ক্রোয়েশিয়া–১ (৩) জাপান-১ (১)
(পেরিসিচ) (মায়েদা)
দুলাল দে, দোহা: বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া (Croatia)। থেমে গেল জাপানের (Japan) স্বপ্নের দৌড়। কিন্তু নীল সামুরাইদের লড়াইটা যে এভাবে শেষ হবে, তা হয়তো অনেকেই কল্পনা করতে পারেননি। ১২০ মিনিট মরিয়া লড়াই করল জাপান।কাদের সঙ্গে? ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে। যে নামটা বিশ্বফুটবলে রীতিমতো সম্ভ্রম জাগানোর মতো। রাশিয়া বিশ্বকাপের রানার্স আপ তারা। দলে রয়েছেন লুকা মডরিচের মতো একজন শিল্পী। রয়েছেন পেরিসিচের মতো একজন লড়াকু খেলোয়াড়। তাঁদের বিরুদ্ধে কী লড়াইটাই না করল জাপান! ১২০ মিনিটের অদম্য লড়াই।কিন্তু শেষটা তো বীরের মতো হল না।
পেনাল্টি স্পট থেকে গোললাইন হল পৃথিবীর সবথেকে রহস্যময় সরণী। এই সরণীতে কত তারকা যে পথ হারিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। জাপানের মিনামিনো, মিতোমা এবং ইয়োশিদা হতশ্রী শট নিলেন। গোল করতে তো পারলেনই না, উল্টে তাঁদের ব্যর্থতায় কাতারে সূর্যাস্ত হয়ে গেল জাপানের।গোলকিপারের হাত-যশ একটা দলকে পেনাল্টি শুট আউটে জিতিয়ে দিতে পারে। মোক্ষম সময়ে ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক লিভাকোভিচ জ্বলে উঠলেন। তাঁর হাত ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে। গোল পোস্টের নীচে তাঁর ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে উঠল। তিন-তিনটি শট বাঁচালেন টাইব্রেকারে। দিনের শেষে তাঁকে ঘিরে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলেন মডরিচরা। ফুটবলপ্রেমীদের মন জিতে জাপান ফিরে আসছে দেশে। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে গোল করতে পারেননি লেভায়া। তাঁর শট পোস্টে লাগে।
[আরও পড়ুন: ‘ও আজ বড় প্লেয়ার, তবে পরিবারের খবরই রাখে না’, একরাশ অভিমান ফ্রেডের মামার]
ইউরোপ, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার ফুটবলের সঙ্গে এশিয়ার ফুটবলের দূরত্ব যে কমছে, তার প্রমাণ প্রথম দিন থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল এবারের বিশ্বকাপে। এদিন প্রায় দু’ ঘণ্টার বেশি মরিয়া হয়ে লড়ল জাপান। কথায় বলে, সকাল দেখে বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। জাপান-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের নিষ্পত্তি যে হবে টাইব্রেকারে তা কিন্তু গোড়াতে বোঝাই যায়নি। ক্রোয়েশিয়ার মতো দলের উপরে চাপ বাড়াচ্ছিল জাপান। প্রথমে গোল করে এগিয়েও যায় নীল জার্সিধারীরা। গোলটাও কিন্তু রীতিমতো পরিকল্পনার ফসল।
শর্ট কর্নার থেকে এরকম গোল সচরাচর দেখা যায় না। এবারের বিশ্বকাপে প্রথম। ডোয়ান ও মোরিটা শর্ট কর্নার থেকে বল দেওয়া নেওয়া করে ভাসান দূরের পোস্টে। ইয়োশিদার কাছ থেকে সেই বল পেয়ে গোল করেন মায়েদা।
বিরতিতে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে সাজঘরে যায় জাপান। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে মোক্ষম সময়ে ম্যাচে ফিরে আসে ক্রোয়েশিয়া। যে গোলটা করলেন পেরিসিচ, তাকে শট বললেও ভুল বলা হবে না। পেরিসিচের হেড দারুণ গতিতে জাপানের জালে আশ্রয় নিল।মার্কারের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ার চার নম্বর জার্সিধারী। তার পরেই মারাত্মক হেডটি নেন তিনি। ওই দুরন্ত গোল ক্রোয়েশিয়াকে ম্যাচ ফেরায়। এরপরই ম্যাচের ভরকেন্দ্র বদলে যায়। জাপানের থেকে তা স্থানান্তরিত হয় ক্রোয়েশিয়ার দিকে।
গোল করার মতো সুযোগ দু’ দলই তৈরি করেছিল ম্যাচের বিভিন্ন সময়ে। প্রথমার্ধের ১২ মিনিটে ডান দিক থেকে গড়ানে সেন্টারে পা লাগাতে পারেননি মায়েদা।বিরতির পরে এন্ডোর শট যখন গোঁত খেয়ে গোলে ঢুকছে, সেই সময়ে ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার লিভাকোভিচ বাইরে বের করে দেন। লুকা মডরিচ পাল্টা দেন। তাঁর শট জাপানের গোলে ঢোকার মুখে গোন্ডা বাইরে বের করে দেন। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে খেলা জমে ওঠে। অতিরিক্ত সময়েও জাপান লড়ে যায় দাঁতে দাঁত চেপে। কিন্তু গোলই তো পার্থক্য গড়ে দেয় দু’ দলের মধ্যে। সেই গোলটাই হয়নি। পেনাল্টি শুট আউটে ভাগ্যবিপর্যয় ঘটল জাপানের। তিন-তিনজন পেনাল্টি থেকে গোল করতে না পেরে বিপন্ন করেন দেশকে। শেষমেশ ছিটকেই যেতে হল মেগাটুর্নামেন্ট থেকে। জাপান হেরে গেলেও তাদের লড়াই দীর্ঘদিন মনে রাখবেন ফুটবলপ্রেমীরা।