অভিরূপ দাস: ডেঙ্গুর মরশুমে পুরসভার চিন্তা রাস্তার দু’ধারের বাগান। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে বাঁশের বেড়া দিয়ে গাছ লাগানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গাছ বসেছে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট, এসএন ব্যানার্জি রোডে। বনসৃজন প্রকল্পের ঘিরে দেওয়া সে বাঁশের বেড়াতে থিকথিক করছে ডেঙ্গুর (Dengue Fever) মশার লার্ভা।
অভিযোগ, অধিকাংশ বাঁশের মাথায় গর্ত। সেখানেই জমছে বৃষ্টির জল। বারবার বলা সত্ত্বেও বনসৃজন প্রকল্পের কর্মীরা তা নিয়মিত পরিষ্কার করছে না। ইতিমধ্যেই শহরের একাধিক বড় পুজোর প্যান্ডেলের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। পুরসভার চিন্তা বাড়িয়েছে সেই সব প্যান্ডেলের বাঁশও। কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস জানিয়েছেন, ভার্টিকালি বা লম্বালম্বি বাঁশ থাকলে উপরের গর্তটায় বৃষ্টির জল জমছে। তাতেই ডিম পাড়ছে এডিস ইজিপ্টাই।
সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভার ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিক জায়গায় পুরসভার তৈরি বাগানের বাঁশে বৃষ্টির জল জমছে। সম্প্রতি সেলিমপুরের এক বাসিন্দা ডেঙ্গুতে আক্রান্তও হন। কাউন্সিলর মৌসুমী দাস জানিয়েছেন, সমস্ত বাঁশের মাথায় এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা মারতে স্প্রে করা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ‘জোটে লাভ নেই, নির্দিষ্ট ইস্যু নিয়ে জনতার কাছে যেতে হবে’, INDIA-র সমালোচনায় পিকে ‘স্যর’ ]
কোথায় কত ডেঙ্গুর মশা জন্মাতে পারে। তার হিসাব রয়েছে পুরসভার হাতে। সেই হিসাবই নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করেছে। পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদের হিসাব অনুযায়ী, সারাদিনে একটা পড়ে থাকা টায়ারে জল জমে প্রায় পাঁচ হাজার এডিস মশা ডিম ফুটে বেরোতে পারে। বাড়ির টেবিলের ফুলদানির জমা জল থেকে প্রতিদিন একশো এডিশ মশা জন্মাতে পারে। আর বাঁশের মাথায় জল জমলে সেখান থেকে বেরোতে পারে সত্তর থেকে আশিটা এডিস ইজিপ্টাই! এই হিসাবেই বাড়ছে আতঙ্ক।
মশা প্রথমে জমা জলে ডিম পাড়ে। সেখান থেকে লার্ভা হয়। লার্ভা থেকে পিউপা হয়। সেখান থেকে পূর্ণবয়স্ক এডিস ইজিপ্টাই। পুরো প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হতে সময় লাগে সাতদিন। খোলা যেকোনও পাত্রে তাই সাতদিনের বেশি জল জমাতে বারণ করছে পুরসভা। মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস জানিয়েছেন, বাঁশের মাথায় যেখানে ফুটো রয়েছে সেখানে বৃষ্টি হওয়ার সাতদিনের মধ্যে স্প্রে করতে হবে।
এদিকে শহরের একাধিক জায়গায় দুর্গোপুজোর (Durga Pujo) প্যান্ডেলের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। শুরু হয়েছে বাঁশ পোঁতা। শেষ শ্রাবণের বৃষ্টিতে সেসব জায়গাগুলোও এখন পুরসভার চিন্তার কারণ। ডেঙ্গুর মশা জন্মের পর চোদ্দোদিন থেকে একুশ দিন বাঁচে। এই একুশ দিনের মধ্যে একটা এডিশ মশা কতজনকে কামড়াতে পারে তার কোনও হিসাব নেই। মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস জানিয়েছেন, স্ত্রী এডিশ ইজিপ্টাই উদরপূর্তির জন্য একাধিক ব্যক্তিকে কামড়াতে পারে।