রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: অবসর ঘোষণার দিন যুগন্ধর পারফর্মার কী করে? পুরাকালে সাংবাদিক সম্মেলন-টম্মেলনের চল ছিল। যেখানে প্লেয়ার আসত, সর্বসমক্ষে বলত নিজ-সিদ্ধান্ত। অধুনা টুইটার-ইনস্টাগ্রাম-ফেসবুক মহাবিশ্বে অত কিছু লাগে না। দু’টো লাইন লিখে দিলেই চলে! তা, ঝুলন গোস্বামী (Jhulan Goswami) কিছু লিখলেন-টিখলেন আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের লর্ডস অবসর নিয়ে? নাহ্, একটা লাইনও না।
অবসর ঘোষণার দিন যুগন্ধর পারফর্মারকে নিয়ে কী চলে? আবেগের বিদায়ী ‘গান স্যালুট’ দিতে নামে ‘উপাসক’কুল, প্রশংসার অকাতর ফুলে চাপা পড়ে পারফর্মারের পদতল। ঝুলন গোস্বামীকে নিয়ে এ সব হল কি শনিবার? গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে? নাহ্, কিছুই না।
[আরও পড়ুন: অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে রাধাকৃষ্ণের ‘অশ্লীল’ ছবি, নেটদুনিয়ায় ট্রেন্ডিং ‘বয়কট আমাজন’]
‘চাকদহ এক্সপ্রেস’কে জুড়ে বরং কেমন যেন কুয়াশা-চাদর চারদিকে। যে চাদর ফুঁড়ে দৃষ্টি যায় না। যেখানে অনিশ্চয়তা আছে। একরাশ প্রশ্ন আছে। শুধু নিশ্চিত কোনও উত্তর নেই। ঝুলন গোস্বামীকে নিয়ে আসমুদ্রহিমাচল ঝটকাটা খায় শনিবার সকালে। মিডিয়ার একাংশ লিখে দেয় যে, আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের লর্ডসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছেন ঝুলন। সমাপ্তি ঘটছে তাঁর দু’দশকের কেরিয়ারের। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আসন্ন ওয়ান ডে সিরিজের তৃতীয় ওয়ান ডে-ই কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ বঙ্গসন্তানের। আলগা বিস্ময় একটা ছিল খবরটা জুড়ে। কারণ চব্বিশ ঘণ্টাও হয়নি ঝুলনকে রেখে ইংল্যান্ডগামী ভারতীয় মহিলা দল নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু সেখানে সামান্যতম আভাসও পাওয়া যায়নি যে, ঝুলন ছাড়ছেন। লর্ডসেই তাঁর বিদায়ী ম্যাচ। বলা হয়নি, সেপ্টেম্বরের পর বঙ্গসন্তান মহিলা আইপিএল খেলতে পারেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর নয়।
বেলা বাড়ার সঙ্গে নাটক আরও বাড়তে থাকে। জাতীয় নির্বাচকদের কাউকে কাউকে ফোন করলে তাঁরা বলে দেন যে, গতকাল নির্বাচনী বৈঠক পর্যন্ত তাঁদের কাছে কোনও খবর ছিল না ঝুলনের অবসর নিয়ে। গত বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের আগে চোট পেয়েছিলেন বাংলার অলরাউন্ডার। শ্রীলঙ্কা সফরে যেতে পারেননি। তাঁর রিহ্যাব চলছিল। এখন ফিট, তাই ফের টিমে। কিন্তু অবসরের ব্যাপারে তাঁরা কিছু জানেন না! সংশয় আরও বাড়তে থাকে, ভারতীয় বোর্ড কিছু না বলায়। বোর্ডের তরফ থেকে রাত পর্যন্ত ঝুলনের বিদায়ী ম্যাচ নিয়ে একটা লাইনও আসেনি। ঝুলন– তিনিও সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা শব্দ লেখেননি। লেখেননি– ‘আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে অবসরে যাচ্ছি।’
[আরও পড়ুন: ‘ফের ২৬/১১-এর মতো হামলা হবে’, হুমকি এল পাকিস্তান থেকে, তীব্র আতঙ্ক মুম্বই জুড়ে]
যার পর জাতীয় ক্রিকেট সার্কিটে একের পর এক প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে। বলাবলি চলতে থাকে, এত বড় একটা খবর ঘিরে এমন ঢাকগুড়গুড় চলছে কেন? ঝুলনের মতো কিংবদন্তি অবসর নিলে সেটা তো জানানো দরকার। সন্ধের দিকে বোর্ডমহলে ফোন করে জানা গেল যে, ঝুলনের সঙ্গে তাঁর অবসর নিয়ে বোর্ডকর্তাদের কথাবার্তা যে একেবারে হয়নি, তা নয়। কিছুটা হয়েছে। কেরিয়ার সায়াহ্নে একজন ক্রিকেটার পৌঁছলে তার সঙ্গে স্বাভাবিক নিয়ম মেনে হয় যেমন। কিন্তু অবসর-নির্ঘণ্ট নাকি চূড়ান্ত হয়নি। বলার মতো পরিস্থিতি আসেনি যে, আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর ভারতীয় ক্রিকেটের একটা যুগ শেষ হয়ে যাচ্ছে।
ঝুলনের ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ আবার জুড়ে দিলেন, শনিবার রাত পর্যন্ত তাঁর কাছে বোর্ডের কোনও সরকারি ই মেল আসেনি বিদায়ী ম্যাচ নিয়ে। কেউ তাঁকে ফোন করে বলেনওনি যে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লর্ডস ম্যাচেই তোমাকে ফেয়ারওয়েল দেব বলে আমরা ভেবেছি। অনেকে আবার এটাও জুড়ে দিতে চান যে, টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত ঝুলন নিজেই ই-মেল করে জানিয়েছিলেন বোর্ডকে। তার পর টুইট করেছিলেন। এবার কোথায় হয়েছে সে সব? অনেকের ধারণা, আগামী সপ্তাহে বোর্ড অফিস খুললে ব্যাপারটা আর একটু পরিষ্কার হবে।
কী হবে, সময় বলবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক, অর্জুন-পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বাধিক ৩৫২ উইকেটের মালকিনের বোধহয় এ জিনিস প্রাপ্য ছিল না, যার ব্যাখ্যা হয় এক শব্দে। বিভ্রান্তি!