অর্ণব আইচ: স্পেস চাই? জায়গা খালি আছে। প্রায় ফিসফিস করে বললেন যুবক৷ বাগরি মার্কেটের ‘সর্বহারা’ ব্যবসায়ী ঘুরে তাকাতেই হিন্দিতে বলে উঠলেন, ১৪ হাজার টাকা ভাড়ায় খুব ভাল ঘর। লাগলেই বলবেন। হাতে গুঁজে দিলেন ভিজিটিং কার্ড। তাতে রয়েছে একটি মোবাইল নম্বর। দালালির ব্যবসার চাবিকাঠি।
[প্রদেশ কংগ্রেসে ভাঙন রুখতে ‘চ্যালেঞ্জ’ নিলেন ‘ছোড়দা’]
ঘর পুড়েছে ব্যবসায়ীদের। পোয়াবারো দালালরাজের। বাগরি মার্কেটের আগুন নিভতেই রাস্তায় নেমে পড়েছে দালালগোষ্ঠী। খুঁজে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে, বিধ্বংসী আগুন কাদের ঘর কেড়ে নিয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ডে শেষ হয়ে গিয়েছে অন্তত দু’শো দোকান ও গুদামঘর। একতলা থেকে ৬ তলা পর্যন্ত ‘এ’, ‘সি’, ‘বি’ ব্লকের ঘরগুলিই ক্ষতিগ্রস্ত। যে ব্যবসায়ীদের দোকান পর্যন্ত আগুনের আঁচ লাগেনি, তাঁরা ভিতর থেকে মালপত্র নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। বেশ কিছু ব্যবসায়ীর অন্য বাণিজ্যিক বাড়িতে গুদাম ও অফিস রয়েছে। সেখান থেকে তাঁরা ব্যবসা চালাচ্ছেন। আবার কিছু ব্যবসায়ী তাঁদের আত্মীয় অথবা পরিচিতদের গুদামে জিনিসপত্র রেখেছেন। সেখান থেকে চলছে ব্যবসা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশের যে দোকান বা গুদাম ছিল শুধু বাগরি মার্কেটেই৷
[উনিশের লক্ষ্যে অপসারিত অধীর, নয়া প্রদেশ সভাপতি সোমেন মিত্র]
অগ্নিকাণ্ডের ফলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে মার্কেট। বেঁচে যাওয়া মাল ব্যবসায়ীরা বাইরে নিয়েছেন। কিন্তু জায়গা না থাকার ফলে তাঁরা ব্যবসা করতে পারছেন না। অনেকেই পুলিশকে অনুরোধ করেছেন মার্কেটে তাঁদের দোকানের সামনে শুধু বসতে দিতে। কিন্তু এখনই তা যে সম্ভব নয়। তাঁদের জন্যই তৈরি আছে দালালরা। ক্যানিং স্ট্রিট ও আমড়াতলা স্ট্রিটের জায়গায় জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। তাদের নজরে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দূর থেকে একবার বোঝার চেষ্টা করছে, কাদের নিজস্ব অন্য কোনও ঘর না থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সেইমতো তাঁদের কাছে গিয়ে ঘরের সন্ধান দিচ্ছে দালালরা। পুজো ও দীপাবলিতে যাতে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা টিকে থাকে, তার জন্য যেন ব্যস্ততা দালালদেরই। ব্যবসায়ীরা একটু খোঁজ নিতেই দালালরা জানিয়ে দিচ্ছে, ‘সেলামি’ ও ভাড়াই বেশি পছন্দ ‘স্পেস মালিক’দের। বড়বাজার, পোস্তা, জোড়াবাগান থেকে নিউ মার্কেট এলাকায় পর্যন্ত মিলবে ‘স্পেস’। মিলবে দু’শো থেকে তিনশো বর্গফুটের জায়গা। বর্গফুট পিছু ‘সেলামি’ দিতে হবে হাজার পাঁচেক টাকা। তবে দরাদরি করলে তা নেমে আসতে পারে চার হাজার টাকায়। আপাতত ব্যবসা করতে গেলে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে খরচ করলেই মিলবে কোনও বাণিজ্যিক বাড়িতে জায়গা। তার উপর দালালকে দিতে হবে কমিশন। আর মাসিক ভাড়া ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আবার কেউ যদি জায়গা কিনতে চান, তার জন্যও ব্যবস্থা রয়েছে। জায়গা বিক্রি করতেও তৈরি দালালরাজ।
[৮৪ ঘণ্টার রূদ্ধশ্বাস লড়াই, কীভাবে সম্পন্ন হল ‘অপারেশন বাগরি’?]
The post বাগরি চত্বরে দেদার চলছে ফেলো কড়ি, নাও ‘স্পেস’! appeared first on Sangbad Pratidin.