সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দিল্লির যুবক মাধব শরণ হতে পারেন অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা। শুধু মানসিক দৃঢ়তা ও ইচ্ছাশক্তির জোরে যে পাহাড় ডিঙানো সম্ভব, তা বোধহয় তুলে ধরে দিল্লির যুবার লড়াই। সব ঠিকঠাকই চলছিল। ২০২১ সালে মাধ্যমিকে ভালো ফল করেন মাধব। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াও শুরু করেছিলেন। কিন্তু তখন কি আর কেউ জানতেন এই যুবকের জীবনে নেমে আসবে ঘন অন্ধকার। হঠাৎ মস্তিষ্কে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। এক বছরের বেশি সময় ধরে কোমায় থাকেন তিনি। বাধ্য হয়ে অস্ত্রোপচার করতে হয় মাধবের।
সুস্থ হওয়ার পর শুরু হয় আরেক লড়াই। দীর্ঘদিন কথা বলতে পারতেন না। নতুন করে শিখতে হয়েছে ভাষা। বিজ্ঞান ছেড়ে পড়তে হয়েছে কলাবিভাগে। প্রতিকূলতা কাটিয়ে সিবিএসি বোর্ডের উচ্চমাধ্যমিকে ৯৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সকলকে। দশম শ্রেণির পরীক্ষার পর ডাক্তারি পরিভাষায় হাইপার-ডেন ব্রেন হেমারেজের (Hyper Brain Hemorrhage) শিকার হন দিল্লির পুষ্পবিহারের (Pushp Vihar) অ্যামিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র মাধব। মস্তিষ্কের এক-তৃতীয়াংশ অকেজো হয়ে গিয়েছিল তাঁর। মস্তিষ্কের যে অংশগুলো কথা বলা ও বোঝা, অঙ্ক কষা এবং লেখার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলিই মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অচেতন অবস্থাতেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল যুবককে।
[আরও পড়ুন: ব্যবসায়ীর বাড়িতে ভয়াবহ আগুন, বহুতলের একাংশ ভেঙে বাসিন্দাকে উদ্ধারে দমকল]
প্রথমদিকে চিকিৎসকরাও ধন্দে ছিলেন মাধব তাঁর পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝতে পারছে কিনা। অল্প সাড়া পেতেই পরবর্তী এক বছরে তাঁর মস্তিষ্কে একাধিক অস্ত্রোপচার করতে হয়। বিকিরণ চিকিৎসার সাহায্যও নেওয়া হয়। মাথার খুলি থেকে একটি হাড়ের অংশও বার করা হয়।
জীবন সংশয় কেটে যাওয়ার পর শুরু হয় অন্য লড়াই। কারণ ততদিনে নিজের ভাষাই ভুলে গিয়েছেন তিনি। নতুন করে শিখতে হয় হিন্দি (Hindi) ও ইংরেজি (English)। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার চারমাস পরে প্রথমবার হাঁটতে পারেন তিনি। স্কুলে ফেরেন ২০২২-এর জুলাইয়ে। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার ধকল নিতে পারবেন না বুঝে কলাবিভাগে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। শুরু হয় কঠিন পরিশ্রম। সেই হার না মানা জেদ, পরিশ্রম, অধ্যবসায় নিয়ে এল সাফল্য। সিবিএসই বোর্ডের দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৪৬৫ নম্বর পেয়েছেন তিনি। তাঁর এই কীর্তিতে গর্বিত স্কুল। স্কুলের এক শিক্ষক জানিয়েছেন, "সবাই মাধবের সাহসিকতাকে সেলাম জানাচ্ছে।" এই সাফল্য অনেকেই অনুপ্রেরণা জোগাবে মনে করছে মাধবের স্কুল।