শীতের জরাজীর্ণ রুক্ষতার খোলস ঝরিয়ে নবপত্রের উন্মেষে, বসন্তের উদযাপনের দিন ভারতে বসন্ত পঞ্চমী আর আমাদের এই বাংলায়, আমাদের একান্ত আপন সরস্বতী পুজো। এই সরস্বতী পুজো সবার, কিন্তু আহ্বায়ক ছাত্রছাত্রীরাই। বড়রাও যেন সেই ছোটবেলায় ফিরে যান এই দিনটিতে। এবার আবার সরস্বতী পুজোর দিনই সাধারণতন্ত্র দিবস। অতএব এবার ‘ডবল’ আনন্দ উৎসব। লিখলেন জয়তী চৌধুরী, প্রিন্সিপাল, দিল্লি পাবলিক স্কুল (রুবি পার্ক)।
আমাদের বিদ্যালয়ের সরস্বতী পুজোর থিম বা বিষয়-ভাবনা ত্রিবর্ণ বা তেরঙ্গা। ভারতজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘আজাদি’র অমৃত মহোৎসব, তারই মধ্যে সাধারণতন্ত্র দিবস আর সরস্বতী পুজো একই সূত্রে গাঁথা-এর চেয়ে সুন্দর আর কী-ই বা হতে পারে! জাতীয় পতাকার ত্রিবর্ণকেই ভিত্তি করে যাবতীয় ভাবনা রঞ্জিত। সরস্বতী পুজোর রং বাসন্তী, তার সঙ্গে সাদা, গেরুয়া আর সবুজে মিশে ফুলে, আলপনায়, তুলিতে বর্ণময় এবং ব্যঞ্জনাময় হয়ে উঠবে পুজোগৃহ। আবহে বাজবে যথাযথ যন্ত্রানুষঙ্গ। ভারতের শাশ্বত ঐতিহ্য তার সভ্যতা; সংস্কৃতি এবং উৎসব, তারই মেলবন্ধন। বাগদেবীর আরাধনার মধ্য দিয়েই দেশপ্রেম ফুটিয়ে তোলা হবে। বিবিধের মাঝে যে মহান মিলন তা সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয় উৎসবের আনন্দযজ্ঞে। ছাত্ররাই এই আনন্দধারার মূল স্রোত।
[আরও পড়ুন: শিক্ষকদের মর্জিমাফিক নয়, প্রয়োজনে বদলি হবে দূরের স্কুলেও, কড়া নির্দেশ হাই কোর্টের]
এই পুজো ঘিরে প্রতিবারের মতোই ছাত্রকুলের উৎসাহ-উদ্দীপনার অন্ত নেই। সাধারণতন্ত্র দিবসের পতাকা উত্তোলন এবং সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের পর শুরু হবে পুজো পর্ব। তার আগেই প্রসাদের ফল কাটা, অঞ্জলির ফুল-বেলপাতা গোছানো, পুজো সামগ্রী সাজানো, আলপনা দেওয়া, প্রতিমার সজ্জা-এসব মিলেমিশে ছাত্ররাই করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তত্ত্বাবধানে। তারপর পুরোহিত মহাশয়ের মন্ত্রোচ্চারণ এবং পুষ্পাঞ্জলি। তারপর প্রসাদ গ্রহণ। সম্পূর্ণ পুজো অনুষ্ঠানটি যাপিত হয় নিখুঁত শৃঙ্খলায়। এর কৃতিত্বও ছাত্রদের। বিদ্যালয় ভবনে পুজোর পবিত্র ধূপধুনোর গন্ধের সঙ্গে রক্ষিত হয় পরিচ্ছন্নতাও।
যদিও প্রতিমা আমাদের সাবেক বীণাবাদিনী শ্বেতপদ্মাসনা দেবীমূর্তি কিন্তু পুজোমণ্ডপের সাজে প্রতি বছরই অভিনবত্বের স্পর্শ থাকে। ছাত্র-ছাত্রীরা কেউ আলপনা, কেউ ফুল সাজানো, কেউ অন্যান্য সাজসজ্জা, এ ভাবে বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে সুষ্ঠুভাবে সব সম্পন্ন করে। এবারেও এদের সেই প্ল্যানিং রেডি। চিরাচরিত নিয়মের অন্যথা হবে না। সামনেই পরীক্ষা। পড়াশোনার পাশাপাশি ‘সংবাদ প্রতিদিন’ আয়োজিত ‘সরস্বতীর সেরা স্কুল’ ও ‘সারস্বত সম্মান’ প্রতিযোগিতার প্রস্তুতিতেও কোনও রকম ফাঁকি নেই। ‘শর্ট ভিডিও কনটেস্ট’-এও অংশ নিয়েছে ছাত্ররা। সবকিছু মিলিয়ে গানে, ছন্দে, সাজসজ্জায়, রঙে, মাধুর্যে পরিপূর্ণ এবারের বসন্তের শুভ সূচনা – জয় জয় দেবী ভারতী!