shono
Advertisement

‘জনতার রান্নাঘর’-এ ঢুকে খুন্তি নাড়লেন বিমান, অবাক হয়ে দেখলেন সূর্যকান্তরা

লকডাউন শুরু হতেই সিপিএমের ছাত্র-যুবরা এই 'জনতার রান্নাঘর' তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। The post ‘জনতার রান্নাঘর’-এ ঢুকে খুন্তি নাড়লেন বিমান, অবাক হয়ে দেখলেন সূর্যকান্তরা appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:42 PM Jun 07, 2020Updated: 09:42 PM Jun 07, 2020

বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: পরনে দুধ সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি। কাধে লাল তোয়ালে। মুখে লাল মাস্ক। তা অবশ্য নাকের নিচে। কখনও তা টেনে নামাচ্ছেন মুখের নিচে। আধ সেদ্ধ খাওয়ার চেখে দেখতে হবে যে। তেল, নুন, মশলা সব ঠিক আছে কিনা নিজেই যাচাই করে নিচ্ছেন। পাছে লোকে খেয়ে গালমন্দ করে। তাই হাতা-খুন্তি হাতে রান্নাঘরে সব দেখে শুনে নিচ্ছেন আশির দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া বিমান বসু। পাশে দাঁড়িয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। স্থান দক্ষিণ কলকাতার কসবা। ছাত্র-যুবদের তৈরি ‘জনতার রান্নাঘর’।

Advertisement

লকডাউন শুরু হতেই সিপিএমের ছাত্র-যুবরা সিদ্ধান্ত নেয় এলাকায় এলাকায় গরিব দুস্থদের হাতে অন্তত একবেলা রান্না করা খাওয়ার পৌঁছে দেওয়া। যেমন সিদ্ধান্ত তেমন কাজ। শুরু হল রান্না করা খাবার বিতরণ। মেনুতে কোনওদিন ভাত, ডাল, ডিমের ঝোল। আবার কোনও দিন ভাত, ডাল তরকারি। কেউ যদি একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল তো কথাই নেই। সেদিন ফ্রায়েড রাইসের সঙ্গে মুরগির মাংসের ঝোল। রান্না শেষে প্যাকেট করার পাল্লা। জনা কুড়ি সদস্য হাত লাগাচ্ছে রান্না করা খাওয়ার আলাদা আলাদা প্যাকেট করার কাজে। সব শেষে ভ্যানে তুলে ছুটছে এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায়। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ছশো মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে সেই খাওয়ার।

[আরও পড়ুন: মহামারী আইনের ফাঁদে আটকে ভোটের ভবিষ্যৎ, কবে হবে কলকাতার পুর-নির্বাচন?]

এই কর্মসূচির কথা আলিমুদ্দিনের কর্তাদের কানে পৌঁছতে বেশি সময় লাগেনি। প্রথমটা শুনে কিছুটা চমকিৎ হন বিমান-সূর্যরা। এতো মানুষের খাওয়ার জোগান দেওয়া তো চাট্টিখানি কথা নয়। এত অর্থ আসছে কোথা থেকে। ভেবেই কুল পাচ্ছিলেন না তাঁরা। তাই তড়িঘড়ি রান্নাঘর ও তার ব্যবস্থাপনা দেখতে পৌঁছে যান কসবায়। ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলোর উৎসাহ দেখে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড় বিমানদের। পার্টির এরিয়া কমিটির সম্পাদককে দেখে চোখ গোল গোল করে জিজ্ঞাসা করে ফেলেন তিনি। “করেছ কী তোমরা। কীভাবে এতবড় আয়োজন করলে কী করে। কতদিন চালাবে এইভাবে। অর্থ আসবে কোথা থেকে।” সদুত্তরে ছাত্ররা জানিয়ে দেয় “আমরা ঠিক জোগাড় করে নেব। বাড়ি বাড়ি অর্থ সংগ্রহের কাজ চলছে। আবার অনেকেই নিজেরা অর্থ বা চাল, ডাল দিয়ে যাচ্ছেন।”

সব শুনে নিশ্চিন্ত হওয়ার পর নিজেই হাতে খুন্তি তুলে নেন বিমানবাবু। কড়াইয়ে তখন ফুটছিল ডিমের ঝোল। নিজেই নেড়েচেড়ে দিলেন। আলু সেদ্ধ হয়েছে কিনা দেখে নেন। এরপর স্বাদ খাওয়ার উপযুক্ত কিনা তাও চেখে দেখে নেন। এরপরেই বাড়ির বড়কর্তার মতো বেশ কিছু পরামর্শ দিয়ে ফেলেন। বলেন, “আমি যখন বাড়ি ছেড়েছিলাম বাড়ি ভাড়া নিয়ে একাই থাকতাম। রান্না করতে হত আমাকেই। তাই রান্না করার কিছু অভিজ্ঞতা আমার আছে। শুধু তেল-মশলা দিয়ে রান্না করলেই হবে না। অসুস্থ বয়স্ক আর বাচ্চাদের কথা মাথায় রেখে মেনু ঠিক করতে হবে। যাতে সকলে খেতে পারে।” সব দেখেশুনে কিছুটা অবাকই হন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সূর্যকান্ত। তাঁর বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না যে এই কাজটাকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই পরিকল্পনা করবেন বিমানদা। দু’জনে আলিমুদ্দিনে ফিরেই সূর্যকান্তর সঙ্গে কার্যত বৈঠক সেরে ফেলেন তিনি। নির্দেশ দেন, এই রান্নাঘর চালিয়ে যেতেই হবে। এটাই এখন মুখ্য কর্মসূচি। তখনই সিদ্ধান্ত হয়ে গেল যতদিন সম্ভব চালানো হবে এই রান্নাঘর। পার্টি তহবিল থেকে সাহায্য করা হবে। ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’ বন্ধ না আর।

[আরও পড়ুন: ‘কেন্দ্রের টাকা নয়ছয় করছে রাজ্য’, আমফানের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে রাজ্যকে তোপ দিলীপের]

The post ‘জনতার রান্নাঘর’-এ ঢুকে খুন্তি নাড়লেন বিমান, অবাক হয়ে দেখলেন সূর্যকান্তরা appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement