রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: চব্বিশের লোকসভা ভোটেও রাজ্যে বামেরা শূন্যের গেরো কাটাতে পারেনি। ভোট শতাংশও কার্যত একই জায়গায় রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে সামনে এনেও দাগ কাটতে ব্যর্থ পার্টি। স্বাভাবিক ভাবেই খারাপ ফলাফলে হতাশা নেমে এসেছে সিপিএম কর্মীদের মধ্যেও। লাগাতার ব্যর্থতার প্রভাব দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী অর্থাৎ তরুণ প্রজন্মের উপর না পড়ে তা নিয়ে সতর্ক সিপিএম। আর তাই শনিবার মৌলালি যুব কেন্দ্রে এসএফআইয়ের (SFI) মুখপত্র ছাত্র সংগ্রাম পত্রিকার প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় দলের ছাত্র নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মহম্মদ সেলিম ও সুজন চক্রবর্তীদের বার্তা, লোকসভা ভোটের ফলাফলে হতাশ হলে চলবে না। মানুষকে জোটবদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি, বাংলায় দলের ফল যে অস্বস্তিজনক তা স্বীকার করে নেন সিপিএম নেতৃত্ব।
এদিন ছাত্র সংগ্রামের ৫৯তম প্রতিষ্ঠা দিবস অনুষ্ঠানে অনিল বিশ্বাস স্মারক বক্তৃতার বিষয় ছিল, আজকের ভারত, আগামী লড়াই। যেখানে বক্তা ছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। মঞ্চে ছিলেন দলের তরুণ প্রজন্মের তিন নেতা ও লোকসভা ভোটের প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য, দিপ্সীতা ধর ও প্রতীক-উর রহমান। প্রসঙ্গত, এবার লোকসভা ভোটে সেলিম ও সুজন-সহ সকলেই হেরেছেন। সৃজন, দিপ্সীতা, প্রতীক-উরদের আবার জমানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ফ্লোরিডায় ভারত-কানাডার প্রতিপক্ষ হতে পারে বৃষ্টি, বল কি আদৌ গড়াবে?]
এদিন তাই দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বারবার সেলিম-সুজনরা (Sujan Chakraborty) বার্তা দিয়েছেন বামেদের খারাপ ফলে হতাশ না হওয়ার। সেলিম বলেন, "ছাত্রদের লম্বা লড়াই করতে হবে। ভোট হল, ফলাফল হল, সেলিম-সুজনদের জেতার কথা ছিল, হেরে গেল। বামপন্থায় হতাশার কোনও জায়গা নেই।" তিনি এদিন স্বীকার করে নেন, "তরুণ বামপন্থীদের উপর আশা করা হয়েছিল। সৃজন-দিপ্সীতাদের নিয়ে আশা করা হয়েছিল।" বাস্তব যত কঠিন হোক, লড়াই-আন্দোলন চলবে বলে সেলিম বলেন। সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের দাবি, দেশের সরকার এনডিএ, বিজেপি বা মোদির নয়, পরস্পর বৈপরীত্যের মুখোমুখি হবে যে কোনও সময়ে। সুজন চক্রবর্তীর কথায়, "এই ফল সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছে চারশো পার করার স্লোগান দেওয়া বিজেপিকে। সরকার গড়লেও তাদের ধাক্কা দেওয়া গিয়েছে। এই ফল আমাদের হতাশ করেনি।" কিন্তু বামপন্থীদের অস্বস্তিতে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলের ফল। সুজন চক্রবর্তী স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘‘বিজেপিকে (BJP) হারানো নিশ্চিত করতে গিয়ে যে কোনও কারণে বামেদের উপর ভরসা করতে পারেনি মানুষ। তাই তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে। আমরা ভোট পেলে ভাল লাগত।"
[আরও পড়ুন: একটুর জন্য হল না অঘটন, দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঁপিয়ে দিয়েও হৃদয় ভাঙল নেপালের]
তাঁর কথায়, "মানুষকে জোটবদ্ধ করতে হবে। এটা হতাশার সময় নয়, দুর্বলতা কাটানোর সময়। যারা আমাদের সমালোচনা করবে তাঁদের কথাও শুনতে হবে। তরুণ প্রজন্মই যে আগামী দিনে সিপিএম পার্টির লড়াইয়ের অগ্রভাগে থাকবে সেকথা স্পষ্ট করে দিয়ে সুজনের বক্তব্য, এবার তরুণ প্রজন্মই লডাই করেছে। পরের টিমকে নিয়ে আসতে হবে। বৃত্তটাকে বড় করতে হবে। এদিন সভায় বক্তব্য রাখেন এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি ও সম্পাদক যথাক্রমে প্রণয় ক্যার্যী ও দেবাঞ্জন দে। ছিলেন আরেক প্রাক্তন ছাত্র নেতা সুদীপ সেনগুপ্ত। আগামী দু’মাস স্কুল বাঁচাও-মূল বাঁচাও আন্দোলনের ডাক দিয়ে স্কুলের গেটে পৌঁছাবে এসএফআই (SFI)। নিট দুর্নীতির প্রতিবাদে এদিন মৌলালি থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত একটি মিছিলও করে এসএফআই নেতা-কর্মীরা।