স্টাফ রিপোর্টার, শিলিগুড়ি: ফের নতুন করে দার্জিলিং শহরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি। এবং সেখানে শামিল সিপিএমও। ফলে সঙ্গী বিতর্কও। রবিবার ক্যাপিটাল হলে প্রকাশ্য সভায় একই মঞ্চে দেখা গেল বিমল গুরুং, বিনয় তামাং, অজয় এডওয়ার্ড-সহ সিপিএমের জেলা সম্পাদক সমন পাঠককে। সেখানেই গোর্খাল্যান্ডের দাবি ওঠে। মঞ্চে হাজির প্রত্যেকের মুখে ছিল গোর্খাল্যান্ডের কথা। কেউ সরাসরি বলেন, কেউ আবার ঘুরিয়ে। কিন্তু দাবি একই ছিল। যদিও ওই জনসভাকে কটাক্ষ করেন ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি অনীত থাপা। তিনি বলেন, ‘‘ওটা গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলনের জন্য মঞ্চ নয়। ওটা আমাকে গালি দেওয়ার মঞ্চ।’’ সোমবার পাহাড়ে দার্জিলিং পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচন। তার ঠিক চব্বিশ ঘণ্টা আগে এমন জনসভা পাহাড়ের রাজনীতিতে নতুন মোড়। পাহাড়ের উন্নয়নের স্বার্থে যখন অনীত থাপারা বোর্ড গঠন করতে চলেছেন। ঠিক তখনই ফের একবার গোর্খাল্যান্ডের দাবি তুলে আন্দোলনের আভাস দিলেন বিরোধীরা।
ক্যাপিটাল হলে পাহাড়ের শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। যদিও তাদের দল পাহাড়ে ক্ষমতায় নেই। প্রত্যেকে মিলে ‘গোর্খা স্বাভিমান মঞ্চ’ গড়েছেন। ওই মঞ্চ পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন করবে এমনই দাবি নেতৃত্বের। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সুপ্রিমো বিমল গুরুং বলেন, ‘‘গোর্খাদের স্বার্থে পাহাড়ে গোর্খাল্যান্ডের প্রয়োজন। ওই দাবিতে আমরা আন্দোলন করব। তবে হিংসাত্মক আন্দোলন হবে না।’’ হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড বলেন, ‘‘বুদ্ধিভিত্তিক গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলন করতে হবে। পাহাড়ের জন্য ওই দাবিতে সরব হতে হবে। আমরা শুনতে পাচ্ছি উত্তরবঙ্গ আলাদা রাজ্য হবে। যদি সেটা হয় তবে পাহাড়ের ক্ষতি হবে।’’ বিনয় তামাং অবশ্য সরাসরি গোর্খাল্যান্ডের কথা বলেননি। যদিও তিনি ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন গোর্খাল্যান্ডের সমর্থক। তিনি বলেন, ‘‘গোর্খাদের সম্মানের জন্য আমাদের এই সংগ্রাম। আমরা চাই গোর্খারা আত্মসম্মানের সঙ্গে বাঁচুক। সেজন্য যেটা দরকার তা নিয়ে আমাদের আন্দোলন করতে হবে।’’
[আরও পড়ুন: পরিত্যক্ত খাদানের জলে ভাসছে চারটি মৃতদেহ! আসানসোলের ঘটনায় ঘনাল রহস্য]
আবার সিপিএমের সমন পাঠকও গোর্খাল্যান্ডের কথা না বললেও গোর্খাদের সম্মান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সরব হন। সমন বলেন, ‘‘আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল পুরবোর্ড দখলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য। আমি তাই গিয়েছিলাম। আমরা আলাদা রাজ্যের পক্ষে নই। আমরা অনৈতিক রাজনীতির বিপক্ষে।’’ তাঁর কথায় সায় দিয়েই প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পাহাড়ে জনসভা হয়েছিল অনৈতিকভাবে পুরসভা দখলের বিরুদ্ধে। তাই আমাদের দল তাতে শামিল হয়েছিল। আমাদের জেলা সম্পাদক গিয়েছিলেন। আমরা সবসময় তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী দলের সঙ্গে রয়েছি। মঞ্চে কেউ কিছু বলতেই পারেন। আমাদের দল অনৈতিকভাবে পুরবোর্ড দখলের বিরুদ্ধে।’’ পাল্টা এই ঘটনায় সিপিএমের সমালোচনা করে দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান অলোক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বামেরা তৃণমূলের বিরোধিতা করতে গিয়ে কোথাও বিজেপি কোথাও কংগ্রেসের হাত ধরেছে। তাই এটা নতুন কিছু নয়। ওদের দলের নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলছেন তাঁরা গোর্খাল্যান্ডের সমর্থক নন। অথচ তাঁদের দলের সম্পাদক সেখানে উপস্থিত। আসলে বামেরা এখন আদর্শচ্যুত হয়েছে। তাই ওরা যাকে পাচ্ছে তার সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে।’’
এদিকে, সোমবার পুরসভার বোর্ড গঠন রয়েছে। তাই রবিবার কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করেন ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি অনীত থাপা। পরে বলেন, ‘‘গোর্খাল্যান্ড নয়, পুরবোর্ড বাঁচাতেই ওদের এই জোট। পুরসভায় চেঁচিয়ে কিংবা আমাকে গালি দিয়ে যদি গোর্খাল্যান্ড পাওয়া যেত তা হলে সমস্যাই থাকত না। আমরা বোর্ড গঠন করছি পাহাড়ের উন্নয়নের স্বার্থে। ওদের জোটকে নিয়ে চিন্তাও করছি না।’’ তবে এদিনের ক্যাপিটাল হলের সভা ঘিরে যে রাজনৈতিক বিতর্ক দানা বেধেছে তা স্পষ্ট। সিপিএম কি তা হলে গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন করছে, প্রশ্ন পাহাড়েরও।