নিরুফা খাতুন: এন্ট্রোপিয়ান আইলিড মানুষের পাশাপাশি প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায়। চোখের পাতা ভিতরের দিকে থাকে। ফলে অস্বস্তি হয়। চোখ থেকে সারাক্ষণ জল বের হতে থাকে। এটি একটি জন্মগত ত্রুটি। তাই জন্মের পরই দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হয়। না হলে অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিড়িয়াখানায়ও প্রাণীদের এই ধরনের সমস্যা হলে অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে। তবে এই প্রথম তুষার চিতার শাবককে এন্ট্রোপিয়ান আইলিড অস্ত্রোপচার করা হল চিড়িয়াখানায়। দার্জিলিং চিড়িয়াখানায় চারমাসের তুষার শাবকের এই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। দেশের মধ্যে এই প্রথম কোনও তুষার চিতার এই ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে বনদফতর জানিয়েছে।
স্নো লেপার্ড বা তুষার চিতা– বিরল প্রজাতির এই প্রাণীর বাস শৈলদেশে। এদেশে লাদাখ, হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে রয়েছে তুষার চিতা। রাজ্য বনদফতর দার্জিলিংয়ের তোপকেডারে তুষার চিতা সংরক্ষণের কাজ করছে। পনেরোটির মতো তুষার চিতা রয়েছে সেখানে। মাস ক’য়েক আগে তোপকেডারে প্রজনন সেন্টারে একটি তুষার চিতা দুটি শাবকের জন্ম দিয়েছিল। এক মাস মতো বয়স হলে একটি শাবকের চোখের সমস্যা নজরে আসে। কিন্তু নবজাতক শাবককে মা সারাক্ষণ আগলে রাখে। এই সময় কাউকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। তাই বন আধিকারিকরা বুঝতে পারছিলেন না শাবকের চোখে ঠিক কী সমস্যা রয়েছে। আরও ক’য়েকটি দিন যেতে অবশ্য তঁারা বুঝতে পারেন, এন্ট্রোপিয়ান আইলিড নিয়ে জন্মেছে স্ত্রী শাবক বৈশাখী। প্রথমে অস্ত্রোপচার ছাড়াই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এতে কাজ হচ্ছিল না। বরং চোখের জন্য শাবকটি আরও কষ্ট পাচ্ছিল। অবশেষে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য জু অথরিটি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তুষার চিতার এই ধরনের অস্ত্রোপচার দেশের কোথাও হয়নি। তার ওপর এত অল্প বয়সে অস্ত্রোপচারের ধকল শাবকটি নিতে পারবে কি না এসব চিন্তা ছিল। এদিকে অস্ত্রোপচার না করলে শাবকটি চিরকালের মতো অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
[আরও পড়ুন: তৃণমূল নেতার ‘খুনি’কে পিটিয়ে মারল জনতা, জোড়া খুনে জ্বলছে জয়নগর]
অবশেষে ঝুঁকি নিয়ে দার্জিলিংয়ের পদ্মজা নায়ডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্কের হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হয়। রাজ্য জু অথরিটি মেম্বার্স সেক্রেটারি সৌরভ চৌধুরি জানান, এন্ট্রোপিয়ান আইলিড কোনও বিরল রোগ নয়। অস্ত্রোপচারের পর স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু স্নো লেপার্ডের এই ধরনের অস্ত্রোপচার এদেশে আগে কোনও চিড়িয়াখানায় করা হয়নি। দার্জিলিংয়ের চিড়িয়াখানার প্রাণী হাসপাতালে প্রথম এই অস্ত্রোপচার করা হল। মাত্র চারমাস বয়সে শাবকের চোখের অস্ত্রোপচার করা হয়। এত ছোট শাবকের অস্ত্রোপচার করায় একটু ঝুঁকি থাকবে, স্বাভাবিক। কারণ সফল না হলে অন্ধ হয়ে যেতে পারত। অবশ্য এক্ষেত্রে সেরকম পরিস্থিতি হয়নি। অস্ত্রোপচারের পর বৈশাখী এখন পুরোপুরি সুস্থ। প্রাণী চিকিৎসক উৎপল দাস জানান, প্রাণীদের মধ্যে এন্ট্রোপিয়ান আইলিড কুকুর, বিড়ালের বেশি দেখা যায়। এটা জন্মগত ত্রুটি। পাতা ভিতরে থাকায় সারাক্ষণ চোখ জ্বালা করে। চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে। খুবই অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। অস্ত্রোপচার ছাড়া এর কোনও সুরাহা নেই।