অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি : যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন (Ukraine) এখন কার্যত মৃত্যুপুরী। একদিকে রুশ গোলাবর্ষণ, একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, অন্যদিকে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা। খোঁজ নেই খাবার কিংবা জলের। পদে পদে বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জ। এমন পরিস্থিতিতে টানা সাতদিন ধরে মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে জঙ্গল-পাহাড় ডিঙিয়ে পোল্যান্ড সীমান্ত পেরোতে হয় ওঁদের। তারপর ভারতীয় দূতাবাসের সাহায্যে দেশে ফেরা। শেষপর্যন্ত বাড়ি ফিরলেন দার্জিলিংয়ের দুই মেডিক্যাল পড়ুয়া। অনিশ্চিত জীবনকে পিছনে ফেলে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে ফিরে ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানালেন তাঁরা। অন্যদিকে সন্তানরা ঘরে ফেরায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তাঁদের অভিভাবকরা।
অচেনা দেশ, অজানা রাস্তা! চারিদিকে বারুদের গন্ধ আর রুশ হানায় ধ্বংসস্তুপ হয়ে যাওয়া বসতি। এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র মনের জোর সঙ্গে করে দুই পড়ুয়া কেলস্যাং গেয়াৎসো ভুটিয়া আর অলোক মিশ্রা বেরিয়ে পড়েছিলেন পথে। সাতদিনের যাত্রায় গভীর জঙ্গল পার হতে হয় কেলস্যাং আর অলোককে। এমনকী ৪৫ কিলোমিটারের যাত্রাপথে জঙ্গল রাত কাটাতেও হয়। প্রাণ হাতে করে এভাবেই পৌঁছান পোলান্ড সীমান্তে। এরপর অবশ্য যাবতীয় দায়িত্ব নেয় পোল্যান্ডের ভারতীয় দূতাবাস। বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা হয় তাঁদের জন্যে। বৃহস্পতিবার সকালে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে নিজেদের বাড়ি ফেরেন কেলস্যাং ও অলোক।
[আরও পড়ুন: রুশ ফৌজের দখলে ইউরোপের বৃহত্তম পরমাণু কেন্দ্র, IAEA-কে জানাল মস্কো]
দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা দুই পড়ুয়ার চোখেমুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ। ওঁরা জানান, ইউক্রেনে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরেই তাদের দেশ ছাড়তে বলা হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হতেই সমস্ত রকম পরিবহণ বন্ধ হয়ে যায়। সেই কারণেই হাড় কাঁপানো শীতে গভীর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে তাঁদের পৌঁছাতে হয়েছিল পোল্যান্ড সীমান্তে। সেখান থেকে ভারতীয় দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় দেশে ফেরার ব্যবস্থা হয়।
[আরও পড়ুন: আবার যুদ্ধ হবে, থামাতে পারবেন না বাইডেন! ভবিষ্যদ্বাণী ট্রাম্পের]
এদিন বাগডোগরা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে কেলস্যাং গেয়াৎসো ভুটিয়া বলেন, “পোলান্ডের তাপমাত্রা এখন মাইনাস ৫ ডিগ্রিরও নিচে। এই পরিস্থিতিতে লাগেজ সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ৪৫ কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে। এই সময় খাবার কিংবা জল, কিছুই ছিল না সঙ্গে।” দুই পড়ুয়া আরও জানান, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে এখনও দেশের বহু পড়ুয়া আটকে রয়েছে ইউক্রেনে। অলোক মিশ্রা বলেন, “টানা সাতদিন প্রচুর কষ্ট করে পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছাতে পারি। দেশে ফিরে স্বস্তি বোধ করছি। ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।”