কেরলবাসীর সাহায্যে এগিয়ে এলেন রাজ্যের সিপিএম বিধায়করা। বিপর্যস্ত কেরলবাসীকে আর্থিক সহায়তা দিতে ত্রাণ তহবিলে যাবে প্রত্যেক দলীয় বিধায়কের এক মাসের বেতন। রবিবার একথা জানিয়েছেন বিধানসভায় বামেদের পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। এর আগেই কেরলের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য। বণ্যাত্রাণে দশ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইট করে ইতিমধ্যেই কেরলবাসীর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি। এরপরেই রাজ্যের বিরোধীদের তরফে এল সাহায্যের আশ্বাস। সুজনবাবু নিজে বন্যার্তদের আর্থিক সাহায্যের কথা বলেন। উল্লেখ্য, গত ১০০ বছরে এহেন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়েনি ‘ঈশ্বরের আপন দেশ’ কেরল। এখনও পর্যন্ত বিধ্বংসী বন্যা ৩৬০ জনের প্রাণ কেড়েছে। যদিও বেসরকারি মতে সংখ্যাটা হাজার ছাড়িয়েছে। গৃহহীন প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ৷ জারি রয়েছে উদ্ধারকাজ৷ রবিবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ৫৮ হাজার মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে৷ হাজারের বেশি বাসিন্দার কোনও খোঁজ নেই। কোঝিকোড়ে হড়পা বানে তলিয়ে গিয়েছেন নদিয়ার দিলওয়ার মল্লিক। নির্মাণ শ্রমিক হিসাবেই কেরলে কাজে গিয়েছিলেন ওই যুবক।
[ত্রিশূলে বিদ্ধ ‘কাঁকড়া’, দুর্গাপুজোর থিম ভাবনায় এবার ডাক্তাররা]
সপ্তাহখানেক ধরেই অঝোর বৃষ্টিতে ভাসছে কেরল৷ ইদুক্কি বাঁধ থেকে জল ছাড়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। উত্তর মালাপ্পুরম, কান্নুর, কোট্টায়াম ওয়ানাদ, কোঝিকোড়ের মতো একাধিক এলাকার বন্যা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ভয়াবহ পরিস্থিতি রুখতে ১১টি জেলায় সতর্কতা জারি হয়েছে। আবার একটানা বৃষ্টিতে বাঁধগুলির অবস্থাও ভাল নয়। ইদুক্কি, কোল্লাম-সহ বেশ কয়েকটি জেলার জনজীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। নিচু এলাকায় একাধিক মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। বিপুল পরিমাণ ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কেরলের ১৪টি জেলা থেকে লাল সতর্কতা তুলে নিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর৷ আগামী ২৪ ঘণ্টায় কেরল জুড়ে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলেই মত আবহাওয়াবিদদের৷ বন্যায় জল জমে গিয়েছিল কোচি বিমানবন্দরের রানওয়েতেও৷ তার জেরে বন্ধ ছিল বিমানবন্দর৷ তবে নতুন করে ভারী বৃষ্টি শুরু না হলে সোমবার থেকে কোচি বিমানবন্দরে শুরু হবে বিমান চলাচল৷ দক্ষিণের এই রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র৷ উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে সেনা৷ রবিবার সকালে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর আরও তিনটি দল কেরলে পৌঁছায়৷ শনিবার বন্যাবিধ্বস্ত কেরলে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ বায়ুসেনার পক্ষ থেকে দুর্গতদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে খাবার ও পানীয় জল৷ তার আগে শনিবার হেলিকপ্টারে করে বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি৷ কেন্দ্রের তরফে বন্যা দুর্গতদের জন্য পাঁচশো কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷
[কেরলের পাশে বাংলা, ত্রাণ তহবিলে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর]
দক্ষিণ ভারতের সমুদ্র উপকূলবর্তী রাজ্য কেরলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়৷ বেশ কয়েকটি হিন্দি ছবির শুটিংও হয়েছে কেরলে৷ স্বাভাবিক কারণে বছরভর পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে৷ পর্যটকের সিংহভাগই আবার বাঙালি৷ শুধু বেড়াতেই নয়, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ার মতো জেলা থেকে কাজের সন্ধানে কেরলে যান বহু যুবক৷ সেই কেরলেই এখন ভয়াবহ আকার নিয়েছে বন্যা৷ উদ্ধার কাজে নেমেছে সেনা ও বিপর্যয় মোকাবিলা দল৷ মল্লিক৷ ভিন রাজ্যে বাঙালিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকারও৷ এ রাজ্যের বাসিন্দাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার আরজি জানিয়ে রেলকে চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যসচিব মলয় দে৷ সেই আবেদন সাড়া দিয়ে শুধুমাত্র বাঙালিদের জন্য কেরলের এর্নাকুলাম থেকে সাঁতরাগাছি পর্যন্ত দুটি বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল৷ রবিবার সন্ধ্যা ছ’টায় ও রাত ন’টায় ট্রেন দুটি ছাড়বে এর্নাকুলাম থেকে৷ রাজ্যের বাসিন্দাদের মধ্যে যাঁরা কেরলে আটকে পড়েছেন, তাঁরা চাইলে ওই ট্রেনে ফিরে আসতে পারবেন৷ মুখ্যমন্ত্রী টুইট করে দশ কোটি টাকা সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। ইতিমধ্যে কেরলের প্রতি সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্র এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি৷ ৫০০ কোটি টাকার ত্রাণ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার৷ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে একাধিক রাজ্যও৷
The post বন্যাবিধ্বস্ত কেরলের পাশে বঙ্গ সিপিএম, একমাসের বেতন দান বিধায়কদের appeared first on Sangbad Pratidin.