স্টাফ রিপোর্টার, নয়াদিল্লি: করোনাকালে (Covid-19) সরকারকে চাপে ফেলতে যে অস্ত্রকে হাতিয়ার করত কংগ্রেস, কালের চক্রে সেই অস্ত্রেই এখন আক্রান্ত হওয়ার মুখে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা দেশের পাঁচ কোটি পরিবারের কুড়ি কোটি নাগরিককে প্রতি মাসে ছ’হাজার টাকা করে অনুদান দিতে ‘ন্যায়’ প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে তেলুগু দেশম পার্টিও পরিবার প্রতি বার্ষিক দু’ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনের আগে জনগণকে নানা রকমের আর্থিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। জনপ্রতিনিধি আইন মোতাবেক যা দুর্নীতিগ্রস্ত আচরণ। এই ধরনের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? তা জানতে চেয়ে নির্বাচন কমিশনকে নোটিস দিল দিল্লি হাই কোর্ট। ২৪ সেপ্টেম্বর হবে মামলার পরবর্তী শুনানি।
[আরও পড়ুন: শেষরক্ষা হল না কলকাতায় এসেও, করোনায় প্রয়াত ত্রিপুরা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক]
নির্বাচনের আগে চুপিসারে নগদ, প্রেশার কুকার, টেলিভিশন থেকে শুরু করে মদের বোতল বা শাড়ি ইত্যাদি বিতরণের অভিযোগ ওঠে বিক্ষিপ্তভাবে। যা ‘নোট ফর ভোট’ নামে পরিচিত। বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তবে গত লোকসভা নির্বাচনের আগে আর বিক্ষিপ্তভাবে নয়। একেবারে ইস্তাহারে উঠে আসে নগদ অনুদানের প্রসঙ্গ। কংগ্রেস (Congress) ঘোষণা করে কেন্দ্রে তাদের সরকার তৈরি হলে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারীদের জন্য চালু হবে ‘ন্যায়’ অর্থাৎ ন্যূনতম আয় যোজনা। তেলুগু দেশম পার্টি ঘোষণা করে জন্মের আগে থেকে মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে দরিদ্রদের আর্থিক নিরাপত্তা দিতে তারা পরিবারপ্রতি বার্ষিক দু’লাখ টাকা করে অনুদান দেবে।
এই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলিকে চ্যালেঞ্জ করেই ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দিল্লি হাই কোর্টে দায়ের হয় এক জনস্বার্থ মামলা। বুধবার সেই মামলার শুনানি হয় দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি জ্যোতি সিংয়ের বেঞ্চে। মামলাকারীদের তরফে আইনজীবী সৌম্য চক্রবর্তী আদালতে বলেন, কোনও শ্রম ছাড়া এভাবে নগদ হস্তান্তর করা জনপ্রতিনিধি আইনের ১২৩ ধারা অনুযায়ী বেআইনি। এর ফলে দেশের কৃষি, শিল্প ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেই সওয়াল করেন তিনি। জবাবে নির্বাচন কমিশনের তরফে আইনজীবী অঞ্জনা গোসাঁই জানান, এই সম্পর্কে কমিশনের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। এই জবাবে আদালত সন্তুষ্ট হয়নি বলেই জানা গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘এনকাউন্টার করা হবে’, মন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পরই তেলেঙ্গানার শিশুধর্ষণে অভিযুক্তের রহস্যমৃত্যু]
সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই সময় বিচারপতি বলেন, শুধুমাত্র নির্দেশিকা জারি করেই কমিশনের কাজ শেষ হয়ে যেতে পারে না। এই ধরনের কাজ রুখতে কড়া ব্যবস্থাও নিতে হয়। এরপরই কমিশন এই প্রতিশ্রুতিগুলির বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা ২৪ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ পরবর্তী শুনানির দিন আদালতে জানানোর নির্দেশ দেয় দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। বিশেষজ্ঞদের একটি মহল মনে করছে এই মামলার রেশ পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পেও। রাজ্যের মহিলাদের মাসিক অনুদান দেওয়ার কথা বলা ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারেও। আরেকটি মহলের বক্তব্য, এই ধরনের বিভিন্ন ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এই প্রথম নয়। যুগের পর যুগ ধরে চলে এসেছে এই প্রথা। দেখার শুধু ২৪ সেপ্টেম্বর কী পর্যবেক্ষণ দেন দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি।