সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০০৮-২০২৩। দেড় দশক কেটেছে। তবু প্রত্যেক ভারতীয়র বুকে আজও দগদগে ২৬/১১-এর (26/11 Mumbai Attack) ক্ষত। আজমল কাসভ-সহ সাতজনের ঘৃণ্য হামলার শিকার হতে হয়েছিল শতাধিক মানুষকে। এতদিন কেটে গেলেও সুবিচার পাননি নিহত। আজও বিচারের আশায় স্বজনহারাদের পরিজনরা। পাশাপাশি আশার আলোয় দিন গুনছেন আহতরাও। এত বছরেও ন্যায় বলতে শুধুমাত্র আজমল কাসভের ফাঁসি। তার পর গঙ্গা-যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু সুবিচার অধরাই। বরং মুম্বই হামলার সেই ষড়যন্ত্রীদের প্রায় সকলেই আজও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
২৬/১১ মুম্বই হামলার মূল ষড়যন্ত্রীরা কে কোথায়?
তাহাউর রানা: মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী ছিল তাহাউর হুসেন রানা। কানাডার ব্যবসায়ী। পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা ১০ লস্কর-ই-তইবার জেহাদিদের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল সে। ইতিমধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে লস অ্যাঞ্জেলস পুলিশ। রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া চলছে। সব ঠিক থাকলে বছর শেষের আগেই তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দিতে পারে বাইডেন প্রশাসন।
ডেভিড কোলম্যান হেডলি: পাক বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। পাক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্করের অন্যতম এজেন্ট ছিল সে। অভিযোগ, মুম্বইয়ে হামলার আগে ভারতে এসে একাধিক জায়গায় রেইকি করে গিয়েছিল। তার পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতেই মুম্বইয়ে প্রবেশ করেছিল জঙ্গিরা। ২৬/১১-র মুম্বই হামলার সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ যোগ প্রমাণিত হয় মার্কিন আদালতে। সেখানে তাকে ৩৫ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়। যদিও হেডলিকে নিজেদের হেফাজতে পেতে মরিয়া ভারত। কিন্তু বিভিন্ন আইনি জটিলতায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
জাইবুদ্দিন আনসারি ওরফে আবু জুন্দল: আজমল কাসভকে জেরায় উঠে এসেছিল আবু জুন্দলের নাম। ভারতে আসার পর কাসভকে হিন্দি শিখিয়েছিল জুন্দলই। ২০১২ সালে জাইবুদ্দিন আনসারি ওরফে আবু জুন্দলকে গ্রেপ্তার করার কথা আদালতে জানায় পুলিশ। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে তাঁর শুনানি প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে রয়েছে। জাইবুদ্দিন আনসারি দাবি করেছে, সে আবু জুন্দল নয়। জেলের ভিতরে ধরনাও দিয়েছে সে।
[আরও পড়ুন: আজও অক্ষত মুম্বই হামলার ক্ষত! দেড় দশক ধরে চোখের জল ফেলছে মুম্বই]
জাকিউর রহমান লকভি: ২৬/১১ মুম্বই হামলার মূল ষড়যন্ত্রী জাকিউর রহমান লকভি-ই। ২০০৮-এর ডিসেম্বরে লকভিকে ‘ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে রাষ্ট্রসংঘ। সেই সময় পাক সরকার গ্রেপ্তার করলেও বেশিদিন জেলে রাখতে পারেনি। ২০১৫ সালে জামিন পেয়ে যায়। পরে ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তান সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে। তবে সেই গ্রেপ্তারি স্রেফ লোক দেখানো বলে দাবি করেছে ভারতের গোয়েন্দারা। তাঁদের মতে, পাকিস্তানে বহাল তবিয়তে রয়েছে লস্কর-ই-তইবার কমান্ডার লকভি।
হাফিজ সঈদ: মুম্বই হামলার ব্লু প্রিন্ট তৈরি হয়েছিল হাফিজেরই নেতৃত্বে। ১১ হাজার পাতার চার্জশিটে অভিযুক্ত ৩৫ জনের মধ্যে নাম ছিল লস্কর প্রধান হাফিজ সইদেরও। রাষ্ট্রসংঘ ও আমেরিকা, উভয়েই তাকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দিয়েছে। তার মাথার মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ১০ মিলিয়ন ডলার। গত বছর জুনে পাকিস্তানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল হাফিজকে। কিন্তু সেও সেখানে বহাল তবিয়তে রয়েছে বলে দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের।