shono
Advertisement

চম্বলের ডাকাতরা এখন বালি মাফিয়া, সব জেনেও চুপ প্রশাসন

কেন নীরব পুলিশ? The post চম্বলের ডাকাতরা এখন বালি মাফিয়া, সব জেনেও চুপ প্রশাসন appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 11:42 AM Nov 25, 2018Updated: 11:42 AM Nov 25, 2018

নন্দিতা রায়, চম্বল: গোয়ালিয়র শহর থেকে বেরিয়ে জলারপুর পার হতেই সঙ্গী হল ছোট ট্রেন। ছাদ ভরতি লোক নিয়ে ট্রেন ভাঁমোর স্টেশন পৌঁছনোর আগেই গাড়ি ন্যারোগেজ রেল লাইনের পাশ দিয়ে পার হয়ে গেল। চালক সোনু স্বগতোক্তি করল, “ম্যাডাম এই ট্রেন বন্ধ করে দেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। মাধবরাও সিন্ধিয়াজি রেলমন্ত্রী ছিলেন তো। তিনিই বন্ধ হতে দেননি।”

Advertisement

আরও বিশ কিলোমিটার যেতেই জেলা শহর মোরেনা। শহরের মাঝখান থেকে দু’টি রাস্তা দু’দিকে চলে গিয়েছে। সোজা রাস্তা ধরে কুড়ি কিলোমিটার এগনোর পরেই শুরু হয়ে গেল ‘বেহড়’। কাঁটাগাছ, কাঁটার ঝোপঝাড়-সহ উঁচুনিচু মাটির টিলা। উপর থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই নিচে কী আছে।

‘চম্বলের বেহড়’ শুরু হয়ে গিয়েছে শুনেই উত্তেজনা বেড়ে গেল। আমরা সকলেই মনে হয় চম্বল ও ডাকাত, এই শব্দ দু’টি একসঙ্গে শুনে এসেছি। চম্বলের ‘বেহড়’-এর দুর্ধর্ষ দস্যুদের কাহিনি বিখ্যাত। মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র, ভিন্দ, মোরেনা এলাকা চম্বল বলেই পরিচিত। সেই বেহড়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তাই জানা সত্ত্বেও গাড়িচালককে প্রশ্ন না করে পারলাম না, “আভি ভি ইধার ডাকু হ্যায় কেয়া?” ভরসা দিয়ে সোনু জানাল, “উয়ো সব কুছ নেহি হ্যায়, আভি তো ইধার কুছ অওর হি চলতা হ্যায়।” উৎসাহ বেড়ে গেল। বহুবার জিজ্ঞেস করার পরেও হাসিমুখে সোনুর জবাব, “আরে ম্যাডাম চম্বল নদীকে পাশ চলিয়ে না। পাতা চল জায়েগা।”

উপত্যকায় বড়সড় সাফল্য সেনার, এনকাউন্টারে খতম ৪ জঙ্গি ]

অগত্যা আরও দশ কিলোমিটার চুপ করে বসেই চম্বল নদীর ধারে পৌঁছলাম। নদীর যত কাছে আসছি, দেখলাম ‘বেহড়’ সাফ করে চাষের জমি তৈরি হয়েছে। নদীর উপর সেতুর এপারে মধ্যপ্রদেশের গ্রাম ভানপুর, অন্যদিকে রাজস্থানের ঢোলপুর। 

