স্টাফ রিপোর্টার: ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অশান্তির চোটে কমবেশি ক্যাম্পাস উত্তাল হওয়ার অভিযোগ প্রতিবার আসে। কিন্তু সরস্বতী পুজোকে ঘিরে এমন অভিযোগ গত দু’-এক বছরে একটু বেশিই আসার জেরে এবার সরস্বতী পুজোর (Saraswati Puja) দায়িত্ব কোনও এজেন্সির হাতে দিতে টেন্ডার ডাকল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের তরফে দেওয়া নোটিসে জানানো হয়েছে, প্যান্ডেল বানানোর দায়িত্বে থাকবে টেন্ডার পাওয়া এজেন্সি। বিশ্ববিদ্যালয় ওই এজেন্সি ছাড়া কারও হাতে টাকা দেবে না।
পুজোর আয়োজন, ৬-৭ ফুটের প্রতিমা-সহ অন্যান্য দশকর্মার জিনিস কেনার কাজ, আলপনা দেওয়া, প্রসাদ বিতরণের মতো কাজ বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত কমিটি করবে ওই এজেন্সির মাধ্যমে। তাদের টাকা মিটিয়ে দেবে বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রছাত্রীরা পুজোয় যেমন অংশ নেওয়ার নেবেন। প্রাক্তন কোনও ছাত্রছাত্রীর প্রবেশাধিকার নিষেধ। কোনও সাউন্ড বক্স বাজানো যাবে না। প্রতিমা বিসর্জনের দায়িত্বেও থাকবে ওই কমিটি। প্রথমে ছাত্রছাত্রীদের নোটিস দিয়ে সে কথা জানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তার সঙ্গেই নির্দিষ্ট কাজগুলি করার জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: মাসিক বেতন সাড়ে ৪ লক্ষ, তবু রাঁধুনি জুটছে না রোনাল্ডোর]
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Calcutta University) ছাত্র সংসদ তৃণমূলের (TMC) হাতে আসার পর থেকেই সেখানকার সমস্ত ক্যাম্পাসে সরস্বতী পুজো শুরু হয়। কলেজ স্ট্রিট, আলিপুর, সল্টলেক টেকনোলজি ক্যাম্পাস, বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ ও হাজরা ল’ কলেজ ক্যাম্পাসে মূলত তৃণমূল ছাত্র পরিষদই সেটি করে আসছে। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষ এখনও ব্রাহ্ম মতে বিশ্বাসী। সে কারণে ক্যাম্পাসে কোনও মূর্তি পুজো না হলেও হস্টেলে পুজো করে টিএমসিপি। কিন্তু গত দু’-তিন বছরে সমস্যা তৈরি হয় বাকি ক্যাম্পাসগুলি নিয়ে।
২৬ জানুয়ারি সরস্বতী পুজো। এই অবস্থায় এসএফআই, ডিএসও-র মতো বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির তরফে বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপের আরজি জানানো হয় রেজিস্ট্রার দেবাশিসকুমার বসুর কাছে। এসএফআইয়ের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক সম্পৃক্তা বসুর অভিযোগ, “পুজোর নামে ছাত্রছাত্রীদের থেকে জোর করে চাঁদা আদায়, পুজোর দিন মদ্যপ অবস্থায় অসভ্যতা চলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে। ক্যাম্পাসে এটা হতে দেওয়া যায় না। তাই রেজিস্ট্রার স্যরকে জানাই।”
[আরও পড়ুন: জোর করে যুবতীর অন্তর্বাসের ভিতরে হাত! গ্রেপ্তার নেইমারের সতীর্থ দানি আলভেজ]
ছাত্র পরিষদের অন্যতম সম্পাদক শাক্যদীপ বসুর কথায়, ‘‘পুজোর টাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএমসিপির হাতে দিলে সেটা নয়ছয় হয়। ২০১৭-র পর থেকে ছাত্র-ভোট হয় না। অশান্তি রুখতেই তাই এটা করা।’’ টিএমসিপি এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭টি ক্যাম্পাসের ইউনিট কো-অর্ডিনেটর অভিরূপ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত আরও স্বচ্ছতা আনবে। পুজো বর্তমান ছাত্রছাত্রীরাই করবে। শুধু টাকাটা দেওয়া হবে টেন্ডার করে।’’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে পুরোপুরি সহমত নন। তাঁর মতে, ‘‘পুজোটা ছাত্রছাত্রীদের। এজেন্সি হয়তো মসৃণভাবে ব্যাপারটা করবে। তবে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের হাতে পুজোর আয়োজন করে অনেক কিছু শেখে। তবে আমার মনে হয় পুজোর আয়োজনে কোনও অভিযোগ যাতে না ওঠে সেদিকে নজর রেখে ছাত্রছাত্রীরা পুজোর আয়োজন করলেই ভাল হত।’’
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পবিত্র সরকারের আবার বক্তব্য, ‘‘এমনিতেই আমি শিক্ষালয়ে সরস্বতী পুজোর মানে বুঝি না, যেখানে নানা ধর্মের পড়ুয়া রয়েছেন। তবে এই সিদ্ধান্ত অভূতপূর্ব। এ জিনিস বাংলার ইতিহাসে কখনও হয়েছে বলে মনে হয় না।’’ যদিও তিনি বলছেন, ‘‘সরস্বতী পুজোর আয়োজন করতে গিয়ে পড়ুয়ারা সারারাত জেগে মণ্ডপ সাজায়, প্রতিমা বসায়, গান করে। সেই মজাটাই মাটি!’’ পড়ুয়াদের দলগত বিবাদে যদিও পুজো ভন্ডুল হওয়ার একটা ঝুঁকিও রয়েছে বলে মনে করছেন পবিত্রবাবু।
শুক্রবার গোটা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে কর্তৃপক্ষ। শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আশিস চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘পুজোর খরচ চিরকালই বিশ্ববিদ্যালয় করে। এবার সব ক্যাম্পাসের পুজোর খরচ কেন্দ্রীয়ভাবে করা হচ্ছে। পুজোটা ছাত্রছাত্রীরাই করবে। খরচটা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে করা হচ্ছে বলে টেন্ডার ডাকা হয়েছে।’’