স্টাফ রিপোর্টার: লেনিন জন্মবার্ষিকীতে জন্মদিন পালন করে ফের নিন্দার ঝড়ে পড়লেন সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ (Shatarup Ghosh)। আলিমুদ্দিনে আসা পার্টির বহু সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে বহু বামপন্থী ব্যক্তিত্ব একসুরে শতরূপের ‘এযুগের লেনিন’ সাজতে চাওয়াকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। পার্টি নেতার এমন ‘জন্মদিন জালিয়াতি’ করা নিয়ে সিপিএম রাজ্য কমিটির এক নেতা রবিবার প্রকাশ্যেই বলেছেন,”প্রমোদ দাশগুপ্ত-অনিল বিশ্বাসরা যে ত্যাগ ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে বাংলায় সিপিএমকে দাঁড় করিয়েছিলেন, তা এই সমস্ত বালখিল্য যুবনেতাদের আচরণে শূন্যে পৌঁছে গেল।”
পার্টির যুবসংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর অন্দরেও শতরূপকে নিয়ে প্রশ্ন, “রাস্তায় নেমে বামপন্থী আদর্শ নিয়ে লড়াই ছেড়ে বিজেপির প্রচার করা টিভি চ্যানেলে জন্মদিন পালন করা কি কোনও সত্যিকারের সিপিএম কর্মীর শোভা পায়?” শুধু তাই নয়, লেনিনের জন্মদিন ২২ এপ্রিল মিলিয়ে নিজের জন্মদিন ফেসবুকে দেওয়া আর কসবা কেন্দ্রে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়ে নির্বাচন কমিশনে তাঁর জন্মতারিখ ১৯৮৬ সালের ২২ মার্চ দেওয়ায় এদিন নেট-নাগরিকদের তোপের মুখে যুবনেতা। প্রশ্ন হচ্ছে, যদি শতরূপের ২২ এপ্রিল জন্মদিনটি সঠিক হয় তা হলে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া ২২ মার্চ তথ্য ভুল। এবং নির্বাচনী আইন অনুযায়ী কমিশনকে ভুয়া তথ্য দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না কেন? দু’টি জন্মদিন নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় বছর কয়েক আগে পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও তদন্ত করে শতরূপকে ২২ এপ্রিল পালন না করার জন্য সর্তক করে নিন্দাও করেছিল। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হল, ফেসবুকে এখন ‘এযুগের লেনিন’ সাজতে গিয়ে ‘ভুয়া জন্ম তারিখ’ দিয়ে রাখলেও পার্টির বর্তমান রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
[আরও পড়ুন: সিঙ্গুরে এশিয়ার বৃহত্তম পাইকারি বাজার! প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা]
লেনিনের জন্মদিনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দিনরাত কুৎসা করা দু’টি টিভি চ্যানেলে কেক কেটে শনিবার জন্মদিন পালন করেন ‘২২ লাখি গাড়ির মালিক’ সর্বহারা পার্টির নেতা শতরূপ ঘোষ। চ্যানেলের রিপোর্টার ও শীর্ষ কর্তাদের পাশাপাশি কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায়দের মতো পার্টি নেতারাও ফেসবুকে শুভেচ্ছাও জানান। টিভি চ্যানেলে জন্মদিনের সেই ছবি শতরূপের পরিবারের তরফে ফেসবুকে দিতেই নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। নেটিজেনদের তরফে জানতে চাওয়া হয়, কোন জন্মদিনটি আসল? ফেসবুকে পরিচিত বামপন্থীরাও তীব্র কটাক্ষ করে জানতে চেয়েছেন, নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা এফিডেভিটের জন্মতারিখ সত্যিই কি ভুয়া? আসলে ২০১৭ সালে পার্টির রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ তখন দু’টি জন্মদিন নিয়ে সিপিএমের শীর্ষমহলে অভিযোগ করেন। তা নিয়ে তদন্তও হয় পার্টির অভ্যন্তরে এবং শতরূপের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সতর্ক করা হয়। দিনকয়েক আগে বিষয়টি উত্থাপন করে ফেসবুকে শতরূপের ‘শঠ-রূপ’ বলে পোস্ট করেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সহ-সভাপতি সুদীপ রাহা। কিছুদিন আগে সর্বহারা পার্টির হোলটাইমার হয়ে শতরূপ কীভাবে ২২ লাখি গাড়ি কিনলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। জবাব দিতে গিয়ে অশালীন শব্দে কুণালের বাবাকে নিয়েও আক্রমণ করে এখন মানহানি মামলায় ফেঁসেছেন ‘জন্মদিন জালিয়াতি’ করা শতরূপ।
ফেক জন্মদিন পালন করায় শতরূপের ফেসবুকে কমেন্টে অভিষেক রায় নামে একজন লিখেছেন, ‘তা শতরূপ কোর্টে এফিডেভিট করে জন্ম তারিখ পাল্টে নিয়েছে নাকি।’ সরাসরি ‘জন্মদিন জালিয়াতি’ করার অভিযোগ এনে তীব্র কটাক্ষ করে অর্ক চক্রবর্তী নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ফেক বার্থ ডে-তে অনেক অনেক শুভেচ্ছা, সৌভাগ্যবান তাঁরাই, যাঁদের বছরে দু’বার জন্মদিন আসে।’ পরপর তিনবার কসবা কেন্দ্রের ভোটে হেরে রেকর্ড করার তথ্য উসকে দিয়ে সঞ্জয় হালদার নামে একজন ফেসবুকে কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘তিনবারের হেরো বিপ্লবী।’ খাস বামপন্থী নেটিজেনদের প্রশ্ন, নিজের জন্মদিন নিয়ে এভাবে বিতর্ক তৈরি না করে কেন ফেসবুকে পরিষ্কার করছেন না শতরূপ?