দেবাশিস সেন: মাঠে যখন বল করতেন বিপক্ষ ব্যাটাররা ভয়ে কাঁপত, এমনই ছিল দাপট। অবসরের পরেও অবশ্য বিন্দুমাত্র বদল আসেনি সেই মানসিকতায়। এখনও একই রকম, সোজাসাপ্টা। তিনি, কার্টলে অ্যামব্রোজ। একান্ত সাক্ষাৎকারে ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তির সেই দাপুটে মেজাজটাই ধরা পড়ল ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের হলটা কী? বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে পারছে না। ভারতের বিরুদ্ধেও প্রথম টেস্টে অসহায় আত্মসমর্পণ করল। পোর্ট অফ স্পেনেও প্রায় তাই। কতটা হতাশ লাগে এসব দেখে?
অ্যামব্রোজ: প্রচণ্ড হতাশ। সত্যিটা মেনে নেওয়া দরকার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট আগের জায়গায় নেই। সাতের দশক থেকে নয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করেছে। সেই সুনাম এখন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ারে আমরা ব্যর্থ হয়েছি, টেস্টেও তাই। ব্যক্তিগতভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারাটা আমাকে ভীষণ যন্ত্রণা দেয়।
[আরও পড়ুন: ড্র দ্বিতীয় টেস্ট, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় রোহিত ব্রিগেডের]
কেন এই ব্যর্থতা? আপনার কী মনে হয়?
অ্যামব্রোজ:ব্যর্থতার কারণ অনেক। পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাব তো রয়েছেই। তা সত্ত্বেও বলব, আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে পারিনি। গ্রেট প্লেয়ার তৈরি করতে পারিনি। যার মাশুল এখন গুনতে হচ্ছে। এর দায় শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের নয়, আমাদেরও।
আচ্ছা, এই যে সারা বিশ্বে টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের এত বাড়বাড়ন্ত। সেটাও কি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের বড় ক্ষতি করল বলে মনে করেন?
অ্যামব্রোজ: কিছুটা। এটা ঠিক, বেশ কিছু বছর ধরে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের সেরা প্রতিভারা বিশ্বের নানা প্রান্তের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে চলে গিয়েছে। দেশের হয়ে খেলার চেয়ে সেটাকেই বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু এর পিছনে আসল কারণ হল অর্থ। আপনি কাউকে স্বচ্ছল জীবনযাপনে বাধা দিতে পারেন না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে তারা যা অর্থ উপার্জন করে, সেটা দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের বোর্ডের নেই। বাস্তবটা তাই মেনে নেওয়াই ভাল।
ব্রায়ান লারা, জিমি অ্যাডামস তো হাল ধরার চেষ্টা করছেন। আপনার কাছে সাহায্য চাইলে কী করবেন?
অ্যামব্রোজ: আমার সাহায্য করতে আপত্তি নেই। শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুধু কেন, অন্য দেশের ক্রিকেটারদেরও সাহায্য করতে আমি প্রস্তুত। ক্রিকেট থেকে প্রচুর পেয়েছি। এবার কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই।
আচ্ছা, এখনকার ‘ফ্যাব ফোরে’র খেলা আপনার কেমন লাগে? ওদের বিরুদ্ধে বোলিং করতে মন চায়?
অ্যামব্রোজ: ফ্যাব ফোর কেন? ফ্যাব ফাইভ বলুন। বিরাট কোহলি, কেন উইলিয়ামসন, জো রুট, স্টিভ স্মিথের সঙ্গে বাবর আজমকেও রাখা দরকার। আর ওদের বিরুদ্ধে বোলিংয়ের স্বপ্ন? ভুলে যাবেন না, সামনেই ৬০-এ পা দেব। তাই এসব কল্পনাও করি না। তবে প্রত্যেকের ব্যাটিং খুব ভাল লাগে।
বিরাট কোহলি?
অ্যামব্রোজ: অফকোর্স আউটস্ট্যান্ডিং প্লেয়ার। আর প্লিজ, শচীনের সঙ্গে ওর তুলনা করবেন না। ওরা দু’জনেই আলাদা প্রজন্মের দুই গ্রেট। বিরাট কমপ্লিট ক্রিকেটার। আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে ও পছন্দ করে। ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটে বিরাট অসাধারণ। আর ফিটনেস, ওটা বিরাটের আসল জায়গা। সবচেয়ে বড় কথা, ও টিমকে জেতানোর জন্য সবসময় চেষ্টা করে। অহেতুক শচীনের সঙ্গে তুলনা না টেনে বিরাটের ব্যাটিংটা উপভোগ করুন।
আর বোলার? এই প্রজন্মের কাউকে স্পেশাল বলে মনে হয়?
অ্যামব্রোজ: বুমরাকে আমার খুব ভাল লাগে। বিশেষ করে ওর বোলিং স্টাইল। জানি, চোটের কারণে ও অনেকদিন বাইরে। সামি, সিরাজের কথাও বলব। মিচেল স্টার্ক, শাহিন শাহ আফ্রিদিদের বোলিংও ভাল লাগে। আসলে ক্রিকেট এখন তো ব্যাটারদের খেলা। ওদের কথা ভেবেই সবকিছু। তাই সেখানে যখন বোলাররা ভাল পারফরম্যান্স করে, মন ভরে যায়।