রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: উপলক্ষ তুলসি চারার মেলা। মকর সংক্রান্তিতে পটাশপুর ও সবংয়ের মধ্যবর্তী এলাকার চেহারা একেবারেই বদলে গিয়েছে। সবং-পটাশপুরে মধ্যে কেলেঘাই নদীবক্ষে শুরু হয় এই মেলা। আগামী সাতদিন ধরে চলবে তুলসি চারার মেলা। ৫২৮ বছর ধরে চলা এই মেলায় ভিড় জমিয়েছেন অগণিত পুণ্যার্থী।
তুলসি চারার মেলা অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার সবচেয়ে প্রাচীন মেলা। পটাশপুরের গোকুলপুর গ্রামে নদীবক্ষে রয়েছে তুলসি মন্দির। এই তুলসি মন্দিরকে কেন্দ্র করেই প্রতি বছর মেলার আয়োজন করা হয়। সেই থেকেই মেলার নাম তুলসি চারার মেলা। মন্দিরের পুরোহিত দীপক রঞ্জন দাস অধিকারীর জানান, “মেদিনীপুরের পটাশপুরের গোকুলপুর গ্রামে বাকসিদ্ধ বৈষ্ণব শ্রী শ্রী গোকুলানন্দ গোস্বামী বৈষ্ণবচার্যরূপের সমাধি মন্দির রয়েছে। গোকুলানন্দ সবংয়ের কোলন্দা গ্রামের নামকরা জমিদার পরমানন্দ ভুঁইঞার ভাণ্ডারী ছিলেন। বেশিরভাগ সময়ই সাধন ভজনে ব্যস্ত থাকতেন। পরমানন্দের ছেলে বিপ্রপ্রসাদ গোকুলানন্দের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। গোকুলানন্দ গোস্বামী পৌষ সংক্রান্তিতে রাত ১২টা নাগাদ নদীর মাঝখানে, তাঁর যোগমঞ্চে সাধনা করতে করতে সমাধিপ্রাপ্ত হন। দেহরক্ষার আগে গোকুলানন্দ গোস্বামী তাঁর শিষ্য বিপ্রপ্রসাদকে ডেকে বলে যান পৌষ সংক্রান্তিতে তুলসিমঞ্চে তিনমুঠো মাটি দিলে সবার মনোস্কামনা পূরণ হবে। সেই থেকেই পৌষ সংক্রান্তির ভোরে পুণ্যস্নান করে গোকুলানন্দ গোস্বামীর তুলসী মঞ্চে কেলেঘাই নদী থেকে তিন মুঠো মাটি তুলে দান করেন। দুই মেদিনীপুরের হাজার হাজার মানুষ তুলসি মঞ্চে মাটি দিয়ে পুজো নিবেদন করেন।”
[আরও পড়ুন: ‘মেলেনি আমন্ত্রণ’, টিকিট কেটে ডুয়ার্স উৎসবে অংশ নিলেন ৪ বিজেপি বিধায়ক]
সম্প্রতি কেলেঘাই নদীর বাঁধের সংস্কার হয়েছে। তার ফলে মেলার আয়তনও বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় ১৩-১৪ একর জায়গা জুড়ে মেলা বসে। অতীতে ১ দিনের জন্য মেলা বসত। বর্তমানে মেলা চলে ৭ দিন। এই মেলার প্রধান বৈশিষ্ট্য তুলোর বিকিকিনি। দীর্ঘদিন ধরে এই মেলায় পসরা সাজিয়ে আসছেন তুলো ব্যবসায়ীরা। নানা ধরনের তুলো কেনাবেচা হয় এই মেলাতে। মেলার এক তুলো দোকানদার অচিন্ত্য বসাক বলেন, “এই মেলায় তুলো কেনার জন্যই প্রচুর দর্শনার্থীর ভিড় জমে। এখানে তুলো খুবই সস্তা।”
এছাড়া এই মেলায় পাওয়া যায় ভাবসংগীত ও লোকসংগীতে ব্যবহৃত বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র। সময়ের সাথে আকারে ও বহরে বেড়েছে তুলসি চারার মেলা। একে একে মেলায় যোগ হয়েছে মাটির সামগ্রী থেকে সবজি, মাছ ও সবং-পটাশপুরের পরিচিত মাদুর এবং বাগমারির শঙ্খ, বিভিন্ন মিষ্টির পসরা।