সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রেজিস্ট্রি হয়ে গিয়েছিল আগেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আজকের দিনে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, বন্ধুদের আশীর্বাদ নিয়ে আনন্দানুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নতুন জীবনে প্রবেশ করার কথা। কিন্তু তিরুঅনন্তপুরমের ক্লিফ হাউসে এ কী দেখা গেল! কেরলের কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের (Pinarayi Vijayan) কন্যা রীতিমত সামাজিক রীতি মেনে, মালাবদল করে বিয়ে করলেন। যাঁকে বিয়ে করলেন, তিনি আবার বামপন্থী শিবিরের সর্বভারতীয় স্তরের নেতা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। বিবাহের ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট- সুলভ ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখার গৌরব যেন কোথাও ক্ষুণ্ণ হল কমিউনিস্ট পরিবারের। কমিউনিস্ট স্বামীর হাত ধরে বিবাহিত জীবন শুরুর আগে সামাজিক সংস্কারমুক্ত হতে পারলেন না, দৃশ্যত। বিজয়নকন্যা বীণা এবং DYFI সর্বভারতীয় সভাপতি মহম্মদ রিয়াজের মালাবদলের সেই ছবি ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। যাতে দেখা গিয়েছে, নবদম্পতির মুখে মাস্কও নেই। এ নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপও হচ্ছে বেশ।
দেশজুড়ে করোনা আবহ। যদিও মহামারীর প্রকোপ থেকে কেরল অনেকটাই মুক্ত এবং দেশের মধ্যে কার্যত মডেল দক্ষিণের এই বামপন্থী রাজ্য। তো এরই মধ্যে মেয়ের বিয়ে স্থির করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। পাত্র বাম যুব সংগঠনেরই সর্বভারতীয় সভাপতি মহম্মদ রিয়াজ। আইন মেনে উভয়ের বিয়ে হয়েছিল আগেই। আজ ছিল ঘরোয়া অনুষ্ঠান। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনেই। এই প্রথম এখানে কোনও বিবাহ অনুষ্ঠান হল। করোনা আবহে অত্যন্ত ছিমছাম ব্যবস্থাপনায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মেয়ের বিয়ে। নিয়ম মেনে অতিথি মেরেকেটে ৫০এর বেশি কম বই বেশি নয়। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ক্লিফ হাউসের যে ছবি সামনে এল, তা বোধহয় খুব একটা আশা করেননি বামপন্থীরা।
[আরও পড়ুন: ‘নেপাল ও ভারতের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য, আলোচনাতেই ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে’, বলছেন রাজনাথ]
সরষে হলুদ রঙের দক্ষিণী সিল্কের শাড়ি পরিহিতা বিজয়নকন্যা বীণা, পাত্র রিয়াজের পরনে সাদা শার্ট, ধুতি। গোছা গোছা লাল গোলাপের মালা পাত্র-পাত্রী একে অপরের গলায় পরিয়ে দিলেন। পিছনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজে। রয়েছেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও। করোনাকালে যে কোনও অনুষ্ঠানে একাধিক স্বাস্থ্যবিধি জারি থাকলেও দেখা গেল, বীণা অথবা রিয়াজ – কারও মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক পরেননি মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নও। যদিও উপস্থিত অন্যান্যদের মুখে মাস্ক রয়েছে।
[আরও পড়ুন: ভারত-নেপাল সীমান্তে রহস্যজনকভাবে লোপাট বর্ডার পিলার, চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল SSB]
এই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে সমালোচনা। কমিউনিস্ট বিয়েতে সামাজিক রীতি কেন? এই প্রশ্ন উঠছ। বহু বহু বছর ধরে চলে আসা রীতিনীতির সংস্কারের দিক তুলে ধরে তা বয়কটে উজ্জীবিত করা অন্যতম কমিউনিস্ট আদর্শ। বিশেষত ধর্মীয় আচার পালনকে তাঁরা ‘আফিম প্রভাবিত’ মানসিকতা বলেই মনে করে থাকেন। তাহলে কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রীর নিজের মেয়ের বিয়েতে সেসব প্রথার বশবর্তী হলেন কেন? কমিউনিস্ট যুব নেতাই বা কেন মালাবদল ছাড়া স্ত্রীর হাত ধরতে পারলেন না? কমিউনিস্ট আদর্শের লালন কি তবে কেবলই রাজনৈতিক স্বার্থে বন্দি? ব্যবহারিক প্রয়োগের তাগিদ নেই কোনও? নাকি নিজেদের আদর্শ থেকে আপাতত খানিক সরে এসে অনুশাসনে বাঁধা পড়া সমাজের মাঝেই নিজেদের সঁপে দিয়েছেন কমিউনিস্টরা? কেরলের বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী মেয়ের বিয়ে অনেকগুলো প্রশ্নই তুলে দিল।
The post ‘কমিউনিস্ট’ মুখ্যমন্ত্রীর মেয়ের বিয়েতে মালাবদলের রীতি! কটাক্ষের মুখে পিনারাই বিজয়ন appeared first on Sangbad Pratidin.