নদীর কাছে যেতেই আলাপ হল ভানপুরের বাসিন্দা মেহের সিংয়ের সঙ্গে। তাঁর কাছেও একই প্রশ্ন, “ডাকাত আছে নাকি?” ওসব আর বহুদিন নেই বলে জানিয়ে মেহের খবর দিলেন, “ডাকাতরা তো বহুদিন থেকেই নেই। এখন তাদের জায়গা নিয়েছে বালি মাফিয়ারা। দিনরাত চম্বল নদী থেকে বালি তুলছে। অনুমতি নেই, কিন্তু কেউ কিছু বলে না। পুলিশ থেকে প্রশাসন, সবাই জানে কিন্তু কিছু করে না। মাঝরাত থেকে বালি তোলার কাজ শুরু হয়ে যায়। ট্রাক্টর দিয়ে। ভোরের মধ্যেই সব চুপচাপ। পুলিশ এলেও কিছু করতে পারে না। উলটে ওরাই গুলি চালিয়ে দেয়। ট্রাক্টরের পিছা করলেও ধরতে পারে না। পিছনের ডালা খুলে রাস্তায় বালি ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। আর পুলিশের জিপ বালির উপর দিয়ে জোরে যেতে পারে না। নদীর দু’পারেই এসব চলছে। লোকজন কী করবে বলুন? কাজকর্ম নেই। তাই অবৈধ বালি তুলেই ব্যবসা করছে ছেলেপুলেরা। আর গ্রামের লোকও কিছু বলে না। কারণ বেহড়ে সকলের চাষ করার জমি নেই। তারা বালি তোলার মজুরের কাজ করে দিনগুজরান করে।” আর ভোট? মেহেরের ইঙ্গিত, মোরেনা এলাকায় কংগ্রেসের প্রভাব বেশি। এবারেও ওদেরই দাপট দেখা যাচ্ছে। একসময় লোকে যে চম্বল নদী পার হতে ভয় পেত, আজ সেখানে রীতিমতো পর্যটকদের আনাগোনা। নদীতে কুমির, কচ্ছপ দেখার হাতছানি, সঙ্গে বোটিং- সব ব্যবস্থাই রয়েছে। নদীর কাছেই ছাগল চড়াচ্ছিলেন ধ্রুব সিং। বছর ষাটেক বয়স, খানিক দূরের গ্রাম পিপরাই থেকে এসেছেন। তাঁর মুখেও বালি মাফিয়াদের কথা। “রাস্তায় আসতে আসতে ট্রাক্টর দেখেছেন নিশ্চয়। তাতে কোনও নম্বর দেখেছেন? দেখতে পাবেন না। এখানে এমনই চলে। এখন ভোট বলে অনেক পুলিশ দিয়েছে। তাই চুরি একটু কম হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ কিছু করতে পারে না। নদীর ধারে প্রায়ই রক্তারক্তি হয়।” ওঁরা যে সত্যি বলছেন, অচিরেই তার প্রমাণ পেলাম। নদীর কাছে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, “স্থানীয় যুবকদের কাছে অবৈধ বালি খনন খুবই লাভজনক ব্যবসা। কোনও মতে ব্যাঙ্ক থেকে ধারদেনা করে একটা ট্রাক্টর বা ডাম্পার কিনে ফেলতে পারলেই প্রতিদিন পাঁচ হাজার টাকা রোজগার। পুলিশ ছাড়া এখানে বনকর্মীরাও রয়েছে। গত পাঁচ বছরে তাদের উপরেই বালি মাফিয়ারা দেড়শোবার গুলি চালিয়েছে। আর স্থানীয় মানুষ তো তাদেরই সমর্থন করে।” বালি মাফিয়াদের প্রতি স্থানীয় মানুষের সহানুভূতি অনেকের সঙ্গে কথা বলেই মালুম হল। অবশ্য আজ নয়, চিরকালই চম্বল অবৈধ কারবারীদের পাশে থেকেছে। তাই আজও তারা চম্বলের ডাকাতদের ‘বাগী’ (বিদ্রোহী) বলতেই পছন্দ করে।

শুধু স্থানীয়রাই নয়, রাজনৈতিক দলগুলিরও বালি মাফিয়াদের পিছনে প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে বলে অভিযোগ। নদীর কিছুটা দূরেই ঘড়িয়াল অভয়ারণ্য। সেখানেও অবৈধভাবে বালি খননের অভিযোগ উঠেছে। যা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। রাজ্যের হাই কোর্ট ‘চম্বল ঘড়িয়াল স্যাংচুয়ারি’কে রক্ষার জন্য জাতীয় পরিবেশ আদালতের কাছে যেতে বলেছে। সরকার আবার এ বিষয়ে জনস্বার্থ মামলার বিরোধী। আসলে চম্বল এলাকায় ভোট জাতপাতের সমীকরণের উপর নির্ভর করে। আর বালি মাফিয়াদের মধ্যে সব জাতেরই লোক রয়েছে। তাই কোনও রাজনৈতিক দলই এদের বেশি বিরোধিতা করতে চায় না। শুধু চম্বলই নয়, এ রাজ্যের নর্মদা থেকে শুরু করে তাপ্তী- সব নদী থেকেই অবৈধ বালি খননের বিস্তর অভিযোগ। কিন্তু বালি মাফিয়াদের নিয়ে সেভাবে নির্বাচনের ইস্যু করেনি শাসক বিজেপি বা প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসও। শুধু ক্ষমতায় ফিরলে নদী থেকে অবৈধভাবে বালি খনন বন্ধ করার ব্যবস্থা করবে বলে কংগ্রেস আশ্বাস দিয়েছে মাত্র।

চাইল্ড পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি? হতে পারে সাত বছরের জেল! ]

The post চম্বলের ডাকাতরা এখন বালি মাফিয়া, সব জেনেও চুপ প্রশাসন appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement