সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (T20 World Cup 2024) অভিযান শুরু করেছে ইন্ডিয়া। নিউ ইয়র্কের পিচের দুরবস্থার মধ্যেও জয় ছিনিয়ে নিতে অসুবিধা হয়নি রোহিত শর্মাদের (Rohit Sharma)। অন্যদিকে শুরুর ম্যাচেই হার মানতে হয়েছে পাকিস্তানকে। তাও আবার প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলা আমেরিকার কাছে। কিন্তু যতই হোক, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ সবসময়ই সমানে-সমানে টক্কর। আবার বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ের দুরন্ত রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখতে চাইবে টিম ইন্ডিয়া (India Cricket Team)। কে জিতবে সেই লড়াইয়ে? তার উত্তর সময়ের গর্ভে। তবে ভারত ও পাকিস্তানের লড়াইয়ের আগে দেখে নেওয়া যাক দুই দলের শক্তি ও দুর্বলতা।
ভারতের শক্তি- যে কোনও ফরম্যাটের বিশ্বকাপে নামার আগে ভারতকেই অন্যতম ফেভারিট হিসেবে ধরা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রত্যাশার পারদ চড়তে শুরু করে দিয়েছে। ভারতের ব্যাটিংয়ের প্রাণভোমরা যে বিরাট কোহলি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হলেও তাঁর জ্বলে ওঠা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রোহিত শর্মা। ৫২ রানের সঙ্গে গড়েছেন অসংখ্য রেকর্ড। অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার তাঁর পরিপূর্ণ। ওপেন করতে নেমে রোহিতের ব্যাট যদি চলতে শুরু করে, তাহলে পাকিস্তানের বোলারদের রাতের ঘুম উড়বে, তা বলাই বাহুল্য।
প্রত্যাবর্তনের ঋষভ পন্থ হতে পারেন এক্স ফ্যাক্টর। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন ঋষভ। দীর্ঘ ১৬ মাস অপেক্ষার পরে ভারতীয় দলে কামব্যাক ঘটছে তাঁর। পন্থের কিপিংয়ের পাশাপাশি তাঁর ব্যাটিং ভারতীয় দলের সম্পদ। যথার্থ অর্থেই তিনি একজন ম্যাচ উইনার। আগের ম্যাচে ভালো ব্যাটিং করেন ঋষভও।
[আরও পড়ুন: পাক ম্যাচের আগে নেটে চোট রোহিতের, নামতে পারবেন মহারণে?]
ভারতীয় বোলিংয়ের বড় সম্পদ জশপ্রীত বুমরাহ। নতুন বলে ভয়ংকর। সুইং করাতে পারেন। সিম বোলিংও খুব ভালো করেন। সেই সঙ্গে তাঁর হাতে রয়েছে বিষাক্ত ইয়র্কার। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬ রানে ২ উইকেট তুলে ম্যাচের সেরা। তিন উইকেট তুলে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত হার্দিকেরও।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ের দুরন্ত রেকর্ড রয়েছে ভারতের। ৭টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। তার মধ্যে ভারত জিতেছে ৬টিতে। শুধু ২০২১-এ ১০ উইকেটে হারতে হয়েছিল বিরাটদের।
ভারতের দুর্বলতা- বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়নি ভারতের মিডল অর্ডারকে। শিবম দুবে, অক্ষর প্যাটেল, হার্দিক পাণ্ডিয়াদের সেভাবে ব্যাট করার দরকার পড়েনি। এর আগেও ভারতকে ভুগিয়েছে মাঝের সারি। এবার দেখার পাকিস্তানের সামনে কীভাবে রুখে দাঁড়ায় তাঁরা।
সেই ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘরে এসেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে। তার পরে ১৭ বছর অতিক্রান্ত হলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আর জিততে পারেনি ভারত। প্রতিবারই অন্যতম ফেভারিট হিসেবে টুর্নামেন্ট খেলতে নেমেছে ভারত। কিন্তু ব্যর্থ মনোরথে দেশে ফিরতে হয়েছে।
তাছাড়া মারকুটে ব্যাটারের অভাব রয়েছে টিমে। ঋষভ পন্থ ছাড়া পিঞ্চ হিটারের অভাব। হার্দিককে সেভাবে আইপিএলে জ্বলে উঠতে দেখা যায়নি। আশঙ্কার আরও একটা দিক রয়েছে, চাপের মুখে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে না তো ভারতীয় ব্যাটিং?
[আরও পড়ুন: রশিদ-ফারুকির দাপটে কিউয়িরা কুপোকাত, বড় ব্যবধানে জিতে সুপার এইটের পথে আফগানিস্তান]
পাকিস্তানের শক্তি- আমেরিকার কাছে হেরে গ্রুপ স্টেজ থেকেই বিদায়ের আশঙ্কায় রয়েছেন বাবর আজমরা। তার মধ্যেও মিডল অর্ডারে ভরসা জুগিয়েছেন শাদাব খান। ২৫ বলে ৪০ রান করে পাকিস্তানের রানকে ভদ্রস্থ জায়গায় পৌঁছে দেন।
ফলে পালটা আঘাত দিতে চাইবেন বাবররা। কাজটা কঠিন হলেও আমেরিকার কাছে হারের পর ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া থাকবে পাকিস্তান দল। তাছাড়া আরেকটি বিষয়ও তাদের সঙ্গে থাকবে। এর আগে মহম্মদ আমির কিংবা শাহিন আফ্রিদিদের আউট সুইংয়ের একাধিকবার পরাস্ত হয়েছেন রোহিত-বিরাট। সেটা নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাস জোগাবে তাঁদের।
পাকিস্তানের দুর্বলতা- তবে শক্তির থেকে দুর্বলতাই বেশি বাবরদের। যার অন্যতম কারণ খোদ অধিনায়কের ব্যাটিং। প্রথম ২৭ বলে মাত্র ৯ রান করেছিলেন বাবর। যা প্রায় টেস্ট ব্যাটিংয়ের সমান। শেষ পর্যন্ত ৪৩ বলে ৪৪ করেন। বোলাররাও ফর্মের ধারেকাছে নেই। আমেরিকার বিরুদ্ধে ৩টের বেশি উইকেট তুলতে পারেননি হ্যারিস রউফরা। সুপার ওভারে ১৮ রান দেন মহম্মদ আমির। কোনও স্পিনার উইকেট পাননি। এখানেই শেষ নয়। খারাপ ফিল্ডিং বরাবরই পাকিস্তানের দুর্বলতা। সুপার ওভারে অস্বস্তিতে থেকেছেন প্লেয়াররা। বোঝাপড়ার অভাবও চোখে পড়েছে।
ফলে সব দিক থেকেই অ্যাডভান্টেজ ভারত। কিন্তু ভারত-পাক ক্রিকেট যুদ্ধ রুদ্ধশ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। সেদিকে তাকিয়ে থাকবে দুদেশের ক্রিকেটভক্তরা।