সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের ঝিনাইদহের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনারের খুনের তদন্তে উঠে এসেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাঁকে হত্যা করার পর অন্তত ৮০ টুকরো করা হয় দেহ। ওই দেহাংশগুলো খুঁজে পেতে হিমশিম খেতে হয়েছে তদন্তকারীদের। অবশেষে মঙ্গলবার নিউটাউনে আবাসনের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হয়েছে মাংসের টুকরো। তবে ওই মাংস বাংলাদেশের সাংসদের কিনা তা ফরেনসিক তদন্ত করে হবে। এই পরিস্থিতিতে আনোয়ারুলের মেয়ে জানিয়েছেন, কলকাতা পুলিশ ডাকলে ডিএনএ টেস্টের স্যাম্পল দিতে ভারতে যাবেন তিনি।
আনোয়ারুলের খুনের তদন্ত করতে কলকাতায় গিয়েছেন বাংলাদেশের তদন্তকারীরা। মঙ্গলবার সকালেই সাংবাদিক বৈঠক করে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান হারুণ আর রশিদ জানিয়েছিলেন যে ফ্ল্যাটে সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনারকে খুন করা হয়েছে সেখানকার সোয়ারেজ লাইন এবং সেপটিক ট্যাংক খুলে দেখা হবে। সেই মতোই তল্লাশি করে সেখান থেকে প্রায় সাড়ে তিন কেজি ওজনের টুকরো করা মাংস মেলে। এই খবর পৌঁছয় আনোয়ারুলের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের কাছে।
[আরও পড়ুন: রেমালের তাণ্ডবে বাংলাদেশে মৃত বেড়ে ২১, মিলল ৩০ হরিণের দেহ, দুর্গত এলাকায় যাবেন হাসিনা]
দ্রুত বিচার চেয়ে সাংসদকন্যা ডরিন জানান, "ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে বাবার মরদেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু খণ্ডাংশ বাবার কি না তা নিশ্চিত করেনি পুলিশ। এজন্য ডিএনএ টেস্টের স্যাম্পল দিতে কলকাতা পুলিশ ডাকলে সেখানে যাব। আমার ভারতীয় ভিসা হয়েছে। আমার বাবা হত্যার সঠিক বিচার চাই। অপরাধীদের কঠিন শাস্তির আওতায় এনে বিচার করা হোক।" একসময় নানা বেআইনি যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছিল আনোয়ারুলের বিরুদ্ধে। তা সত্ত্বেও কেন তাঁকে ভোটের টিকিট দেয় আওয়ামি লিগ সেনিয়েও মুখ খোলেন ডরিন। তাঁর কথায়, "আমার বাবা জনপ্রিয় মানুষ ছিলেন বলেই প্রধানমন্ত্রী তাকে পাঁচবার মনোনয়ন দেন। বাবার হত্যার বিচারের বিষয়টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিপক্ষরা উঠে পড়ে লেগেছে।" এদিকে ডিএনএ টেস্টের জন্য সাংসদকন্যাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের ডিবি পুলিশ।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, "শুধু মৃতদেহটা ছাড়া সব তথ্য আমরা পেয়েছি। যারা খুন করেছে, ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সব কিছুরই খবর পেয়েছি। এখন দেহটা উদ্ধার করাই বাকি আছে।" মরদেহ না পেলেও আনোয়ারুলের আসন শূন্য ঘোষণা করা বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "এটা স্পিকার জানেন। সংবিধান অনুযায়ী তিনি সিদ্ধান্ত দেবেন। যারা যারা হত্যা করেছে, তারা তো স্বীকার করেছে। সেখানে কী হবে সেটা আইনজ্ঞরাই জানেন। আইন মন্ত্রক এবিষয়ে বলতে পারবে।" আনোয়ারুলের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা ঝিনাইদহে। প্রিয় সাংসদের এমন ভয়াবহ পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না কেউই। অপরাধীদের দ্রুত বিচার চাইছে আনোয়ারুলের পরিবার।