আলাপন সাহা: ইডেনে পিচ নাটক শেষ হইয়াও হইল না শেষ। কেকেআর বনাম লখনউ সুপার জায়ান্টসে প্রিভিউ লিখতে বসে প্রথম লাইন এটা ছাড়া অন্য কিছু আর লেখা যাচ্ছে কই? ইডেনে পিচ নাটকের সূত্রপাত সেই আরসিবি ম্যাচের পর থেকে। তবে ইডেনে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ মাচ জেতার পর কেকেআর শিবিরের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছিল, পিচ-বিতর্কের বুঝি অবসান ঘটল। উইকেট নিয়ে ভেঙ্কটেশ আইয়াররা বেশ খুশি ছিলেন। কিন্তু কে জানত, লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে নামর আগে পিচ-নাটকের 'পার্ট টু' আবারও শুরু হয়ে যাবে?

শোনা যাচ্ছে, কেকেআর শিবির থেকে নাকি বারবারই বলা হচ্ছিল, তারা সানরাইজার্স ম্যাচের উইকেট চায়। আইপিএলের যা নিয়মনীতি তাতে একই পিচে পরপর দু'টো ম্যাচ সম্ভব নয়। মঙ্গলবারের ইডেনের উইকেট বদলাচ্ছে। সোমবার বিকেলে দেখা গেল, কেকেআর শিবিরের তরফে দফায় দফায় আলোচনা চালানো হচ্ছে। কখনও কেকেআর সিইও ভেঙ্কি মাইসোর গিয়ে কথা বলছেন সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কখনও আবার এগিয়ে গেলেন কেকেআর কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত। টিমের সিইও হোক কিংবা কোচ-প্রত্যেকের কথার সারমর্ম এক। যতটা সম্ভব ঘূর্ণি উইকেট চাই। কেকেআর শিবির থেকে বারবারই অনুরোধ চলতে থাকে।
আসলে মঙ্গলবারের ম্যাচটা মহাগুরুত্বপূর্ণ কেকেআরের কাছে। জিততে পারলে লিগ টেবিলে ভালো জায়গায় চলে যাবেন অজিঙ্ক রাহানেরা। কিন্তু কেকেআর আদৌ পুরোপুরি নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী উইকেট পাবে কি না, নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। উইকেট টার্নিং করার একটা দাওয়াই হল- বাইশ গজ যতটা সম্ভব শুষ্ক রাখা। বেশি জল দেওয়া যাবে না। এদিন অবশ্য কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় ইডেন পিচে জল দিলেন। তারপর বেশ কিছুক্ষণ রোলিং চলল। সেটা পুরোটাই হল কেকেআর টিমের সামনে। কারণটা খুব স্পষ্ট। এমনিতে দুপুর সাড়ে তিনটে থেকে ম্যাচ। প্রবল গরম থাকবে, বলে দেওয়াই যায়। যদি উইকেটে পুরোপুরি জল দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়, হিতে-বিপরীত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বলা হল, কেকেআরের পছন্দ মতো ডিজাইনার পিচ বানাতে গিয়ে যদি আন্ডার প্রিপেয়ার্ড হয়ে যায়, তার দায় কে নেবে?
পুরোপুরি ঘূর্ণি না হলেও ইডেনের বাইশ গজে বল ঘুরবে। সেটা লখনউ সুপার জায়ান্টস টিমও বুঝে গিয়েছে। বাংলার দুই ক্রিকেটার আকাশ দীপ আর শাহবাজ আহমেদ রয়েছেন লখনউ সুপার জায়ান্টসে। এখানকার পিচের চরিত্র কেমন হয়, শাহবাজদের খুব ভালো করেই জানা। তবে শাহবাজ ইডেনে এসে আবিষ্কার করলেন রনজিতে ইডেনে যেরকম পিচ হয়, আইপিএলে সেরকমটা নেই। বরং এখানে স্পিনাররা সাহায্য পাবেন। শাহবাজ বলছিলেন, "দেখুন ঘরোয়া ক্রিকেটে লাল বলে আমরা ইডেনে যে উইকেট পাই, এটা তার থেকে অনেকটা আলাদা। তবে গত কয়েক বছর ধরেই তা হয়ে এসেছে। ওদের টিমে বরুণ চক্রবর্তী, সুনীল নারিনরা রয়েছেন। ফলে সেরকম পিচ হবে।" একইসঙ্গে শাহবাজের প্রচ্ছন্ন একটা হুঙ্কার এল, "আমাদের টিমেও স্পিনাররা রয়েছে। আশা করি খুব একটা সমস্যা হবে না।"
কেকেআর যদি বরণ-নারিনদের দিয়ে বিপক্ষকে ছারখারের পরিকল্পনা করে থাকে, লখনউ তেমনই রবি বিষ্ণোই, দিগ্বেশ সিং রাঠিকে নিয়ে যুদ্ধ জয়ের কৌশল সাজাচ্ছে। তবে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে যেরকম আবহ থাকে, ইডেনে সোমবার সে'সব একেবারেই ছিল না। দুটো টিমের বেশিরভাগ ক্রিকেটার এদিন আর মাঠমুখো হননি। ঋষভ পন্থ আসেননি। নিকোলাস পুরান আসেননি। কেকেআরেও অজিঙ্ক রাহানে এলেন না। আন্দ্রে রাসেল আসেননি। নারিন অবশ্য বেশ খানিকক্ষণ আগেই চলে এলেন মাঠে। আলাদা করে বোলিং অনুশীলন চলল। কেকেআরের আসল সমস্যা ওপেনিং। নারিন আর কুইন্টন ডি'কক জুটি এখনও পর্যন্ত ক্লিক করেনি। চারটে ম্যাচে 'শান্ত' থেকেছে নারিনের ব্যাট। এই ম্যাচে কি ওপেনিং স্লটে কোনও বদলের চিন্তা-ভাবনা রয়েছে? কেকেআরের সহকারী কোচ ওটিস গিবসন অবশ্য যা বলে গেলেন, তাতে বদলের ইঙ্গিত নেই। গত বারের পরিসংখ্যান অবশ্য কেকেআরের হয়ে কথা বলছে। ইডেনে গত আইপিএলে লখনউকে হারিয়েছে কেকেআর। এবার কী হয়, সেটাই দেখার।
আজ আইপিএলে
কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম লখনউ সুপার জায়ান্টস
কলকাতা, বিকেল ৩.৩০, স্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্ক