বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: বঙ্গ সিপিএমের (CPM) জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে একই আসনে থাকেন অনিল বিশ্বাস। দলের রাজ্য কমিটির সম্পাদক, পলিটব্যুরো সদস্য ছাড়া কোনও সংসদীয় পদে কোনওদিন ছিলেন না। তবে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণ কমিটিতে তাঁর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। স্রেফ সংগঠনকে শক্ত মাটির উপর দাঁড় করিয়ে দিতে তাঁর যে অবদান, তার জোরেই বঙ্গে সিপিএমের চিরকালীন মুখ অনিল বিশ্বাস (Anil Biswas)। বামপন্থী সমর্থকরাই শুধু নন, রাজনীতি নিয়ে বিন্দুমাত্র সচেতন নাগরিকই জানেন সিপিএম আর অনিল বিশ্বাসের সম্পর্কের কথা। তবে রাজনীতি তো সম্ভাবনার শিল্প। সেই স্রোতে আজ ডান-বাম রাজনৈতিক সমীকরণ বদলের হাওয়া প্রবল এই মুহূর্তে। অনিল বিশ্বাসের মেয়ে, অধ্যাপক অজন্তা বিশ্বাস তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’য় লিখেছেন। লেখার বিষয় – বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি। বর্তমান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন বাংলায় যা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তবে ‘গোঁড়া’ সিপিএম অজন্তার এহেন কাণ্ডে খানিক বিচলিত। লেখালেখির ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা’য় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না, প্রথম সারির নেতার এই প্রতিক্রিয়া অন্দরের বৈঠকেই পালটে গেল। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।
২১ জুলাই থেকে তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’ (Jago Bangla) দৈনিক হয়েছে। আপাতত ডিজিটাল মাধ্যমে রোজ প্রকাশিত হচ্ছে পত্রিকাটি। ২৮ জুলাইয়ের সংস্করণে দেখা গেল, ‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি’ বিষয়ে একটি উত্তর সম্পাদকীয় লিখেছেন ড. অজন্তা বিশ্বাস। সম্পর্কে তিনি সিপিএমের অবিসংবাদী নেতা অনিল বিশ্বাসের কন্যা। দুটি কিস্তিতে তা প্রকাশিত হচ্ছে। বুধের পর বৃহস্পতিতে শেষ কিস্তি প্রকাশিত হবে। সেখানে সম্ভবত ইতিহাসের সরণি বেয়ে ধীরে ধীরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) পর্বে পৌঁছবে। শুধু তাই নয়, অজন্তা পেশায় অধ্যাপক এবং বাম সমর্থিত অধ্যাপক সংগঠনের সদস্যও। তাঁর এহেন প্রোফাইল নিয়ে ‘চিরশত্রু’ তৃণমূলের মুখপত্রে উত্তর সম্পাদকীয় লেখা একদিকে রাজনৈতিক মহলে যেমন বিস্ময় উদ্রেগকারী, তেমনই একাধিক প্রশ্নও তুলে দেয়।
[আরও পড়ুন: গর্ভাবস্থায় স্তন ক্যানসারের থাবা, জটিল অস্ত্রোপচারে তরুণীকে নয়া জীবন দিল Medical]
এদিকে, আজ থেকেই শুরু হয়েছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক। তার আগে অজন্তা বিশ্বাসের এই প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য সুজন চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া ছিল, ”সাধারণত লেখালেখির ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতায় আমরা হস্তক্ষেপ করি না। তবে উনি পার্টির সঙ্গে জড়িত। পার্টি লাইন কোথাও ভাঙছেন কি না, তা দেখার বিষয়।” যদিও বৈঠক শুরু হতেই সুজনের এই ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা’ সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া ঠিক ততটা সহজ সরল রইল না। কারণ, বৈঠকে অজন্তা সম্পর্কে রীতিমতো খোঁজখবর শুরু হয়েছে বলে সূত্রের খবর। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ বেরিয়ে আসছে। বাবার মৃত্যুর পর অনিলকন্যা দল থেকে কী কী সুযোগসুবিধা নিয়েছেন, সেসবও আজ আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠছে।
[আরও পড়ুন: উচ্চপদস্থ Police আধিকারিক পরিচয়ে ৪৮ লক্ষ টাকা প্রতারণা, গ্রেপ্তার প্রাক্তন Civic Volunteer]
অনিল কন্যার এই কার্যকলাপ বর্তমান দেশীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে CPI(ML) লিবারেশনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের সমীকরণ সমর্থনেরই ইঙ্গিত? নাকি মতাদর্শে অটুট থেকেও দলীয় লাইনের উপরে উঠে এ এক ইতিহাস সচেতনতার দৃষ্টান্ত? তৃণমূলের মুখপত্রে অজন্তার ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের পদক্ষেপে এই প্রশ্নের দোলাচল উঠছে। তবে শেষপর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কী মূল্যায়ন করেন অনিল-কন্যা, সেদিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে।