শুভঙ্কর বসু: আঙুলের একটা ছোঁয়া! আর তাতেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে অ্যাকাউন্ট। ঘরে বসে সর্বস্ব খুইয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। করোনা ভাইরাসের আবহে থেমে নেই সাইবার প্রতারকরা। বরং আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত কয়েকদিনে কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখায় নতুন উপায়ে সাইবার প্রতারণার একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে বলে খবর। নয়া এই চক্রের হদিশ পেতে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন সাইবার কর্তারা। কিন্তু কোন অভিনব উপায়ে মানুষকে পথে বসানোর ফন্দি এঁটেছে সাইবার অপরাধীরা? মূলত করোনাকে হাতিয়ার করে নেট দুনিয়ায় এক নয়, একাধিক উপায়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জাল ছড়িয়েছে তারা।
ইতিমধ্যেই তিন মাসের জন্য ইএমআই স্থগিত করার ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেইমতো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলিও তাদের গ্রাহকদের এই সুবিধা দিতে নীতি ঠিক করেছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন গ্রাহকের মোবাইলে ব্যাংকের নাম দিয়ে ভুয়া এসএমএস ছড়িয়ে দিচ্ছে তারা। যেখানে গ্রাহকদের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঋণের ইএমআই স্থগিত রাখতে বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হচ্ছে। এবং এসএমএস-এর শেষে দেওয়া একটি লিংকে ক্লিক করতে বলা হচ্ছে। এখানেই লুকিয়ে যাবতীয় কারসাজি। লিংকে আঙুল ছোঁয়ালেই খুলে যাচ্ছে একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট। যেটি দেখতে হুবহু সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইটের মত। এরপর ওই ভুয়ো ওয়েবসাইট থেকে গ্রাহকদের লোনের ইএমআই ছাড় পেতে একটি ফর্ম পূরণ করতে বলা হচ্ছে। যেখানে গ্রাহককে দিতে হচ্ছে অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য। সবশেষে কারসাজি করে মোবাইলে আসা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) দিয়েই অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দিচ্ছে প্রতারকরা।
[আরও পড়ুন :বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু বিরাটির প্রৌঢ়ের, রিপোর্টে করোনা পজিটিভ বলে উল্লেখ]
এখানেই শেষ নয়। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু), ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অন্ড প্রিভেনশন ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার নাম ভাঁড়িয়ে করোনা ভাইরাস নিয়ে তথ্য দিতে একাধিক ইমেল পাঠাচ্ছে সাইবার হ্যাকাররা। সেসব ইমেইলেও দেওয়া থাকছে একটি লিংক। যে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থেকে এই লিঙ্কে ক্লিক করা হচ্ছে সেটি নিমেষেই ইনফেক্টেড হয়ে যাচ্ছে। এবং সেখানে থাকা যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে হ্যাকারদের হাতে। এছাড়াও দেশের এই আর্থিক সংকট কালে কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্য সরকার রিলিফ ফান্ড তৈরি করেছে। প্রধানমন্ত্রী কেয়ার ফান্ড এবং ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট ইমারজেন্সি রিলিফ ফান্ডের মতো ফান্ডগুলিতে আর্থিক সাহায্য পৌঁছে দিতে ইউনিফাইড পেমেন্ট সার্ভিস (ইউপিআই) আইডি তৈরি করা হয়েছে। যেমন পিএম কেয়ার ফান্ডে টাকা পৌঁছে দেওয়ার ইউপিআই আইডি হল pmcares@sbi। হুবহু এমন নকল আইডি তৈরি করে মানুষকে সর্বশান্ত করার মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে অদৃশ্য এই অপরাধীরা। ইতিমধ্যেই এমন একাধিক চক্রের হদিশ পেয়েছেন সাইবার শাখার গোয়েন্দারা। পাশাপাশি ব্যাংকগুলি গ্রাহকদের সতর্কীকরণের কাজ শুরু করেছে।
[আরও পড়ুন : করোনার হটস্পট হাওড়া, হাসপাতালের সুপার আক্রান্ত হতেই বদলি করা হল CMOH-কে]
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কী করনীয়?
সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞ তথা কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের মতে, লকডাউন চলাকালীন যেহেতু সবকিছু পার্সোনালি ভেরিফাই করার অপশন কমে গিয়েছে ফলে এটা একটা কঠিন সময়। মানুষকে আরও সাবধান হতে হবে। এই সময় কোনও থার্ড পার্টি লিংক ব্যবহার করা উচিত নয়। যে ব্যাঙ্ক বা অর্গানাইজেশনের অনলাইন সুবিধা নেওয়া হচ্ছে সবসময় তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ঢুকে কাজ করতে হবে। মোবাইলে যদি কোনও এসএমএস আসে তাহলে তার ডোমেইনটি সব সময় দেখে নিতে হবে। সেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা অর্গানাইজেশনের নাম থাকতে বাধ্য। এছাড়াও অনলাইনে কোনও সরকারি পরিষেবা ব্যবহারের আগে অ্যাড্রেসে .gov বা .in কিংবা nic mail রয়েছে কিনা দেখে নিতে হবে। বিভাসবাবু বলেন, “এই সময় কোনও আনট্রাস্টেড ওয়েবসাইট বা পর্ণ সাইট ব্যবহার করা উচিত নয়। এগুলি ব্যবহার করলে কম্পিউটার বা মোবাইলে আগে থেকেই জেনারেল ম্যালওয়্যার ঢুকে বসে থাকতে পারে। ফলে আপনাআপনি সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য পৌঁছে যাবে প্রতারকদের হাতে।”
The post আঙুলের ছোঁয়ায় খালি হচ্ছে অ্যাকাউন্ট, করোনা আবহে আরও সক্রিয় সাইবার প্রতারকরা appeared first on Sangbad Pratidin.